পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারি রূপ নেয়ায় দেশের কারাগারগুলোতে বন্দিদের নিয়ে শঙ্কায় তাদের স্বজনরা। এমনিতেই কারাগারগুলোর অবস্থা খুব নাজুক। ধারন ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি বন্দি এখন অবস্থান করছে দেশের ১৩টি কেন্দ্রীয় ও ৫৫টি জেলা কারাগারে। দেশের কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৪১ হাজার। বছরের বেশির ভাগ সময়ে দ্বিগুণ বন্দি অবস্থান করলেও গতকাল এ সংখ্যা ছিল ৯০হাজারে বেশি। ছোট অপরাধ, সন্দেহভাজন ও কমগুরুত্বপূর্ণ মামলায় গ্রেফতারকৃতদের জামিন দেয়ার মাধ্যমে বন্দির সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া ঢাকাসহ সারাদেশের আদালত থেকে প্রতিদিন প্রিজন ভ্যানে করে গাদাগাদি করে যেভাবে বন্দি কারাগারে নেয়া হয় তাতেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছে বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে কারা কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সারাদেশের মতো কারাগারগুলোতেও সতর্কতামূলক নানা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য কারাগারগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি আসামিদের সতর্ক করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বন্দিদের স্বজনদের কোন প্রকার আতংকিত না হতে বলা হয়েছে কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।
রাজধানীর বাড্ডা থেকে ভাইকে দেখতে গতকাল সিএমএম আদালতে অসেন আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সবাই আতংকিত। বাংলাদেশে এর অবস্থা ভাল নয়। সাধারন একটি মামলায় ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রিজনভ্যানে করে আদালত থেকে কারাগারে নেয়া হচ্ছে। গাদাগাদি করে অনেক লোক একটি ছোট গাড়িতে ঢুকানো হচ্ছে। এদের মধ্যে কারো করোনাভাইরাস রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করার কোন উদ্যোগ নেই। একজন অসুস্থ হলে ওই গাড়ির সবাই অসুস্থ হয়ে পড়বে। এ বিষয়টি দেখার কেউ নেই, তাই আমরা আতঙ্কিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে সম্প্রতি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এক আত্মীয়ের সাথে দেখা করেন আসেন রামপুরার হাফিজুর রহমান। গতকাল তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, কারাগারে আটক থাকার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। কারাগারের ভেতরে একটি ছোট রুমে অনেক লোক থাকতে হয়। এছাড়া স্বাস্থ্য সচেতনতা খুবই কম থাকে বন্দিদের মধ্যে। বাইরে থেকে বন্দিদের সাথে আত্মীয় স্বজন দেখা করার বিষয়টিও রয়েছে। এমনকি কারারক্ষী ও সাধারণ কর্মচারীরা প্রতিদিন কারাগারের বাইরে থেকে প্রবেশ করছেন। এতে করে অতিরিক্ত সচেতন না হলে যে কোন সময় দেশের কারাগারগুলোতে করোনাভাইরাসে বন্দিদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কারনে কারাগারে থাকা সাধারন বন্দিদের পরিবার শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেশের সকল কারাগারে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতার পাশাপাশি নানা পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ের সর্তক রয়েছি। সম্প্রতি সিলেট বিভাগে কারাগার পরির্দশন করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও সর্তক থাকার নির্দেশনা দিয়েছি। কারাগারে বন্দিদের নিয়ে আমরা সর্তক রয়েছি এবং স্বজনদের আতংকিত হওয়ার কিছু নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিভিন্ন সময় সন্দেহভাজন অভিযুক্ত ও ছোট অপরাধে গ্রেফতারকৃতদের জামিন দেয়ার বিষয়টি সরকার ভেবে দেখতে পারেন। এতে করে কারাগারে আটক বন্দিদের বড় একটি অংশ বের হওয়ার সুযোগ পাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন, আইন-শৃংখলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে যারা গ্রেফতার হচ্ছেন তাদের অপরাধের ধরন দেখেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, এতে করেও বন্দি কমিয়ে আনা সম্ভব। সম্প্রতি ইরান ৮৫হাজার সাধারন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে উল্লেখ্য করেন তিনি।
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেশের সকল কারাগারগুলোতে বিশেষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গত ১০ মার্চ এ সংক্রান্ত জরুরি নির্দেশনা জারি করেছেন। দেশের সব কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার, জেলার এবং সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের কারা উপমহাপরিদর্শকদের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নতুন বন্দিদের আমদানি ওয়ার্ড এবং সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তরের আগে একটি বাফার বা অন্তবতীকালীন আমদানি ওয়ার্ডে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এই সময়ে কোনো লক্ষণ প্রকাশ না পেলে তাদের সাধারণ ওয়ার্ডে নিতে বলা হয়েছে। পর্যবেক্ষণকালে পুরনো বন্দিরা যাতে নতুন বন্দিদের সংস্পর্শে আসতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, কারাগারগুলোতে প্রতিদিন অনেক লোকের সমাগম হয়। ফলে প্রত্যেক কারাগারের মূল ফটকে সাবান, হ্যান্ডওয়াশ বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত রাখতে হবে। কারারক্ষীরা ডিউটিতে যাওয়ার সময় এবং আদালত থেকে আসা বন্দি ও নতুন বন্দিদের কারাগারে প্রবেশের আগে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত-মুখ ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে। কোনো দর্শনার্থীর মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা গেলে তিনি যেন কারা এলাকায় প্রবেশ করতে না পারেন তা সৌজন্যের সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে। কারও সুস্থতা নিয়ে সংশয় দেখা দিলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে পৃথক করার ব্যবস্থা নিয়ে প্রয়োজনে জাতীয় হটলাইনে যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের কারারক্ষক কবির হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা আগে থেকেই সতর্ক। শুধু কারাগারের ভেতরে থাকা কয়েদি নয়, যারা বাইরে থেকে এখানে আসছেন তাদেরও স্বাস্থ্যগত সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
কারা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের ৬৮টি কারাগারে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দিকনিদের্শনা দেয়া হয়েছে। কোনো বন্দির জ্বর বা সর্দি-কাশি হলে তাকে আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কারাগার পরিদর্শন করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।