পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের দায়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২০০ সেনা সদস্যর নামের তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে সেগুনবাগিচায় স্বাধীনতা হলে সংগঠনটির পক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যদের নামের তালিকা প্রকাশ করে সংগঠনের আহ্বায়ক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এ সময় বলেন, আমাদের কাছে আরও কিছু তথ্য-উপাত্ত আছে। সেগুলো আমি পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করব। আজকে যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে চিহ্নিত এই যুদ্ধাপরাধীদের নাম পদবি ও ব্যক্তিগত পরিচিতি নম্বরসহ তালিকাটি প্রকাশ করা হলো।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাজাহান খান আরও বলেন, আমাদের দাবিসমূহ জাতীয় সংসদে উত্থাপনের জন্য স্পিকারের নিকট একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করা হবে। বুধবার (আজ) বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে কয়েক হাজার মানুষের এক বিশাল মিছিল সহকারে আমরা সংসদ অভিমুখে যাত্রা করব। ওই কর্মসূচিতে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ঘোষিত তালিকায় ৬৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধে নীল নকশা প্রণয়ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতৃত্বদানের অভিযোগে। জেনেভা কনভেনশনসহ আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতি লঙ্ঘন করে সরাসরি গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে ১১৮ জনের বিরুদ্ধে। আর ব্যাপক হারে গণহত্যায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ১৪ জনকে। যাদের মধ্যে আছেন পাকিস্তান নৌবাহিনীর ৩জন ও বিমানবাহিনীর ৩ জন সদস্য রয়েছেন।
সরকারের নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাই না। আমাদের কাজ হচ্ছে পাকিস্তানী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণের জাগরণ সৃষ্টি করা। এ বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করা।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তার বিচারের দাবি ও তাদের প্রতীকী বিচারের যে কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে তা পর্যায়ক্রমে সফলতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
নৌমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে আজ আমরা সেই ’৭১‘র হানাদার নরপশু পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী সেনা কর্মকর্তাদের তালিকা আপনাদের মাধ্যমে জনগণের সামনে প্রকাশ করছি। আমরা ইতোমধ্যে অপরাধীদের তালিকা সংগ্রহ ও তৈরি করতে গিয়ে পূর্বঘোষিত ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে পাকিস্তান বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর আরও ৫ জন কর্মকর্তার সন্ধান পেয়েছি। এর ফলে ১৯৭১ সালে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তান সেনা সদস্যদের সংখ্যা হলো ২০০ জন।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ উল্লেখিত পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী সেনাদের বিচারের প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানাই, সেই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক গঠিত তথ্য সংগ্রহ কমিটিকে আমাদের পক্ষ থেকে সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
শাহজাহান খান বলেন, আমাদের ঘোষিত দাবির প্রেক্ষিতে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম জামায়াতে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। জামায়াতে ইসলামকে সংগঠন হিসেবে বিচার করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা ও তাদের সপরিবারে নাগরিকত্ব বাতিল করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ অ্যাক্ট ১৯৭৩ সংশোধনের সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, আমাদের আরেকটি সুনির্দিষ্ট দাবি- মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, নির্যাতন ও গণআন্দোলনের অবমাননা বা অস্বীকার করে, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব ও শহীদদের অপমান করে বক্তব্য প্রদানের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের ‘জেনোসাইড ডিনায়াল ল’র আদলে আইন প্রণয়ন করা। এই আইন প্রণয়নের ঘোষণা ইতিমধ্যে আইনমন্ত্রী দিয়েছেন। আমরা এই পদক্ষেপকে আমাদের আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় বলে মনে করছি।
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন ঘোষিত চিহ্নিত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলেন, লে. জে. আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী, ব্যক্তিগত পরিচিতি নং পিএ-৪৭৭ ইস্ট কমান্ড রেজিমেন্ট, ১৬ ডিভিশনের মেজর জেনারেল নজর হুসাইন শাহ, পিএ-১১৭০, ৯ ডিভিশনের পিএ-৪৪০৪ পরিচিতি নম্বরধারী মেজর জেনারেল মোহাম্মদ হুসাইন আনসারী, পিএ-৮৮২ পরিচিতি নম্বরধারী মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ ডিজিইপিসিএএফ, ১৪ ডিভিশনের পিএ-১৭৩৪ মেজর জেনারেল কাজী মাজিদ খান, সিভিল এফেয়ার্স এন্ড এডভাইজার টু গভর্নর ইস্ট পাকিস্তান পিএ-১৩৬৪ মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী, ৯৩ বিডিই‘র পিএ-১৬৭৪ ব্রিগেডিয়ার আব্দুল কাদির খান, এইচকিউ এসআইজি পিএ-২২৩৫ ব্রিগেডিয়ার আরিফ রাজা, ৭ বিডিই পিএ-১১০৯ ব্রিগেডিয়ার আত্তা মুহাম্মদ খান মালিক, পিএ-১৮৯৭ ব্রিগেডিয়ার বাসির আহমেদ সিএএফ, ব্রিগেডিয়ার ফাহিম আহমেদ খান পিএ-১০০০৮৮ এইচকিউ ইসি, ৩১৩ বিডিই ব্রিগেডিয়ার ইফতিখার আহমেদ রানা পিএ-১৭৩৮, ৫৭ এইচকিউ বিডিই ব্রিগেডিয়ার মানজুর আহমেদ পিএ-৩৪১৪, ১১৭ বিডিই ব্রিগেডিয়ার মানজুর হুসাইন আরিফ পিএ-৩৫৪৭, ৩৯ ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার মিয়ান মানসুর মুহাম্মদ পিএ-২১১১, ৯১ বিডিই ব্রিগেডিয়ার তাসকিন উদ্দিন পিএ-১১৪৮, ৩৪ এইচকিউ বিডিই ব্রিগেডিয়ার মীর আব্দুল নাঈম পিএ-২৭২৯ ও ৫৩ বিডিই ব্রিগেডিয়ার মো. আসলাম পিএ-১৯৯৯ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ইসমত কাদির গামা, আলাউদ্দিন মিয়া, সদস্য সচিব মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী, কামাল পাশা চৌধুরী, কামরুল আলম সবুজ, সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক মিয়া, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, এম ফরিদুজ্জামান খান, মোখলেসুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এমদাদ হোসেন, পরিবহন শ্রমিক নেতা ওসমান গণি, চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াৎ, শিক্ষক নেতা আব্দুল মান্নান চৌধুরী প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।