পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, চিকিৎসকদের উপদেশ মেনে চলুন, যতদূর সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলুন। এই সঙ্কটময় সময়ে ধৈর্য্য-সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করবো। গতকাল জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। করোনা মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতির চিত্র তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলাও একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা।
নানা দুর্যোগে-সঙ্কটে বাঙালি জাতি সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করেছি। ১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনা মোকাবিলার প্রচেষ্টায় যুদ্ধে অবশ্যই জয়ী হবো। গতকাল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এই ভাষণ প্রচার করা হয়। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রস্তুতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, করোনা মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঢাকায় ১০ হাজার ৫০টিসহ সারা দেশে ১৪ হাজার ৫৬৫টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত। সারাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ২৯০টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত। তবে কেউ গুজব না ছড়াবেন না। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভাষণে করোনাভাইরাস-আক্রান্ত দেশ থেকে ফেরা প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার অনুরোধ জানিয়ে দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস দ্রæত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখলেও ততটা প্রাণঘাতী নয়। তিনি মুসলমানদের ঘরেই নামাজ আদায় করার অনুরোধ জানিয়ে অন্যান্য ধর্মের ভাইবোনদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা দিবস এবার এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত। বিশ্বের ধনী-দরিদ্র, উন্নত-উন্নয়নশীল, ছোট-বড় সব দেশই কমবেশি নভেল করোনা নামক এক ভয়ঙ্কর ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। বাংলাদেশও এ সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা এবারের স্বাধীনতা দিবস ভিন্নভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জনসমাগম হয় এমন সব ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ সকল জেলায় শিশু সমাবেশ ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই কারণে আমরা মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জনসমাগম না করে টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্প্রচার করেছি।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮-৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের নির্বাচন, ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ সালের ছয়-দফা-১১-দফা, ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০ এর নির্বাচনের পথ পেরিয়ে আমরা ৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে। ওইদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে দাাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা দেন: ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনাতর সংগ্রাম। জয় বাংলা’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি সামরিক শাসক তাঁকে বন্দি করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। পাকিস্তানের জেলে ১০ মাস বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। শুরু করেন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর হাতে সময় পেয়েছিলেন। এ সময়ে প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন, শহিদ পরিবার, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিত মা-বোনদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন এই সাড়ে তিন বছরে। জাতির পিতা বলতেন: ‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলার মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবনের অধিকারী হয়।’ তিনি (বঙ্গবন্ধু) যখন দেশ পুনর্গঠনের কাজে ব্যস্ত, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকেরা তাঁকে পরিবারের ১৮জন সদস্যসহ হত্যা করে। আমরা দুবোন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই।
জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ খাদ্যশস্য, শাক-সবজি-মাছ-মাংস-ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। ঢাকায় মেট্রোরেল এবং চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণ কাজ দ্রæত এগিয়ে চলেছে। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দোরগোড়ায়। মহাকাশে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপিত হয়েছে। গত বছর ৮.১৫ শতাংশ হারে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা আভাস দিচ্ছেন। আমাদের উপরও এই আঘাত আসতে পারে। তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়ে এখন বিশ্বের ১৯৫টির মধ্যে ১৬৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৪ লাখ ২২ হাজার ৮শ’ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত এবং ১৮ হাজার ৯০৭ জন মানুষ মারা গেছেন। অবশ্য ১ লাখ ৯ হাজার ১০২ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে গেছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে মহামারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি আপনারা আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যাঁদের আত্মীয়স্বজন বিদেশে রয়েছেন, তাঁরাও তাঁদের নিকটজনদের জন্য উদ্বিগ্ন রয়েছেন। আমি সকলের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু এই সঙ্কটময় সময়ে ধৈর্য্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ মেনে চলতে হবে। যতদূর সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। যাঁরা করোনাভাইরাস-আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরেছেন, সেসব প্রবাসী ভাইবোনদের কাছে অনুরোধ আপনাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকুন। মাত্র ১৪দিন আলাদা থাকুন। পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশি, এলাকাবাসী সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন। তিনি বলেন, কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সহজ হবে। ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাতম ধোঁয়া, হাঁচি-কাশি দিতে হলে রুমাল দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিবেন। যেখানে-সেখানে কফ-থুথু ফেলবেন না। করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না। মুসলমান ভাইয়েরা ঘরেই নামাজ আদায় করুন এবং অন্যান্য ধর্মের ভাইবোনদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আই.ই.ডি.সি.আর-এর হটলাইন নম্বর খোলা হয়েছে। এছাড়া সোসাইটি অব ডক্টরস তাদের ৫০০টি নম্বর উন্মুক্ত করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ঐসব নম্বরে যোগাযোগ করুন। সরকার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখলেও ততটা প্রাণঘাতী নয়। এ ভাইরাসে আক্রান্ত সিংহভাগ মানুষই কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেন। আগে থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত এবং বয়স্ক মানুষদের জন্য এই ভাইরাস বেশ প্রাণ-সংহারী হয়ে উঠেছে। সে জন্য পরিবারের সবচেয়ে সংবেদনশীল মানুষের প্রতি বেশি নজর দিন। তাঁকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন। তাঁকে ভাইরাসমুক্ত রাখার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করুন। আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্ক মানুষের যৌক্তিক চিন্তাভাবনার বিলোপ ঘটায়। সব সময় খেয়াল রাখুন আশপাশের কেউ যেন সংক্রমিত না হন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসহ দেশের ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ২টি সমুদ্র বন্দর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনসহ সকল স্থলবন্দরের মাধ্যমে বিদেশ ফেরৎ যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৯৮১ জন যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়। জানুয়ারি থেকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঢাকায় ৬টি হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে। আরও ৩টি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে আক্রান্তদের জন্য পৃথক শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঢাকায় ১০ হাজার ৫০টিসহ সারা দেশে ১৪ হাজার ৫৬৫টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সারাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ২৯০টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এতে মোট ১৬ হাজার ৭৪১ জনকে সেবা দেওয়া যাবে। গতকল পর্যন্ত সারা দেশে ৩৭ হাজার ৩৮ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এরমধ্যে ৯ হাজার ৮৮৫ জনকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া ২৬৭ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়। তাদের মধ্যে ২৭৭ জনকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে। গত ১৯ মার্চ থেকে বিদেশ হতে আগত সকল যাত্রীর সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বিমান বন্দর হতে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঢাকায় আশকোনা হাজী ক্যাম্প এবং টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা ইতোমধেই অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দিয়েছি। বিদেশে অবস্থিত আমাদের মিশনগুলোকে কোন বিদেশি নাগরিককে ভিসা না দিতে বলা হয়েছে। বিদেশ থেকে যাঁরা আসছেন তাঁদের তালিকা ঠিকানাসহ জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন আগত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করছেন।
চিকিৎসক ও স্বাস্থকর্মীদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাঁদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণ সরঞ্জাম মজুদ আছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীরও পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত হবেন না। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১৩ হাজার পরীক্ষা কিট মজুদ ছিল। আরও ৩০ হাজার কিট শিগগিরই দেশে পৌঁছবে। ঢাকায় ৮টি পরীক্ষার যন্ত্র রয়েছে। দেশের অন্য ৭টি বিভাগে করোনাভাইরাস পরীক্ষাগার স্থাপনের কাজ চলছে। আমি স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রশাসনের সদস্যদের এই ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে একযোগে কাজ করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বেতার-টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। তবে কেউ গুজব ছড়াবেন না। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে দেশের সকল স্কুল কলেজ ও কোচিং সেন্টার গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্র, যাত্রীবাহী ট্রেন, নৌযান, অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল এবং যেকোন রাজনৈতিক, সামাজিক-ধর্মীয় সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম চলবে। ২৪ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বলবৎ হয়েছে। এটি কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনকে সেনাবাহিনীর সদস্যগণ সহায়তা করছেন। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ৫০০ চিকিৎসকের তালিকা তৈরি করেছে যাঁরা জনগণকে সেবা প্রদান করবেন। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে গত ১৫ মার্চ সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে আমি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হই। এ রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে আঞ্চলিকভাবে সম্মিলিত প্রয়াস গ্রহণের জন্য আমি সার্কভুক্ত দেশসমূহের নেতাদের উদাত্ত আহ্বান জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুগে যুগে জাতীয় জীবনে নানা সঙ্কটময় মুহূর্ত আসে। জনগণের সম্মিলিত শক্তির বলেই সেসব দুর্যোগ থেকে মানুষ পরিত্রাণ পেয়েছে। ইতঃপূর্বে প্লেগ, গুটি বসন্ত, কলেরার মত মহামারী মানুষ প্রতিরোধ করেছে। তবে ঐসব মহামারীর সময় বিশ্ব এখনকার ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত ছিল না। এত বিপুল সংখ্যক মানুষ তখন একদেশ থেকে অন্য দেশে বা একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করতো না। এ কারণে করোনাভাইরাস দ্রুততম সময়ে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই বিশ্ববাসী এ দুর্যোগ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাবে।
বাজারে পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সঙ্কটময় এই সময় আমাদের সহনশীল হতে হবে। কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বাজারে কোন পণ্যের ঘাটতি নেই। দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরের সঙ্গে সরবরাহ চেইন অটুট রয়েছে। অযৌক্তিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করবেন না। জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না। সর্বত্র বাজার মনিটরিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিম্নআয়ের মানুষদের উদ্দেশে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে নিম্নআয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে-ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা প্রদান করা হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভাষাণচরে এক লাখ মানুষের থাকার ও কর্মসংস্থান উপযোগী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে কেউ যেতে চাইলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়াও বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একইভাবে বিনামুল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা ও দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে নিম্ন-আয়ের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করে তিনি বলেন, আমাদের শিল্প উৎপাদন এবং রপ্তানি বাণিজ্যে আঘাত আসতে পারে। এই আঘাত মোকাবিলায় আমরা কিছু আপৎকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আমি ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এ তহবিলের অর্থ দ্বারা কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ব্যবসায়-বান্ধব বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী জুন মাস পর্যন্ত কোন গ্রাহককে ঋণ খেলাপি না করার ঘোষণা দিয়েছে। রপ্তানি আয় আদায়ের সময়সীমা ২ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাস করা হয়েছে। একইভাবে আমদানি ব্যয় মেটানোর সময়সীমা ৪ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাস করা হয়েছে। মোবাইলে ব্যাংকিং-এ আর্থিক লেনদেনের সীমা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাস বিল পরিশোধের সময়সীমা সারচার্জ বা জরিমানা ছাড়া জুন মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সমগ্র বিশ্ব এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে চলছে। তবে যেকোন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের সরকার প্রস্তুত। আমরা জনগণের সরকার। সব সময়ই আমরা জনগণের পাশে আছি। আমি নিজে সর্বক্ষণ পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। আমাদের এখন কৃচ্ছতা সাধানের সময়। যতটুকু না হলে নয়, তার অতিরিক্ত কোন ভোগ্যপণ্য কিনবেন না। মজুদ করবেন না। সীমিত আয়ের মানুষকে কেনার সুযোগ দিন। আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ বছর রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারি গুদামগুলোতে ১৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে।
দুর্যোগের সময়ই মনুষত্যের পরীক্ষা হয়। এখনই সময় পরস্পরকে সহায়তা করার; মানবতা প্রর্দশনের। বাঙালি বীরের জাতি। নানা দুর্যোগে-সঙ্কটে বাঙালি জাতি সম্মিলিতভাবে সেগুলো মোকাবিলা করেছে। ১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনাভাইরাস মোকাবিলাও একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। আমরা সকলের প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।