পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বারবার করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য একটি ইসলামী সংস্থাকে দোষারোপ এবং শাসকদলীয় কর্মকর্তারা ‘মানব বোমা’ এবং ‘করোনা জিহাদ’ সম্পর্কে বক্তব্য রাখার পর সারা দেশ জুড়েই মুসলিম বিরোধী হামলা ছড়িয়ে পড়েছে। দরিদ্রদের খাবার সরবরাহকারী মুসলমান যুবকদের ওপর ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে। অন্যান্য মুসলমানদের মারধর করা হয়েছে, প্রায় গণপিটুনি দেয়া হয়েছে, তাদের এলাকাছাড়া করেছে বা মসজিদে হামলা হয়েছে, যেগুলোকে ভাইরাস ছড়ানোর কেন্দ্রস্থল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাঞ্জাব রাজ্যে শিখ মন্দিরগুলিতে লাউড স্পিকারে মুসলমান দুগ্ধচাষীদের কাছ থেকে দুধ না কিনতে বলা হচ্ছে, কারণ এটি করোনভাইরাসে আক্রান্ত।
ঘৃণ্য বার্তা অনলাইনে ছড়ানো হয়েছে এবং আপাতদৃষ্টিতে ভুয়া ভিডিওগুলোর একটি তরঙ্গ উঠে এসেছে যাতে মুসলমানদের মুখোশ না পরতে, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখতে, ভাইরাস সম্পর্কে মোটেও উদ্বিগ্ন না হতে বলা হয়। ভিডিওর নির্মাতারা চাইছিল যেন মুসলমানরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
বৈশ্বিক মহামারীতে সর্বদা দোষের সন্ধান হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাসকে ‘চীনা ভাইরাস’ হিসাবে আখ্যায়িত করার জন্য এক সময় জোর দিয়েছিলেন। বিশ্বজুড়ে মানুষ তাদের ভয় ও উদ্বেগতাড়িত হয়ে অন্যদের দিকে আঙুল তুলে ধরেছে। হিন্দু-অধ্যুষিত ১শ’ ৩০ কোটি মানুষের ভারতে অন্য কোনও গোষ্ঠী দেশের ২০ কোটি মুসলমান সংখ্যালঘুর চেয়ে বেশি ঘৃণার শিকার হয়নি। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল কাশ্মীরের তাÐব থেকে শুরু করে মুসলমানদের সাথে স্পষ্টভাবে বৈষম্যমূলক আচরণকারী একটি নতুন নাগরিকত্ব আইন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ নীতিতে চালিত ক্রমবর্ধমান সাহসী হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের অধীনে বসবাসরত ভারতীয় মুসলমানদের জন্য এই বিগত বছরটি একের পর এক নিম্ন ধারার ছিল।
এক্ষেত্রে যে বিষয়টি ঘটনাকে খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা হ’ল সরকারের দাবির পিছনে সত্যের একটি উপাদান রয়েছে। একক মুসলিম ধর্মীয় গোষ্ঠী ভারতের ৮ হাজারের বেশি সংখ্যক করোনভাইরাসে আক্রান্তের জন্য দায়ী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। গত সপ্তাহে ভারতীয় কর্মকর্তারা অনুমান করেন যে, দেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি রোগী এ গ্রæপটির সাথে যুক্ত ছিল। তাবলিগ জামায়াত গত মার্চে ভারতে এক বিশাল সমাবেশ করেছিল। মালয়েশিয়া এবং পাকিস্তানেও অনুরূপ বৈঠক থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা বিকাশ স্বরূপ বলেন, ‘সরকার এই জামাতকে ছত্রভঙ্গ করতে বাধ্য হয়েছিল’। তিনি বলেন, মার্চে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশটি ‘নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল’। তবে তিনি ‘একটি নির্দিষ্ট স¤প্রদায়ের সাথে কিছু করার আছে’ বলে সরকারের বার বার দোষারোপ অস্বীকার করেছেন।
তাবলিগ জামায়াত একটি বহুজাতিক মুসলিম ধর্মপ্রচারক আন্দোলন। এর বিশ্ব সদর দফতর অবস্থিত দিল্লির নিজামুদ্দিন পশ্চিমপাড়া জুড়ে একটি উঁচু, সাদা, আধুনিক বিল্ডিংয়ে। এই গ্রæপটি লাখ লাখ সদস্যসহ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় সংস্থা।
ভারত সরকার তাবলিগের সদস্যদের যে কোন স্থান থেকে খুঁজে বের করে কোয়ারান্টিন করার জন্য দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছে। মুখোশপরা পুলিশ অফিসাররা চারদিক থেকে সদর দফতর সিল করেছে; অন্য সকালে, তারা রাইফেলের ট্রিগারে আঙুল রেখে এ অঞ্চলে টহল দেয়।
একটি বাস ডিপো বা বন্দরের মতো জায়গায় এটির অবস্থান। এই প্রতিষ্ঠানটি অর্থনীতির কেন্দ্র ছিল এবং এর চারপাশে রয়েছে মানি চেঞ্জার, অতিথিশালা, ট্র্যাভেল এজেন্সি এবং উপহারের দোকান। এখান থেকে খাবার সরবরাহ করা হত তাবলিগের সদস্যদের মধ্যে।
ভাইরাস এবং বিদ্বেষের নতুন তরঙ্গ সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। ভারতের করোনভাইরাস লকডাউনের আওতায় থাকা কয়েকটি ব্যবসায়ের মধ্যে একটি দুধের স্টল চালানো মোহাম্মদ হায়দার বলেছিলেন, ‘ভয় আমাদের কাছ থেকে সর্বত্রই তাকাচ্ছে’।
তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের মারধর করার জন্য বা আমাদের শাস্তি দেয়ার জন্য জনগণের কেবল একটি ছোট কারণ প্রয়োজন তা হল, ‘করোনার’।
মুসলিম নেতারা ভয় পান। তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ দেখে এবং ফেব্রæয়ারিতে কী ঘটেছিল তা স্মরণ করে, যখন হিন্দু জনতা দিল্লির একটি শ্রমিকশ্রেণির পাড়ায় হামলা চালিয়ে কয়েক ডজনকে হত্যা করেছিল এবং বেশিরভাগ পুলিশ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল বা কখনও কখনও হিন্দু জনগোষ্ঠীকে সহায়তাও করেছিল। এখন অনেক গ্রামে মুসলিম ব্যবসায়ীদের কেবল তাদের বিশ্বাসের কারণে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
ইসলামিক সেন্টার অফ ইন্ডিয়া’র চেয়ারম্যান খালিদ রশিদ বলেন, ‘সরকারের উচিত ছিল না দোষারোপের খেলাটি খেলা’। তিনি বলেন, ‘যদি আপনি আপনার মিডিয়া ব্রিফিংয়ে কারও ধর্মের ভিত্তিতে বিষয়টিকে উপস্থাপন করেন, তাহলে এটি একটি বিরাট বিভাজন সৃষ্টি করে’। তিনি যোগ করেন, ‘করোনাভাইরাস মারা যেতে পারে, তবে সা¤প্রদায়িক বিভেদ ভাইরাস শেষ করা কঠিন হবে’।
হাসপাতালে চিকিৎসায় হিন্দু মুসলিম বিভেদ
ভারতের করোনভাইরাস রোগীদের জন্য একটি হাসপাতালে হিন্দু ও মুসলমানদের আলাদা করা হচ্ছে এমন একটি প্রতিবেদন সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন কংগ্রেসনাল প্যানেল।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালে কোভিড-১৯ ওয়ার্ডগুলো রোগীর ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী আলাদা করে রাথা হচ্ছে।
বুধবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আহমেদাবাদ সিভিল হসপিটালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডাক্তার গুনভান্ট এইচ রাঠোর বলেন, ‘সাধারণত পুরুষ ও নারীর রোগীর জন্য ওয়ার্ড আলাদা করা হয়। কিন্তু আমরা এখানে হিন্দু ও মুসলিমের জন্য আলাদা ওয়ার্ড করেছি। এটা সরকারি নির্দেশ। তাদেরই জিজ্ঞাসা করুন এই বিষয়ে।’ তবে গুজরাট কর্তৃপক্ষ এমন কোন নির্দেশের কথা অস্বীকার করেছে।
গুজরাটে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনার সাম্প্রতিক ইতিহাস রয়েছে, ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদি যখন রাজ্যেটির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন ভারতের আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম রক্তাক্ত ধর্মীয় দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছিল সেখানে। সেই দাঙ্গায় ২ হাজারের মতো মুসলমান নিহত হয়। চলতি বছরের ফেব্রæয়ারিতেও রাজধানী দিল্লিতে মুসলিম বিরোধী সহিংসতায় অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছিল।
আল জাজিরা এই বিষয়ে জানতে রাজ্য সরকারের প্রধান স্বাস্থ্যসচিব জয়ন্তী রবির সঙ্গে যোগাযোগ করে। ফোন ধরে তার ব্যক্তিগত সহকারী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সঞ্জয় সোলাঙ্কির সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলে। কিন্তু সোলাঙ্কি জানান, এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সঠিক ব্যক্তি সুপারিনটেনডেন্ট রাঠোর। অন্যদিকে রাঠোর আল জাজিরার ফোনের উত্তর দেননি।
এই ধরনের কিছু ঘটেনি বলে সংবাদমাধ্যমটিকে জানান গুজরাটের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী নিতিন প্যাটেল। বলেন, ‘রোগীদের যতটা সম্ভব ভালো চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন তা-ই করা হচ্ছে।’ অন্যদিকে রাজ্যটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে পৃথক ওয়ার্ডের খবরকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করে। সেখানে বলা হয়, স্বাস্থ্যগত অবস্থা, রোগের লক্ষণ, বয়স ও চিকিৎসকের পরামর্শ মতোই রোগীদের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রকাশিত খবর ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।
এর আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে রোগীর অভিজ্ঞতার বয়ান দিয়ে জানানো হয়, কীভাবে তাদের ওয়ার্ড বদল করা হয় ও একই ওয়ার্ডে সবাই ছিলেন একই ধর্মের। রোগীর প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের কর্মকর্তা জানান, দুই সম্প্রদায়ের স্বস্তির জন্য এটা করা হচ্ছে। এক চিকিৎসকের বরাত দিয়ে শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র দ্য হিন্দু জানায়, সংখ্যালঘুদের সঙ্গে একই ওয়ার্ডে থাকতে চান না সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সদস্যরা। এই নিয়ে কিছু অভিযোগ আসার পর সাময়িকভাবে আলাদা ওয়ার্ডের সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে আহমেদাবাদ ভিত্তিক সমাজতাত্তিক ঘনশ্যাম শাহ বলেন, এটা নিশ্চিত বর্ণবাদ। আর ঘটনাটি গুজরাটে হওয়ায় তিনি একদম বিস্মিত হননি। পাশাপাশি উল্লেখ করেন, মুসলিমরা ভাইরাস ছড়াচ্ছে এমন প্রপাগান্ডা ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস, ইনডিপেন্ডেন্ট, আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।