পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চলতি এপ্রিল মাসেই দেশে করোনা ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারে। একাধিক গবেষক এপ্রিলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সরকারি সেফটিনেটের বাইরে থাকা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এ বিষয়ে তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৫টি জেলার স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি এবং জনপ্রতিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দুঃসময় আসছে। এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে হানা দিতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তাহলে ক্ষতি কম হবে। করোনার লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্র সংশ্লিষ্টদের খবর দিতে হবে। সবাইকে মানবিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। বলেন, মানুষের জন্য মানুষ। মানবিকতা নিয়ে এগোতে হবে। জাতির পিতার ডাকে একাত্তরে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। ঐক্যের মূল্য আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জানুয়ারি থেকে করোনা নিয়ে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। সংক্রমণ আস্তে আস্তে বাড়ছে। সরকারের ব্যবস্থার কারণে অন্য দেশের মতো বাড়েনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যবীমার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, সশস্ত্র বাহিনীর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি বিশেষ ইনসিওরেন্সের ব্যবস্থা করে দেব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদমর্যাদা অনুযায়ী ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার হবে এই ইনসিওরেন্স। পাশাপাশি কর্তব্য পালনকালে কেউ কোভিট-১৯ আক্রান্ত হলে তার সার্বিক চিকিৎসা সরকার নিশ্চিত করবে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেউ মৃত্যুবরণ করলে এই ইনসিওরেন্সটি ৫ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। এজন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে তার কথা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনার বিরুদ্ধে আমরা যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি, সেই যুদ্ধের সম্মুখভাগে থেকেই আপনারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই এটি আপনাদের পুরস্কার।
দিনমজুর ও মধ্যবিত্তদের তালিকা করার নির্দেশ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া দিনমজুর ও মধ্যবিত্তদের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সংসদ সদস্য, মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বার ও প্রশাসনকে সতর্কতার সাথে তালিকা করার নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এর বাইরে যারা খেটে খেত, এই করোনার কারণে তাদের কাজ নেই। আবার অনেকে আছেন মধ্যবিত্ত। তারা অনেকে হাত পাতবে না, সাহায্য চাইতে আসবে না, মুখ বুঝে কষ্ট সহ্য করবে। এই শ্রেণির লোকের সঠিক তালিকা করতে হবে। কেউ যেন বাদ না যায়। সত্যিই যাদের অভাব রয়েছে তাদের তালিকা যেন হয়, তাদের কাছে যেন খাবারটা পৌঁছায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি খাদ্য মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কেও কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তালিকা করে রেশন কার্ড করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। রেশন কার্ড থাকলে সুবিধা হবে। অনেকে ছোটখাটো পেশাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তারা যেন না খেয়ে না থাকেন। তাদের তালিকা করে তাদের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে।
চলতি মাসেই দেশে করোনা ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারে
চলতি মাসেই দেশে করোনা ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে এই ভাইরাসটা কিভাবে প্রসারিত হচ্ছে এটা অনেকটা অংকের মতো। অন্যান্য দেশ থেকে আমরা যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি তাতে মনে হচ্ছে আমাদের দেশেও এই ধাক্কাটা এপ্রিল মাসে আরও ব্যাপকভাবে আসবে। এ রকমই একটা আলামত পাওয়া যাচ্ছে। এ রকম কিছু প্রতিবেদন আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিছু প্রেডিকশন দেখতে পাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি এপ্রিল মাসটা আমাদের জন্য খুবই একটা দুঃসময়ের মাস। সব জায়গা থেকে সে খবর পাচ্ছি। আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে হবে। আমাদের এমনভাবে চলতে হবে যেন এর প্রভাবে আমাদের দেশের মানুষের ক্ষতি কম হয়। কারো করোনার লক্ষণ দেখা দিলে না লুকিয়ে চিকিৎসা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারো মধ্যে যদি এতটুকু করোনাভাইরাসের অসুস্থতা দেখা দেয় তিনি সঙ্গে সঙ্গে খবর দেবেন। চিকিৎসার ব্যবস্থা যথাযথ আছে। আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করে রেখেছি। যারা চিকিৎসা সেবা দেবেন তাদের জন্য পিপিইসহ সবধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ লুকাতে যাবেন না। কারণ আপনি একজন লুকাবেন, আরও ১০ জনকে সংক্রমিত করবেন। কেউ লুকাবেন না। এটা কোনো লজ্জার বিষয় না।
যারা পালিয়েছেন ভবিষ্যতে চিকিৎসক থাকবেন কি না দেখবো
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সঙ্কটে যারা দায়িত্বপালন না করে পালিয়েছেন ভবিষ্যতে তারা চিকিৎসক থাকবেন কি না দেখবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই সময়ে দায়িত্বপালন করছেন না তারা ভবিষ্যতে ডাক্তারি করতে পারবেন কি না সেটাও দেখা হবে। এসময় চিকিৎসকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছে, চিকিৎসা পায়নি এটা দুঃখজনক। চিকিৎসকরা কেন চিকিৎসা দেবে না, এটা খুব দুঃখজনক। শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী প্রলয় সৃষ্টি করেছে। এটা এমনভাবে বিস্তার লাভ করছে যে এই ভাইরাসটি মহাবিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। এটা একটা অঙ্কের মতো বাড়ে। এটা দেখে ভয় পেলে চলবে না। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। এটা শুধু আমাদের দেশে নয় সারা বিশ্বেই ঝড় বয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে হলে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা যে সতর্কবাণী দিয়েছি এই সতর্কতা মেনে চলবেন। তাহলে অনেক জীবন রক্ষা পাবে।
ত্রাণ নিয়ে নয়-ছয় করলে আমি তাকে ছাড়বো না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের দুর্ভোগের সময় ত্রাণ নিয়ে কেউ নয়-ছয় করবেন না। তাহলে কিন্তু রক্ষা পাবেন না। নয়-ছয় করলে আপনাকে ধরা পড়তেই হবে। টাকা-পয়সা কিন্তু লুকানো যায় না। দুঃসময়ে কেউ দুর্নীতি করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, তাকে কিন্তু আমি ছাড়বো না।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এপ্রিলে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। সামনে শবে বরাত। মসজিদে না গিয়ে সবাইকে ঘরে বসে ইবাদত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে হবে। আল্লাহ অন্তত বাংলাদেশটা যেন রক্ষা করেন।
গতকাল মঙ্গলবার গণভবন থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রশাসনের কমর্কতা ও জন প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব চট্টগ্রামের কৃতিসন্তান ড. আহমেদ কায়কাউস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য দেশ থেকে আমরা যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি, তাতে আমাদের দেশেও এপ্রিল মাসে বড় একটি ধাক্কা আসতে পারে। এরকমই আলামত পাওয়া যাচ্ছে। এপ্রিল মাসটি নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। কাজেই আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলার কর্মকর্তাদের কাছ থেকে করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনভাবেই সংক্রমণ বাড়তে দেওয়া যাবে না। চট্টগ্রামে অনেক প্রবাসী আছেন তারা যাতে এখন দেশে না আসেন। যারা এসেছেন তারাও যাতে কোয়ারেন্টাইনে থাকেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সীমান্ত দিয়ে (ভারত থেকে ) কেউ যাতে আসতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
চট্টগ্রামে দ্রুত সময়ে করোনা সনাক্তকরণ টেস্ট চালু করায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সংক্রমণ ঠেকাতে নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, আমরা সকলে সমন্বিত কার্যক্রম জোরদার করে দুর্যোগ মোকাবিলা করছি।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে এবং অসহায় মানুষের কাছে সরকারি খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।