Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনায় নতুন আঁতুড় ঘর

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

করোনার বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় বাধ্যতামূলক ঘরে থাকার নির্দেশনার মধ্যে নিত্যপণ্য ক্রয়ের জন্য বাইরে বের হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে সে সময় মুখে মাস্ক এবং একে অন্যের থেকে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এই আদেশ নির্দেশনা মানতে বাধ্য করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। কিন্তু রাজধানীর পাইকারী এবং খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায় দোকানি, ক্রেতা কেউ নিয়ম নামছেন না। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী আড়ত, গুলিস্তানের কাপ্তানবাজার, মিরপুর, হাতিরপুল, ফকিরাপুল, নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারে দেখা যায় মানুষে ঠাঁসা। কাঁচাবাজারগুলোতে উপচেপড়া ভিড়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা, এদের অনেকের মুখে মাস্ক ও হাতে গøাভস নেই। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে অভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার প্রকোপ ঠেকাতে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা রক্ষা অপরিহার্য। রাজধানী ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোতে সেটা না মানায় গোটা রাজধানীর মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। করোনার নতুন আঁতুড় ঘর হয়ে যাচ্ছে রাজধানীর কাঁচাবাজার।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার হিসেবে পরিচিত কারওয়ান বাজারে গতকাল সকালে দেখা যায় ট্রাক থেকে শ্রমিকরা গা ঘেঁষে ঘেঁষে পণ্য নামাচ্ছে। দোকানদারদের মধ্যেও কোনো সচেতনতা নেই। কারওয়ানবাজারের একই এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও সচেতনতা নেই। হুড়োহুড়ি গাদাগাদি করে মানুষ বাজার কছে। যাত্রাবাড়ি আড়তে দেখা গেল অভিন্ন চিত্র। মাছের বাজার, সমজির বাজারে হুড়োহুড়ি করে বাজার করছে ক্রেতারা। বিক্রেতাদের কারো কারো মুখে মাস্ক দেখা গেলেও অধিকাংশ ক্রেতার মুখে মাস্ক নেই।
শুক্রবার হওয়ায় অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যাত্রাবাড়ী পাইকারী বাজারে এসেছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে ক্রেতা-বিক্রেতারা কেনাবেচা করছেন। বাজারের কিছু কিছু স্থানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বাজারে আসা অধিকাংশ মানুষ মুখে মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করছেন। কারো আবার মুখে মাস্ক পরা থাকলেও তা খুলে বিক্রেতাদের সঙ্গে দাম কষাকষি করছেন। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই এসব স্থানে। ঠেলাঠেলি করে তারা প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন।
সারাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সরকারিভাবে চলাফেরায় বাধানিষেধ আরোপ করা হলেও কাঁচাবাজারগেুলোতে জনসমাগম কমছে না। প্রতিদিন নিত্যপণ্য কিনতে শহরের বাজারগুলোতে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে। অনেককে বাচ্চাদের নিয়ে বাজার করতে দেখা যায়।
শুক্রবার শনিরআখড়া বাজারে দেখা গেলে নিজের ৫ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে বাজার করতে এসেছেন মো. আক্তার হোসেন। তার মেয়ের মুখে মাস্ক পরা থাকলেও নিজে কোনো বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাজারে এসেছেন। বাজারের একটি দোকানে তিনি ও তার মেয়েসহ কয়েকজন ক্রেতা ভিড় করে সবজি কেনেন। মো. আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ঘরে সবজি, মাছ-গোশতসহ প্রয়োজনীয় অনেক কিছু শেষ হয়েছে। এ কারণে তার ছোট মেয়েকে নিয়ে বাজারে এসেছেন। আরেকজন ক্রেতা বলেন, সব সময় মুখে মাস্ক পরে বের হতে মনে থাকে না। আবার ইচ্ছেও করে না বলে স্বাভাবিকভাবে বের হয়ে থাকি। বাজারে অনেক মানুষের ভিড়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না বলে ভিড়ের মধ্যে গিয়েই কেনাকাটা করতে হচ্ছে।
মাছের বাজারে আসা এক দম্পতির সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পরিবারের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে বাজারে এসেছেন। সামাজিক দ‚রত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করার চেষ্টা করছি, কিন্তু শুক্রবার অনেক ভিড় থাকায় নিজের নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে ভালো কিছু কেনা যাচ্ছে না। সাধ্যের মধ্যে যা পাচ্ছি বাজার ঘুরে ঘুরে কেনার চেষ্টা করছি।
রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেল, অনেকেই বাজারে এসেছেন। অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই বাজারে এসেছেন। চাল, সবজি, মাছ, মুরগির, মসলাসহ বিভিন্ন দোকানে ভিড় করে কেনাকাটা করছেন। বাজারের ভেতরের যাতায়াতের রাস্তাগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এতে করে দেশে মহামারী আকার ধারণ করা করোনাভাইসারের সংক্রমণ আরও কঠিন আকারে ধারণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অথচ সরকার জরুরি প্রয়োজন বাদে বাইরে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বাইরে বের হলেও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারপরও কাঁচাবাজারগুলোতে উপচেপড়া সমাগম ঠেকানো যাচ্ছে না। রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো যেন মহানগরবাসীর জীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।

 

 



 

Show all comments
  • Md Biplob ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    এটাই বাংলাদেশ লকডাউন? আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাপ করে দাও
    Total Reply(0) Reply
  • CK Barua ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    এই ভাবে তো আরো বেশি করোনা ভাইরাস হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Shamim Ahmed ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    উন্মুক্ত স্থানে বা মাঠে কাঁচা বাজার স্থাপন করা উচিত.
    Total Reply(0) Reply
  • Aabish Aadila Aya ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    আমি বুঝি নাহ, প্রতিদিন বাজারে কেন যেতে হবে!
    Total Reply(0) Reply
  • MK Alam ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    তাহলে মসজিদে নামাযে যেতে নিষেধাজ্ঞা কেন?
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল মান্নান বাবুর্চি ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    চট্রগ্রামের বড় বড় যে সব বাজার আছে এগুলি ছাড়া পাড়া মহল্লায় অনেক ছোট খাট বাজার বসে এখানে সামাজিক দুরত্ব মানা হয় না,,এই ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়া যায় কিনা অনুরোধ,,
    Total Reply(0) Reply
  • মোল্যা মোঃ সোলায়মান ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
    রাজধানী সহ জেলা শহরে এক এক দিনসপ্তাহের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় মেইন রোড গুলোতেই নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কাঁচ বাজার বসার ব্যবস্থা করা হোক ।এবং জনগণকে শুকনো তরকারি যেমন ডাল,আলু যা অনেক দিন ঘরে রেখে খাওয়া যায় ওই ক্রয় করতে উদ্বুদ্ধ করা হোক ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ