Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিঙ্গাপুরে চার লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মী ঝুঁকিতে

ডরমিটরিতে গাদাগাদি করে অবস্থান # সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২০, ৪:১৯ পিএম

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহত থাকায় সিঙ্গাপুরে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীরা। নিবন্ধিত ৪৩টি ডরমিটরিতে বাংলাদেশিসহ বিদেশি অভিবাসী কর্মীরা গাদাগাদি করে থাকেন। এ ধরনের জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব। এ কারণে সেসব জায়গায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও অত্যন্ত বেশি। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি কর্মী চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। সিঙ্গাপুর সরকার দেশটির ডরমিটরিতে বসবাসকারী অভিবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬০ লাখ জনসংখ্যার ছোট্ট নগররাষ্ট্রটিতে শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশই অভিবাসী। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ এশীয় দেশগুলোর কর্মীরা নিবন্ধিত ৪৩টি ডরমিটরিতে বসবাস করেন। সেখানে একেকটি রুমে গাদাগাদি করে থাকেন প্রায় ২০ অভিবাসী কর্মী। তাদের সবাই একই বাথরুম ও রান্নাঘর ব্যবহার করেন।
দেশটির নিযোগকর্তাদের মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অভিবাসী কর্মীদের বেসিক বেতন পরিশোধ করার নির্দেশনা জারি করেছে। সরকার অভিবাসী কর্মীদের প্রতিদিন দু’বেলা খাবার সরবরাহ করতে হিমসিম খাচ্ছে। গত দু’দিন যাবত সরকার প্রত্যেক ডরমিটরির প্রতি ফ্লোরে রান্নাবান্না করার জন্য দু’ঘন্টা করে সময় দিচ্ছে। ডরমিটরিগুলোতে পরিচ্ছ্বন্ন কর্মী নিয়োগ এবং কেউ অসুস্থ্যবোধ করলে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গতকাল শনিবার সিঙ্গাপুরের পঙ্গলস্থ পিপিটি লজ ডরমিটরি থেকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের প্রবাসী কর্মী এসব তথ্য জানায়। উল্লেখিত ডরমিটরিতে প্রায় ১২ হাজার অভিবাসী কর্মী বসবাস করে।
ইতোমধ্যেই সিঙ্গাপুরের নয়টি বেসরকারি ডরমিটরিতে ছড়িয়ে পড়েছে নভেল করোনাভাইরাস। এ জন্য কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেয়াকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটিতে করোনা আক্রান্তদের প্রায় এক-চতুর্থাংশই এসব ডরমিটরির সঙ্গে সম্পর্কিত।
করোনাভাইরাস মাকাবিলায় শুরুর দিকে সব দেশের কাছে রীতিমতো আদর্শ হয়ে উঠেছিল সিঙ্গাপুর। চমৎকার ব্যবস্থাপনায় মহামারীর প্রথম ধাক্কা বেশ সফলভাবেই প্রতিরোধ করেছে তারা। কিন্ত অতিসম্প্রতি দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, সম্প্রতি একটি সেনাঘাঁটিতে কিছু অভিবাসী কর্মীকে ডরমিটরি থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। তাদের একই বাসে খুব কাছাকাছি বসিয়ে নেয়া হয়েছিল এবং নামার সময়ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেনি কেউই। সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজেই একটি ভিডিওতে একদল কর্মীকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
দেশটির দু’টি সেনাঘাঁটিতে অন্তত ১ হাজার ৩০০ কর্মীকে পৃথকভাবে রাখা হয়েছে। আগামী ৪ মে পর্যন্ত তাদের সেখানেই বিশেষ নজরদারিতে থাকতে হবে। বাকি কর্মীদেরও বিভিন্ন খালি স্থাপনা, প্রদর্শনী কেন্দ্রসহ নানা জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, সিঙ্গাপুরে এ পর্যন্ত ২ হাজার ১০৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে সাতজন। গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন ২৮৭ জন। যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। এছাড়া শুক্রবারও ১৯৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে অন্তত ২৮০ জন ডরমিটরির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল বলে জানা গেছে।
গত সপ্তাহে করোনাভাইরাস বিস্তার মোকাবিলায় চার সপ্তাহের জন্য অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ করেছে সিঙ্গাপুর সরকার।আগামী ৪ মে পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব স্কুল, অনাবশ্যক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাছাড়া পাঁচটি ডরমিটরিতে কোয়ারেন্টিনে থাকা ৫০ হাজার কর্মীও বড় ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে, অভিবাসী শ্রমিকদের সহায়তাকারী সংগঠন ট্রানজিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ডরমিটরির রুমগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ