পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জি কে শামীমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্স অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড বাস্তবায়নাধীন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ। সরকারি ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের দায়িত্বে থাকা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদফতর মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে বিপাকে পড়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন সে পরিমাণ অর্থ না থাকায় বিলও দিতে পারছে না গণপূর্ত অধিদফতর।
এদিকে জি কে শামীমের চলমান কাজের তথ্য চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সম্প্রতি ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছে। জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সের চলমান কাজ যথাসময়ে বাস্তবায়ন নিয়েও শঙ্কা শুরু হয়েছে। নতুন করে ডেন্টার দেয়ার কথা ভাবছে সরকার।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ানের জন্য নতুন করে ভাবা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। মতামত আসলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে জি কে শামীমের চলমান কাজের তথ্য চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। স¤প্রতি ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক পরিচালক স্বাক্ষরিত চিঠিতে জি কে (বিল্ডার্স) নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চলমান কাজের তথ্য শিরোনামে চিঠিতে ছক মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটির চলমান প্রকল্পের তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়, ছকে প্রকল্পের নাম, প্রকল্পের মেয়াদ, ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাস্তবায়ন হার, কাজ চলমান আছে কি না এবং মন্তব্য- এসব কলামের মাধ্যমে তথ্য দিতে বলা হয়। কাজ চলমান রাখার স্বার্থে গৃহীত ভিন্নরূপ কোনো উদ্যোগ থাকলে তা ছকের মন্তব্য কলামে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানের নিকেতন অফিসে অভিযান চালিয়ে জি কে বিল্ডার্স অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে আটক করে র্যাব। অভিযানের সময় এক কোটি ৮০ লাখ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) পাওয়া যায়। পাওয়া যায় মার্কিন ডলার, মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী আগের ঠিকাদারের সাথে করা চুক্তি বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশনা দিয়েছেন। এরই মধ্যে গণপূর্ত অধিদফতর সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের পথে এগুচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রকল্পগুলো চালু করা সম্ভব হবে। যথাসময় কাজ সম্পন্ন করাটা সম্ভবপর হয়ে উঠবে না বলেই মনে করছেন তারা।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবন, পঙ্গু হাসপাতাল, নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল, এনজিও ভবন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ভবন, বিজ্ঞান জাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, রাজধানীর আশকোনায় র্যাবের সদর দফতর, গাজীপুরের পোড়াবাড়িতে র্যাব ট্রেনিং সেন্টার, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবন, ক্যাবিনেট ভবন, বাসাবো বৌদ্ধমন্দির, পার্বত্য ভবন, মিরপুর-৬ নম্বরের স্টাফ কোয়ার্টার, সেবা মহাবিদ্যালয় এবং মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের কাজ জি কে শামীমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডর্স অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড করছে। এর মধ্যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪০০ কোটি টাকার কাজ, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে ৪০০ কোটি টাকার কাজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডাইজেস্টিভ, রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটালে (মহাখালী ডাইজেস্টিভ) ২০০ কোটি টাকার কাজ, অ্যাজমা সেন্টারে ২০-২৫ কোটি টাকার কাজ। এ ছাড়া জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ২০-২৫ কোটি টাকার কাজ, বাংলাদেশ সেবা মহাবিদ্যালয়ে ২০-২৫ কোটি টাকার কাজ, গাজীপুর র্যাব ট্রেনিং স্কুলের ৫৫০ কোটি টাকার কাজ, বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের ৩০০ কোটি টাকার নির্মাণ কাজ, সচিবালয়ের ক্যাবিনেট ভবন নির্মাণে ১৫০ কোটি টাকার কাজ, এনবিআরের ৪০০ কোটি টাকার কাজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সের ১০০ কোটি টাকার কাজ, পিএসসিতে ১২ কোটি টাকার কাজ ও এনজিও ফাউন্ডেশনে ৬৫ কোটি টাকার কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সরকারি এসব কাজে সাধারণত ইজিপির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করা হলেও তাতে শামীমের কোনো সমস্যা ছিল না। বরং সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে ইজিপিতেও প্রভাব খাটিয়ে কাজগুলো ভাগিয়ে নেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, যুব লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক পদে থাকায় শামীমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ নেয়। গত সেপ্টেম্বরে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় কাজগুলো। এতে একদিকে যেমন যথাসময় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের শঙ্কা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে প্রকল্পগুলোতে সরকারের বেশি অর্থব্যয়ের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গণপূর্ত অধিদফতর।
গণপূর্ত কর্মকর্তারা জানান, নিয়মানুযায়ী প্রকল্পগুলো চুক্তি বাতিল করতে গেলে কমপক্ষে তিনমাস সময় লেগে যায়। আবার নতুন টেন্ডার আহ্বান করে নতুন ঠিকাদারের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করতেও আরো তিনমাস সময় লাগে। এটি করতে গেলেও স্বাভাবিকভাবেই প্রকল্পগুলোর কাজ ছয় থেকে সাত মাস পিছিয়ে যাবে। এ ছাড়া আগের ঠিকাদারের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেনও রয়েছে। তিনি জেলে থাকায় সেই হিসাবটিও সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। যে কারণে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না পূর্ত কর্তৃপক্ষ। স¤প্রতি অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি কে শামীমের যত টেন্ডার আছে সব টেন্ডার বাতিল করার নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে। এ সময় তিনি যত অসাধু ঠিকাদারি কোম্পানি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী জি কে শামীমের সব টেন্ডার বাতিল করতে বলেছেন। এ নিয়ে আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন। টেন্ডার করতে গিয়ে যেন কাজের কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলেন। একই সঙ্গে যারা বিতর্কিত ঠিকাদার রয়েছে, যারা সরকারি বিভিন্ন কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।