পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কায় দেশবাসীকে ভীত না হওয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আপনারা ভয় পাবেন না। ভয় মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। কেউ আতঙ্ক ছড়াবেন না। তিনি আল্লাহর ওপর আস্থা প্রকাশ করে বলেন, ‘বিজয়ী জাতি আমরা। আমরা সম্মিলিতভাবে করোনাভাইরাসজনিত মহামারীকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবো, ইন শা আল্লাহ’। সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন বছরে মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা, মহামারীর এই প্রলয় দ্রুত থেমে যাক’। তিনি সবার ভালো ও সুস্থ থাকা কামনা করে বলেন, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন’। গতকাল জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমাসহ আরো নতুন কিছু প্রণোদনা ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ দেশের সব টেলিভিশন ও বেতারে সরাসরি প্রচার করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস দেশে ভয়াল থাবা বসাতে শুরু করেছে। তাই এবার বাঙালির সর্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষের সকল অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। এখন সকলকে সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। সরকার সব সময় জনগণের পাশে আছে। কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। মিডিয়া কর্মীদের প্রতি অনুরোধ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সঠিক তথ্য তুলে ধরে এই মহামারী মোকাবিলা করতে আমাদের সহায়তা করুন। যে আঁধার চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, তা একদিন কেটে যাবেই। বৈশাখের রুদ্র রূপ আমাদের সাহসী হতে উদ্বুদ্ধ করে।
ঘরে ঘরে পহেলা বৈশাখ পালনের আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালির সর্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষ। প্রতিটি বাঙালি আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে থাকে এই উৎসব। কিন্তু দেশে করোনাভাইরাস ভয়াল থাবা বসাতে শুরু করেছে। তাই জনসমাগম এড়িয়ে টেলিভিশনে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান উদযাপন করবো আমরা। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের মত পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান রেডিও, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সম্প্রচার করা হবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা’ আবৃত্তি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতের সকল জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে আমরা সামনে দৃপ্ত-পায়ে এগিয়ে যাবো; গড়বো আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যত।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে এবং প্রবাসে বাঙালিরা বাংলা নববর্ষ আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করে থাকেন। রাজধানীতে রমনা পার্ক, চারুকলা চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ নগরীর নানা স্থান মানুষের ভিড়ে মুখরিত থাকে এদিন। গ্রামীণ মেলা, হালখাতাসহ নানা অনুষ্ঠানে গোটা দেশ মেতে উঠে। এবার সবাইকে অনুরোধ করবো কাঁচা আম, জাম, পেয়ারা, তরমুজ-সহ নানা মওসুমী ফল সংগ্রহ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে বসেই নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করুন। আপনারা বিনা কারণে ঘরের বাইরে যাবেন না। অযথা কোথাও ভিড় করবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করুন।
অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাব প্রসঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি ঠেকিয়ে টাকা সরবরাহ বৃদ্ধি করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা আমাদের অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা হবে। তবে এমনভাবে বৃদ্ধি করা যেন মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে। এই সঙ্কট কতদিন থাকবে এবং তা আমাদের অর্থনীতিকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবুও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। যা জিডিপি’র ৩.৩ শতাংশ। করোনার কারণে অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে আমরা চারটি মূল কার্যক্রম নির্ধারণ করেছি। যা অবিলম্বে অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট তিন মাসে, স্বল্প-মেয়াদে- আগামী অর্থবছরে এবং মধ্য-মেয়াদে- পরবর্তী তিন অর্থবছরে- এই তিন পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
চারটি কার্যক্রম হচ্ছে: (১) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা: সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকেই’ প্রাধান্য দেয়া হবে। (২) আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন: অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।
(৩) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি: দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে। (৪) মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা: অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ এমনভাবে বৃদ্ধি করা যেন মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।
এছাড়া বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমসমূহ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি করোনাভাইরাসজনিত কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সুরক্ষায় যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে: (ক) স্বল্প-আয়ের মানুষদের বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করার জন্য ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ১ লাখ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মোট মূল্য ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা।
(খ) শহরাঞ্চলে বসবাসরত নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ওএমএস-এর আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিক্রয় কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। আগামী তিন মাসে ৭৪ হাজার মেট্রিক টন চাল এই কার্যক্রমের আওতায় বিতরণ করা হবে। এ জন্য ২৫১ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করতে হবে।
(গ) দিনমজুর, রিকশা বা ভ্যানচালক, মটর শ্রমিক, নির্মাণ শ্র্রমিক, পত্রিকার হকার, হোটেল শ্র্রমিকসহ অন্যান্য পেশার মানুষ যাঁরা দীর্ঘ ছুটি বা আংশিক লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছেন তাঁদের নামের তালিকা ব্যাংক হিসাবসহ দ্রুত তৈরির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই তালিকা প্রণয়ন সম্পন্ন হলে এককালীন নগদ অর্থ সরাসরি তাঁদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হবে। এখাতে ৭৬০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে।
(ঘ) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত ‘বয়স্ক ভাতা’ ও ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা হবে। বাজেটে এর জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ৮১৫ কোটি টাকা।
(ঙ) জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। কেউ গৃহহীন থাকবেন না।
প্রধানমমন্ত্রী আরো কিছু প্রণোদনার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, অতি-ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড-ইডিএফ-এর সুবিধা বাড়ানোর জন্য ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, প্রি-শীপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইনান্স স্কিম- এর আওতায় ৫ হাজার কোটি টাকা এবং রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বিশেষ তহবিল বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা।
চিকিৎকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং মৃত্যু ঝুঁকি উপেক্ষা করে একেবারে সামনের কাতারে থেকে করোনাভাইরাস-আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। এই ক্রান্তিকালে মনোবল হারাবেন না। গোটা দেশবাসী আপনাদের পাশে রয়েছে। যে সব সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যক্ষভাবে করোনাভাইরাস রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন ইতোমধ্যেই তাঁদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বিশেষ সম্মানী দেওয়া হবে। এ জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত অন্যান্য কর্মচারীর জন্য বীমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে আক্রান্ত হলে পদমর্যদা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা বাবদ বরাদ্দ ৭৫০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে । চিতিৎসকদের আস্বস্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, সুরক্ষা সরঞ্জামের কোন ঘাটতি নেই। সাধারণ রোগীরা যাতে কোনভাবেই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকে নজর রাখুন।
এ সময় তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিয়োজিত পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী আনা-নেওয়ার কাজে এবং মৃত ব্যক্তির দাফন ও সৎকারের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীসহ জরুরি সেবা কাজে নিয়োজিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।