পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর শাহবাগ মোড়। বুধবার বেলা তখন আড়াইটা। একটার পর একটা বাস আসছে। যাত্রীরা ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠছেন। কারো মুখে মাস্ক লাগানো। কারো মুখ খালি। যাত্রীরা বাসে উঠে খালি সিটে বসে পড়ছেন। সিট খালি না পেয়ে কেউ কেউ যাচ্ছেন দাঁড়িয়ে। মাথার উপর মরিচা পড়া রডই তখন নিরাপত্তার ভরসা।
বাসের সিট ছেঁড়া তিল চিটচিটে। ফাঁকে ফাঁকে ছারপোকার বসবাস। জানালার কাঁচ ভাঙা। পটাটনে ধূলো-ময়লা। বিচ্ছিনভাবে পড়ে আছে কাগজের টুকরা। ভ্যাপসা গন্ধ। ধোয়ামোছার বালাই নেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। হেলপার জানায়, সাত সকালে বাসটি পানি দিয়ে ধুয়ে রাস্তায় বেরিয়েছি। পরদিন সকালে আবার ধোয়া হবে। দিনে ট্রিপ মারার ব্যস্ততায় ধোয়ার সুযোগ হয় না। এটা হলো রাজধানীর সিটি সার্ভিস বাসের চিত্র।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেল দুরপাল্লার বাসেও প্রায় একই চিত্র। কোনো রকমে বাসের পটাতন পরিস্কার করা হয়েছে। চাকাগুলো চকচকে মনে হলেও সীট ও জানালা নোংরা। যাত্রীরা বাসে চেপে বসছেন আয়েশ করে। দুরপাল্লার বাসের সিটগুলোতে কভার লাগানো থাকে। সেগুলোতে ময়লা জমে বিবর্ণ হয়ে গেছে বহু আগেই। কভারে হাত দিলেই বোঝা যায় কতো পুরাতন ময়লা এগুলো। যাত্রীরা নিরুপায়।
কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার বাইরে থেকে ট্রেন আসার পর বগিগুলোতে পানি দিতেই ব্যস্ত ক্যারেজ বিভাগের কর্মীরা। ট্রেনের বগিতে নামমাত্র ঝাড়– দেয়া হচ্ছে। তবে সবক্ষেত্রে নয়। যে ট্রেন দেরিতে আসছে সেগুলোর দরজার সামনে ঝাড়– দিয়েই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দায়িত্ব শেষ। একতা এক্সপ্রেসের একজন অ্যাটেনডেন্ট জানান, পঞ্চগড় থেকে একতা ঢাকায় আসার আগে ওয়াশপিটে নিয়ে পরিস্কার করা হয়। ঢাকায় এসে ইঞ্জিন ঘুরিয়ে আবার ট্রেনটি পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা করে। ট্রেন বেশি লেট হলে কোনোমতে পরিস্কার করা হয়। সেক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণি বা এসি কেবিন একটু যত্মসহকারে পরিস্কার করা হয়। বাকী বগিগুলো সেরকম পরিস্কার করা হয় না। বগির ভিতরে কাগজ, পলিথিন, প্যাকেট, বাদামের খোসাসহ ময়লা আবর্জনা কোনোমতে চোখের আড়াল করা হয় মাত্র।
সদরঘাটের লঞ্চের একই অবস্থা। কেবিন পরিস্কার করা হলেও লঞ্চের ডেকে পুরাতন ময়লা-আবর্জনা জমেই থাকে। সেদিকে কারো কোনো নজর নেই।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরও বাস, ট্রেন ও লঞ্চের পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পদ্ধতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। এতে করে এগুলো থেকে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। অথচ গণপরিবহনে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকানোর জন্য বার বার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে। এ প্রসঙ্গে পরিবেশ আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান ইনকিলাবকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে। যাত্রীরা সচেতন হবেন, তার সাথে মালিকপক্ষ বা কর্তৃপক্ষের সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিশেষ করে একটা ট্রিপ শেষ করার পর বাসগুলোতে স্প্রে করে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার, সিটের কভার, হাতল ও উপরের রডগুলো স্যানিটাইজার সামগ্রি দিয়ে মুছে ফেলা যেতে পারে। এতে করে বাসগুলো অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত থাকবে। একই সাথে যাত্রীদেরকে মনে রাখতে হবে তারা বাস থেকে নামার পর হাত ভালো করে না ধোয়া পর্যন্ত যেন নাকে মুখে হাত না দেন। বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় গণপরিবহনে যাত্রী সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া এখন আর ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। একইভাবে দূরপাল্লার বাসগুলোতেও যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। বাস মালিকরা জানান, সংক্রমণ বাড়লে অভ্যন্তরীণ গণপরিবহনেও যাত্রীর সংখ্যা আরও কমে যাওয়ার বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ প্রতিরোধে গণপরিবহন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। যদিও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের পক্ষে গণপরিবহন এড়িয়ে চলা অসম্ভব। এ অবস্থায় পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে গণপরিবহন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুতি হিসেবে চালক-পরিবহন শ্রমিকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা যেমন বলা হচ্ছে, তেমনি বলা হচ্ছে ট্রিপ শেষে গণপরিবহনে জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহারের কথাও। যাত্রীদের গণপরিবহনে ওঠার সময় শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের বিষয়টিও উঠে আসছে। পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার রাখারও।
জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে বাস মালিকদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছি। এসএমএস-এর মাধ্যমে মালিকদেরকে ট্রিপ শেষে বাসগুলো পরিস্কার করা, বাসের ভিতরে স্প্রে করাসহ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ আমাদের নির্দেশনা মেনে চলছে। কেউবা মানছে না। বাস মালিক সমিতির নেতা বলেন, এ বিষয়ে আগামী শনিবার আমরা ঢাকা শহরের মালিকদের নিয়ে একটা মিটিং ডেকেছি। আশা করছি ওই দিন করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে একটা ভালো উদ্যোগ নেয়া হবে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় পরিবহন কোম্পানি হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এখনো দূরপাল্লার বাসে যাত্রী সংকট তৈরি হয়নি। তবে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব যদি বেড়ে যায়, তাহলে বড় ধাক্কা খাবে দেশের পরিবহন খাত। এবং এর রেশ ছয় থেকে নয় মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। রোগটির সংক্রমণ প্রতিরোধে পূর্বপ্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সরকার বা গণমাধ্যমের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নিদের্শনা পাইনি। গত বছর যখন ব্যাপক হারে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটেছিল, তখন আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল বাসে নিয়মিত অ্যারোসল স্প্রে করার। এবারো যদি সে রকম কোনো নির্দেশনা আসে, তাহলে আমরা তা অবশ্যই পালন করব। তবে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে যাত্রীসহ সাধারণ মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।
যতটা সম্ভব গণপরিবহন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেও ব্যাপক হারে গণপরিবহন এড়িয়ে চলার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, যারা দেশের বাইরে থেকে আসছেন, বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে তারা যাতে গণপরিবহনে না ওঠেন।
পাশাপাশি আমরা তাদের ১৪ দিন স্বেচ্ছা কোয়ারান্টাইনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এ সময়ে তারা যেন গণপরিবহন ব্যবহার না করেন। সাধারণ মানুষের জন্য ব্যাপক হারে গণপরিবহন এড়িয়ে চলার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে আমরা সে অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশনা দেব।
এদিকে, প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করেন। বেশির ভাগ ট্রেনই চলে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে। স্টেশন-প্লাটফর্মেও প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে। ট্রেনের যাত্রী ও স্টেশনে জমায়েত হওয়া মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রেলওয়ের প্রস্তুতি সম্পর্কে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ভাইরাসটি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রতিটি ট্রেন ও স্টেশনে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। স্টেশন ও ট্রেনের ভেতরে হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত হ্যান্ডওয়াশ-স্যানিটাইজার মজুদ রাখা হচ্ছে। ট্রেন ও স্টেশন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের যেসব আন্তর্জাতিক স্টেশন আছে, করোনাভাইরাস শনাক্তে সেগুলোয় থার্মাল স্ক্যানার বসানো হচ্ছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের পাসপোর্ট আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। যারা এ রোগে উপদ্রæত দেশগুলোয় স¤প্রতি ভ্রমণ করেছেন, তাদের রেলওয়েতে ভ্রমণের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে।
সদরঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির একজন নেতা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে লঞ্চগুলোতে সেভাবে প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য মালিকপক্ষকে বলা হয়েছে। তবে সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা এখনও পর্যন্ত আমরা পাইনি। লঞ্চের কেবিনগুলোতে নিয়মিত স্প্রে করা হয় উল্লেখ করে ওই নেতা বলেন, লঞ্চগুলোতে মানুষের জমায়েত ঠেকানো কঠিন। কারণ প্রতিটি লঞ্চের ডেকেই গাদাগাদি করে যাত্রী ওঠে। করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব বেড়ে গেলে লঞ্চের ডেকে (পটাতনে) কোনো যাত্রীই নেয়া যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।