পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। শুধু সড়ক নয়, নৌ, বিমান ও রেল পথেরও আমরা উন্নয়ন করছি। সারাদেশের মানুষ আজ সড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। আজ যে প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করা হলো তা মুজিববর্ষের উপহার।
গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়েসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুনির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ৬ লেনবিশিষ্ট ৮ কিলোমিটার তৃতীয় কর্ণফুলী (শাহ আমানত সেতু) সেতু এপ্রোচ সড়ক এবং ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় খুলনা, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ সড়ক জোনে নির্মিত ২৫টি সেতুও গতকাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সেনাবাহিনী প্রধান আজিজ আহমেদ খান বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষগুলো এতদিন অবহেলার মধ্যে ছিল। ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ যেতে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগত। এ ছাড়া বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নয়ন ছিল না। আজ সে যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, এসব এলাকায় এখন দ্রæত উন্নয়ন হবে। তিনি বলেন, আপনারা জানেন, এই পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল। আমি সেটা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। কানাডার কোর্টে প্রমাণ হয়, সেখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সম্মানের। এই ধরণের একটা অভিযোগ দিয়ে আমাদের চরমভাবে অসম্মান করা হয়েছিল। তাই এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। নিজেদের অর্থায়নে সেতুর কাজ শুরু করি। পদ্মা সেতু ছিল আমাদের আত্মসম্মানের ব্যাপার। আমরা যে নিজেরা করতে পারি, এই একটা সিদ্ধান্তে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মানুষের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। ঢাকা থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত যাতে নিরবিচ্ছন্নভাবে মানুষ চলাচল করতে পারে, সে জন্য সড়ক, ব্রিজ, কালভাট, আন্ডারপাস, ওভারপাস নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের যোগযোগ ব্যবস্থার ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ উপকৃত হচ্ছে। আমরা যোগযোগ ব্যবস্থার আধুনিক ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন করতে চাই। সারাদেশ এখন সড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পদ্মা সেতুটা কিন্তু একটি ভিন্নধর্মী দোতলা সেতু হচ্ছে। নিচ দিয়ে রেল যাবে, ওপর দিয়ে গাড়ি যাবে। পদ্মা নদীর মতো একটি খরস্রোতা নদীতে এ জাতীয় সেতু নির্মাণ করা একটা বিরা ঝুঁকির ব্যাপার ছিল। কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করছি।
তিনি বলেন, আমরা সমস্ত বাংলাদেশে যোগাযোগের একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করে দিচ্ছি। এটা সবক্ষেত্রেই কাজে লাগবে। আর সব থেকে বড় কথা, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষরা ছিলাম সবচেয়ে অবহেলিত। ভাঙ্গা পর্যন্ত যেতে হলে একসময় স্টিমার বা লঞ্চে যেতে হতো, আর আমাদের গোপালগঞ্জ যেতে হলে চব্বিশ ঘণ্টা লাগতো। আমি ১৯৮১ সালে যখন দেশ ফিরে আসি, তখনও সেই অবস্থাই ছিল। যাক, আজকে আর সেই দিন নেই। আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকে সারা বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করি। আর দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে পরিকল্পনামতো সমগ্র বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে যাচ্ছি।
এসময় তিনি আরও বলেন, আমি প্রথমবার সরকার গঠন করে জাপান যাই। তখন পদ্মা ও রূপসা সেতু নির্মাণের জন্য তাদের অনুরোধ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধুও ১৯৭৩ সালে জাপান সফরে গিয়ে যমুনা সেতু নির্মাণের কথা বলেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে যমুনা সেতু নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি করে দেয় জাপান। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরে যমুনা সেতু নির্মাণ করা হয়। পরে জাপানই পদ্মা সেতুর ফিজিবিলিটি স্টাডিও করে দেয়।
নতুন উদ্বোধন করা আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের দুটি অংশ ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে সংযুক্ত হবে, যা বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। উল্লেখ্য, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে দুটি সার্ভিস লেনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করছে। মাওয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এবং পানছার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি এক্সপ্রেসওয়ে পুরো খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের একটি অংশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ছয় জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষ সরাসরি এই এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উপকৃত হবেন।
করোনার লক্ষণ গোপন না করে ডাক্তার দেখান
পরে পৃথক এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী এদিন মুজিব বর্ষ, ২০২০ উদযাপন উপলক্ষে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। কারো করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে তা গোপন না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে করোনা ভাইরাস নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত না হওয়ার কথাও বলেন তিনি।
রাজধানীতে আলাদা হাসপাতালসহ দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস এখন সারা বিশ্বব্যাপী। তবে বাংলাদেশ এখনো ভালো আছে, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কিন্তু এটা থেকে ভালো থাকার জন্য আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে অনুরোধ করবো, হাচি-কাশি এলে আপনারা হাতের তালুতে না নিয়ে কনুয়ের মাধ্যমে করেন। আর কারো সঙ্গে হাত মেলাবেন না, হাত মেলানো, কোলাকুলি করা, বা কাউকে জড়িয়ে ধরা এগুলো সব বন্ধ রাখতে হবে। বিদেশ থাকা আসা ব্যক্তিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বিদেশ থেকে আসবে... তারা নিজেরা অন্তত বাইরের কারো সঙ্গে মিশবেন না এবং কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখবেন এই ধরনের রোগের কোনোরকম লক্ষণ দেখা যায় কিনা খেয়াল করবেন। যদি লক্ষণ থাকে সঙ্গে সঙ্গে সেটা চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া।
গণভবনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।