পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে পোশাক পণ্য রফতানি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। দেশে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির আগেই ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে পণ্যের একাধিক চালান পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু বর্তমানে লকডাউন পরিস্থিতির কারণে ওই সব দেশের বাজার এখন পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। ফলে বন্দরেই পড়ে রয়েছে পোশাক পণ্যের রফতানি চালান।
গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগ পর্যন্ত দেশের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর রফতানি চালান কম-বেশি অব্যাহত ছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর বন্দরে এখন সেসব পণ্যের চালান স্তূপ আকারে জমতে শুরু করেছে। রফতানি গন্তব্যে পৌঁছার অপেক্ষায় রয়েছে আরো বেশকিছু পণ্য। সমুদ্রপথে পাঠানো ওই সব পণ্যও যুক্ত হতে যাচ্ছে এ স্তূপে।
ইউরোপ ও আমেরিকা এই দুই মহাদেশই বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের প্রধান গন্তব্য। এর মধ্যে শুধু ইউরোপেই যায় বাংলাদেশের রফতানীকৃত পণ্যের ৫০ শতাংশের বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে ন্যূনতম ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। সে হিসাবে গত জানুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কম-বেশি রফতানি অব্যাহত রেখেছিলেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। এসব পণ্যই ইউরোপ-আমেরিকার বন্দরে স্তূপ হতে শুরু করেছে। পথে রয়েছে আরো অনেক পণ্য। স্তূপীকৃত এসব পণ্যের মূল্য কমপক্ষে দুই বিলিয়ন ডলার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরেও অনেক পণ্য স্তূপ হচ্ছে এখন। ঠিক একই ঘটনা ঘটছে ইউরোপ-আমেরিকার বন্দরগুলোয় বাংলাদেশের রফতানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে। শুধু পোশাকই নয়, বাংলাদেশের রফতানীকৃত সব ধরনের পণ্যই জমা হচ্ছে। কারণ ইউরোপ-আমেরিকা অনেক আগে থেকেই লকডাউন ছিল।
এদিকে পোশাক পণ্যের স্থানীয় বায়িং হাউজগুলোর অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে রফতানীকৃত পণ্য লকডাউনের কারণে ক্রেতারা গ্রহণ করতে পারছে না। আবার বন্দরে আটকে থাকার কারণে প্রদেয় ক্ষতিপূরণ দিতেও অস্বীকৃতি জানাচ্ছে তারা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এ অভিযোগ তুলে আসন্ন বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ)।
গত ২৯ মার্চ পাঠানো চিঠিতে বিজিবিএ বলেছে, এ বৈশ্বিক দুর্যোগে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি খাত শুরু থেকেই ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকাসহ প্রায় সব দেশেই মহামারীর কারণে লকডাউন কমবেশি কার্যকর রয়েছে। ফলে অকার্যকর হয়ে পড়েছে বন্দরগুলোর রফতানি পণ্য স্থানান্তর, কাস্টমস ও অন্যান্য পরিসেবা।
এর আগে বাংলাদেশ থেকে যেসব তৈরি পোশাক আমেরিকা-ইউরোপের বন্দরে ভিড়েছে বা নিকটবর্তী সময়ে ভিড়বে, সেগুলো তৈরি পোশাক ক্রেতারা গ্রহণ করবে কিনা, এ বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। এ তথ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বরাবর দেয়া চিঠিতে বিজিবিএ বলেছে, বর্তমান বা অদূর ভবিষ্যতে তৈরি পোশাকের ব্যবসা কীভাবে অব্যাহত রাখা যায়, সে কর্মপন্থা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এজন্য সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কাস্টমস বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আন্তঃবিভাগীয় তৈরি পোশাক সেল গঠন করা জরুরি।
এ প্রসঙ্গে বিজিবিএ সভাপতি কেআই হোসেন বলেন, আমি ধারণা করছি, যেসব পণ্য পথে রয়েছে কিংবা বন্দরে পড়ে রয়েছে এমন পণ্যের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এমন ঘটনাও ঘটছে, পণ্য পৌঁছে গেছে। কিন্তু ক্রেতা বলছে, এ মুহূর্তে পণ্য গ্রহণ করতে পারব না। যখন লকডাউন ওপেন হবে তখন পণ্য নেব। কিন্তু এখন পোর্টে ড্যামারেজ কে দেবে, তার দায়িত্ব ক্রেতারা নিতে চাইছে না।
কেআই হোসেন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক বিরোধ আসন্ন, যা মোকাবেলায় পণ্যের দাম নিয়ে অনেক দরকষাকষি হবে। সেখানে নিজেদের ন্যায্য প্রাপ্য আদায় করে নিতে হবে। একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করার দরকার, যেখানে সবার সমন্বয় করা হবে। ক্রেতা দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় উচ্চ পর্যায়ের ওই কমিটির বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।