Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি : ৬৩ নাগরিকের ১০ দাবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২০, ২:২৭ পিএম | আপডেট : ৩:৩৫ পিএম, ২২ মার্চ, ২০২০

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ১০ দফা দাবি জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন ৬৩ সচেতন নাগরিক। রোববার (২২ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা গণমাধ্যমে এই চিঠি পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাপকাঠিতে করোনা সংক্রমণের যে চারটি স্তরের কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশ এর তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করেছে, অর্থাৎ দেশের ভেতরেই এই রোগ কমিউনিটি সংক্রমণের পর্যায়ে ঢুকে পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চতুর্থ স্তরটি হলো, ব্যাপক সংক্রমণ ও ব্যাপক মৃত্যু। চীন, ইরান, ইতালি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি থেকে আমরা পরিষ্কার ধারণা করতে পারি যে, কীভাবে অতি দ্রুত জ্যামিতিক গতিতে এই মহামারি দাবানলের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, দুই মাস সময় পেলেও সরকার সমস্যার দিকে কোনো মনোযোগই দেয়নি। উপদ্রুত দেশগুলো থেকে দেশে প্রত্যাবর্তনকারী প্রবাসী ভাই-বোনদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণে কোয়ারেন্টিন করার সরকারি ব্যর্থতা প্রমাণ করে যে সমন্বয়হীনতা ও প্রস্তুতির অভাব দেশকে কতবড় বিপদে ফেলতে পারে।

মহাবিপদ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেই, সমন্বয় নেই, আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণের পর্যাপ্ত উপকরণ ও ব্যবস্থাপনা দেশে নেই; নেই চিকিৎসকদের রক্ষার ব্যবস্থা, নেই যথেষ্ট মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ভেন্টিলেটার! পরীক্ষার ব্যবস্থা ছাড়া সরকার আক্রান্ত সংখ্যার যে তথ্য দিচ্ছে তা তাই বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে না। দেশের হাসপাতাল ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় বিরাজমান দুর্বলতা ও প্রস্তুতিহীনতা অনুধাবন করে দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

উদ্বেগের আরও কারণ হচ্ছে জাতির মহাবিপদের মুহূর্তে দুর্যোগ মোকাবিলার কোনো সমন্বিত উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো বাস্তবতা অস্বীকার করে ‘সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন’ বলে সরকারের মিথ্যা সাফল্যের বন্দনায় মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের ব্যস্ততা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য আমাদের গভীরভাবে চিন্তিত, ক্ষুব্ধ ও হতাশ করে। বিভিন্ন ছাত্র যুব সংগঠনসহ স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তি ও সংগঠনের দায়িত্বশীল কাজই এখন পর্যন্ত আমাদের ভরসা। কিন্তু এসব উদ্যোগ সমন্বয়েরও কোনো আগ্রহ সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।

১. আমরা চাই, সরকার আর কালক্ষেপণ না করে শ্বেতপত্রের মাধ্যমে করোনা মহামারি রোধের পরিকল্পনা ও কার্যকর প্রণালী জনসমক্ষে প্রকাশ করবে। শ্বেতপত্রে থাকবে ঢাকাসহ প্রতিটি জেলা-উপজেলায় কতজন স্বাস্থ্যকর্মী আছেন এবং তাদের সুরক্ষার পর্যাপ্ত সরঞ্জাম কবে পর্যন্ত নিশ্চিত করা যাবে, প্রতিটি হাসপাতালে সর্বোচ্চ কতটি বেড প্রস্তুত করা যাবে, প্রতিটি হাসপাতালে কতটি ভেন্টিলেটর প্রস্তুত আছে, করোনা পরীক্ষার কতগুলো কিট আছে, প্রতিদিনের ব্যবহারের মানসম্মত গ্লাভস, মাস্ক ইত্যাদির মজুত কতদিনের মধ্যে নিশ্চিত করা যাবে, এসব তথ্য প্রকাশ করতে হবে।

২. অবিলম্বে দেশের সব জায়গায় বিনামূল্যে টেস্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কিটসহ বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ ও তার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার জোগান নিশ্চিত করতে হবে। কিট তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে দ্রুত খালাস ও কর মওকুফের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. দেশের সব প্রবেশপথ সতর্ক নজরদারির আওতায় নিতে হবে। অবিলম্বে করোনা সংক্রমণের সময় আক্রান্ত দেশগুলো থেকে ফিরে আসা প্রবাসীদের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য বা ইতোমধ্যে আক্রান্ত অঞ্চলের মানচিত্র তৈরি করতে হবে। গুরুত্ব অনুযায়ী অঞ্চলভিত্তিক জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের ভেতর কক্সবাজার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পর্যটন গন্তব্যগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।

৪. কোয়ারেন্টিনের জন্যে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে বড় হোটেল-মোটেল-রিসোর্টসহ উপযোগী ভবনগুলো অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্যে নির্দিষ্ট করতে হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্টেডিয়াম, জিমনেশিয়াম, খালি ভবনে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা সম্ভব। সিএমএইচ ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সমন্বিত পরিকল্পনায় যুক্ত করতে হবে।

৫. ডাক্তার-নার্সসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপদ পোশাক ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের দীর্ঘ মেয়াদি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। দেশের পোশাক কারখানা ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই (পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট) সরবরাহ করতে হবে।

৬. গণপরিবহন ও গণপরিসরগুলো এবং সংক্রমণের হটস্পট নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলখানার ঝুঁকিপূর্ণ জনচাপ দূর করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে, জনচাপ কমাতে বিনা বিচারে আটক, মেয়াদ উত্তীর্ণদের মুক্তি দিতে হবে। ছিন্নমূল, ভাসমান মানুষদের জন্যে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় শিবির খুলে তাদেরকে সরিয়ে নিতে হবে। গাদাগাদিভাবে বাস করা বস্তিবাসীদের নিরাপত্তায় প্রতিটি বস্তিতে পরিচ্ছন্নতার উপকরণ সরবরাহ এবং করোনা মনিটরিং সেল স্থাপন করতে হবে। রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রেও একই রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করবার জন্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. করোনা সংক্রান্ত জরুরি কাজ ছাড়া পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের আপদকালীন সময়ে সবেতন ছুটি দিতে হবে। ছুটিকালীন শ্রমিকদের মজুরি যাতে ঠিকমতো পরিশোধ হয়, সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুতদারি বন্ধ করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। নিম্ন আয়ের এবং রোজগার হারানো মানুষদের জন্যে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এই সুযোগে ঋণখেলাপি, চোরাই টাকার মালিকদের কোনো বাড়তি সুবিধা দেওয়া যাবে না।

৯. বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্যকর্মী, ধর্মীয় নেতাদের সাহায্যে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় ক্লাব, সংগঠন ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে তাদের প্রচার ও রোগ প্রতিরোধে কাজের সুযোগ দিতে হবে।

১০. এর পাশাপাশি ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া মোকাবিলায় সরকারের কী পরিকল্পনা তা প্রকাশ করতে হবে। বর্ষা আসার আগেই আমাদের ডেঙ্গু মৃত্যু রোধ করবার প্রস্তুতিও শেষ করতে হবে, যেটি একই কমিটি থেকে পরিচালিত হতে পারে।

নাগরিকদের পক্ষে এসব দাবির পক্ষে একাত্মতা জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, রুশাদ ফরিদী, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, গীতি আরা নাসরীন, অধিকারকর্মী শাহীন আনাম, ফাহমিদুল হক, রোবায়েত ফেরদৌস, আইনুল ইসলাম, জোবাইদা নাসরীন, তানজীমউদ্দিন খান, মোশাহিদা সুলতানা, কাজলী শেহরীন ইসলাম, রিদয়ানুল হক, কাজী মারুফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, আইনুন নাহার, সায়েমা খাতুন, সাঈদ ফেরদৌস, নাসরীন খন্দকার, মীর্জা তাসলিমা সুলতানা, মানস চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌম্য সরকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌভিক রেজা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাদাফ নূর ও মাইদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক লুৎফুন হোসেন, ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ইফতেখারুজ্জামান, সুজন সম্পাদক বদিউল মজুমদার, সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা, শিক্ষক ও লেখক আলী রীয়াজ, আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলম, খুশী কবির, রেজাউর রহমান লেনিন, হামিদা হোসেন, পরিবেশ অধিকারকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শিক্ষক ও লেখক বীণা ডি’কস্টা, আলোকচিত্রী ও শ্রমিক অধিকারকর্মী তাসলিমা আখতার, জনস্বার্থ আন্দোলন কর্মী মিজানুর রহমান, সুজন সভাপতি হাফিজ উদ্দীন খান, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, নৃত্যশিল্পী আনিসুল ইসিলাম হিরু, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী বীথি ঘোষ, শিল্পী ও সংগঠক অমল আকাশ, সাংস্কৃতিক কর্মী লুবনা মরিয়ম, সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ শায়ান, কবি ও সংগীতশিল্পী অরূপ রাহী, গবেষক মাহা মির্জা, লেখক ও গবেষক রেহনুমা আহমেদ, গবেষক ও অ্যাকটিভিস্ট নাজনীন শিফা, নৃবিজ্ঞানী ও শিক্ষক ড. দীনা এম সিদ্দিকী, অধিকারকর্মী ও গবেষক মুক্তশ্রী চাকমা, শিক্ষক ও লেখক আজফার হোসেন, নাট্যকর্মী ও শিক্ষক নায়লা আজাদ, শিক্ষক অমিতা চক্রবর্তী, ক্ষুদে ব্যবসায়ী আরমান হোসেন, কৃষিবিদ ও গবেষক লুৎফুর রহমান, নৃবিজ্ঞানী ও শিক্ষক নুসরাত চৌধুরী, গবেষক রোজিনা বেগম, প্রকৌশলী ও লেখক কল্লোল মোস্তফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজের শিক্ষক শিল্পী বড়ুয়া, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিউতি সবুর এবং ইউল্যাবের শিক্ষক অবন্তী হারুন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নোভা আহমেদ।

 



 

Show all comments
  • asaduzzaman ২২ মার্চ, ২০২০, ২:৪৪ পিএম says : 0
    63 nagoriker satha amio akmoth.
    Total Reply(0) Reply
  • MD ABU BAKAR SIDDIK ২২ মার্চ, ২০২০, ৪:৫৪ পিএম says : 0
    আমিও মনে করি সরকার এর প্রতি দৃষ্টি দিলে অনেকটাই এগিয়ে যাবে
    Total Reply(0) Reply
  • SHAWON KHAN ২২ মার্চ, ২০২০, ৫:০১ পিএম says : 0
    আমি তাদের মন্তব্যে একমত
    Total Reply(0) Reply
  • Farid ২২ মার্চ, ২০২০, ৫:৪০ পিএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটা অনুরোধ পোশাখ কারখানার দিকে নজর দিতে । কারন অনেক জনবলের মাঝে আমরা কাজ করি ।
    Total Reply(0) Reply
  • MD. MOINUL ISLAM ২২ মার্চ, ২০২০, ৬:৪৩ পিএম says : 0
    1. alls point are fine. 2.need 15 days full country lock down . 3.pl
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mahabub ২২ মার্চ, ২০২০, ৬:৫৮ পিএম says : 0
    63 nagoriker sathe ak moth prokash korci Obilonbe babostha grohon kora hok
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mahabub ২২ মার্চ, ২০২০, ৬:৫৮ পিএম says : 0
    63 nagoriker sathe ak moth prokash korci Obilonbe babostha grohon kora hok
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ