পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারের ব্যর্থতা, সমন্বয়হীনতা ও প্রস্তুতির অভাব দেশকে বড় বিপদে ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, মহাবিপদ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি নেই, সমন্বয় নেই, আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণের পর্যাপ্ত উপকরণ ও ব্যবস্থাপনা দেশে নেই; নেই চিকিৎসকদের রক্ষার ব্যবস্থা, নেই যথেষ্ট মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ভেন্টিলেটর! পরীক্ষার ব্যবস্থা ছাড়া সরকার আক্রান্ত সংখ্যার যে তথ্য দিচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে টানা দুইদিন বলা হচ্ছে: “দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত নেই”। অথচ পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনসহ মিডিয়ায় প্রতিদিন সর্দি, জ্বর, কাশিতে মারা যাওয়ার খবর দিচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে বর্তমান সরকারের পলিসি জনগণের কাছে একদম পরিস্কার। নো কিট, নো করোনা। নো টেষ্ট, নো করোনা। নো পেসেন্ট, নো করোনা।
সোমবার (৩০ মার্চ) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে পলিসি করে ইরান ও ইতালী সরকার তাদের দেশের সর্বনাশ করেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে গোটা বিশ্ব থেকে। অথচ আমরাও সেই লুকানোর পলিসি দিয়েই সবকিছু ম্যানেজ করতে চলেছি! উল্টা প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সরকারের এই লুকানো পলিসি যাতে কেউ প্রকাশ না করতে পারে তার জন্য নানা রকমের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই লুকানোর পলিসির নাম দিয়েছে গুজব।
তিনি বলেন, জাতির মহাবিপদের মুহুর্তে দুর্যোগ মোকাবিলার কোনো সমন্বিত উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো বাস্তবতা অস্বীকার করে, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে সরকারের মিথ্যা সাফল্যের বন্দনায় মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের ব্যস্ততা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য জনগণকে গভীরভাবে চিন্তিত, ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে। বলা হচ্ছে গত দুই দিন দেশে করোনা রোগীর নেই অন্যদিকে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ২৪ ঘন্টায় পাঁচজনের মৃত্যুর সংবাদ ছাপা হয়েছে আজকের খবরের কাগজে। এর মধ্যে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে একজন নারীসহ মারা গেছেন দুইজন। ঠাকুরগাঁওয়ের এক অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে পাঁচ হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা পাননি অসহায় পিতা। সরকারী ব্যবস্থাপনায় খিলগাঁও তালতলার গোরস্থানে গোপনে লাশের জানাজা-দাফন করা হচ্ছে। যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বাড়ি লকডাউন করা হচ্ছে। করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ধর্ণা দিয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। কি ভীতিকর পরিস্থিতি! ইলেকট্রনিকস, প্রিন্ট মিডিয়ার খবরের সাথেও সরকারের ব্রিফিংয়ের আকাশ পাতাল ব্যবধান।
রিজভী বলেন, দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে দেশে শুরু হয়েছে ভাইরাসটির সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন)। এ অবস্থাকে সরকার স্বল্পপরিসরে সামাজিক সংক্রমণ বলে উল্লেখ করেছে। এখন পর্যন্ত সংক্রমিত রোগীদের সংস্পর্শে আসা সবাইকে চিহ্নিত করে পরীক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এছাড়া বিদেশ থেকে আসা সবার পরীক্ষাও হয়নি। এই অচিহ্নিত লোকগুলোই ভাইরাসটি সমাজে জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে দেয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পথে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৩ জন দেশে প্রবেশ করেছেন। শেষ দুই সপ্তাহে এসেছেন পৌনে দুই লাখ মানুষ। এ ছাড়া এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআরের হট নম্বরগুলোয় সহায়তা চেয়ে ফোনকল এসেছে ৮ লাখ ২ হাজার ৫৮০ জনের। এ পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র এক হাজার ৭৬ জনের। বাকি লোকদের ভেতর কতজন আক্রান্ত তা কেউ বলতে পারছে না। শনাক্তের বাইরে থাকা লোকগুলো সমাজে মেলামেশা করছেন। নিজের অজান্তেই ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সরকারের ভূমিকা এবং জনগণের জীবনযাপন প্রক্রিয়ায় কয়েকদিনের মধ্যেই এটি চতুর্থ স্তর বা মহামারীতে পরিণত হতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যত দ্রুত সম্ভব শনাক্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা (কন্ট্রাক ট্রেসিং) সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি পালিয়ে না থেকে জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, দেশে এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন। সুস্থ হয়েছেন ১৫ জন এবং বর্তমানে চিকিৎসাধীন ২৮ জন। প্রতিদিন হাজার হাজার কল পাচ্ছে আইইডিসিআর। যার প্রত্যেকটি কলই করোনা সক্রান্ত বলে জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক। এদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। আইইডিসিআর করোনা পরীক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্বই দিচ্ছে না। এই পর্যাপ্ত পরীক্ষা করার সুযোগ না থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে।
তিনি বলেণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বারবার বলে আসছে, করোনা আক্রান্তদের শনাক্ত করতে যত বেশি সম্ভব পরীক্ষা করতে হবে, যত বেশি জানা যাবে আক্রান্তের সংখ্যা, ততো তাড়াতাড়ি তাদের আইসোলেশনে রাখা যাবে। তাতে কমবে সংক্রমণের মাত্রা। দ্রুত পরীক্ষা করার বন্দোবস্ত থাকায় সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমণ তেমন ব্যাপক আকার নিতে পারেনি। আর এই সুযোগ না থাকার ফলেই ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দ্রুত চিহ্নিত না করতে পারলে সংক্রমণ ঠেকানো মুশকিল। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশেও পর্যাপ্ত পরীক্ষা করার সুযোগ না থাকায় দিন দিন বাড়ছে ঝুঁকি। সরকার বাসা থেকে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করার কথা বললেও কোন অগ্রগতি নাই। পুরো ব্যবস্থাপনা হলো-পানিতে হাল বিহীন নৌকার দুরবস্থা যেমন।
দীর্ঘদিন সময় পেয়েও জেলা পর্যায়ে করোনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সরঞ্জামাদী সরবরাহ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিলো সরকারের। সে দায়িত্ব পালনে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়লে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত রোগী এবং সম্ভাব্য আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা এবং ভাইরাসের প্রকোপ যাতে না বাড়ে তার জন্য সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক যাবতীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। কিছু কিছু এলাকায় রোগ ও রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে ওই এলাকায় রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা বা টেস্ট কিট বাড়াতে হবে; রোগীদের কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে; সর্বোপরি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করে চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য জনবল বাড়াতে হবে। টেস্ট কিটের বর্তমানে যেহেতু স্বল্পতা আছে তাই প্রয়োজন ও প্রায়োরিটি দিয়ে এর সরবরাহ করতে হবে।
অবিলম্বে দেশের সব জায়গায় বিনামূল্যে টেষ্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কিটসহ বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ ও তার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেণ, মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার জোগান নিশ্চিত করতে হবে। কিট তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে দ্রুত খালাস ও কর মওকুফের ব্যবস্থা করতে হবে। কোয়ারেন্টাইনের জন্যে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে বড় হোটেল-মোটেল-রিসোর্টসহ উপযোগী ভবনগুলো অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্যে নির্দিষ্ট করতে হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্টেডিয়াম, জিমনেসিয়াম, খালি ভবনে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে। ডাক্তার-নার্সসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপদ পোশাক ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের দীর্ঘ মেয়াদি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। দেশের পোশাক কারখানা ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই (পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট) সরবরাহ করতে হবে। গণপরিবহন ও সংক্রমণের হটস্পট নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলখানার ঝুঁকিপূর্ণ জনচাপ দূর করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে, জনচাপ কমাতে বিনা বিচারে আটক, বয়স্ক ও মেয়াদ উত্তীর্ণদের মুক্তি দিতে হবে। ছিন্নমূল, ভাসমান মানুষদের জন্যে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় শিবির খুলে তাদেরকে সরিয়ে নিতে হবে। গাদাগাদিভাবে বাস করা বস্তিবাসীদের নিরাপত্তায় প্রতিটি বস্তিতে পরিচ্ছন্নতার উপকরণ সরবরাহ এবং করোনা মনিটরিং সেল স্থাপন করতে হবে। রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রেও একই রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
জরুরি ভিত্তিতে খেটে খাওয়া মানুষকে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে করা ও প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ২০ শতাংশ অর্থাৎ তিন কোটি ৪০ লাখ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এর মধ্যে প্রায় দুই কোটি মানুষের অবস্থান অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে। তাদের কাছে খাদ্য সাহায্য পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু সরকারের পর্যাপ্ত উদ্যোগ ও আন্তরিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন দেশের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে এই সরকার দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য কিছুই করছে না। আওয়ামী লীগের নেতা, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ধনিক শ্রেণীর জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার কথা বলছে সরকার। তাতে সব চেয়ে দুরাবস্থায় পতিত সাধারণ নাগরিকদের দুর্দশা লাঘব করবে কে?
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।