পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশের নারী সমাজ তাদের দক্ষতার প্রমাণ রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি, যাতে তারা এগিয়ে যেতে পারে। কাজেই তারা যেখানেই যাচ্ছে তাদের দক্ষতার দেখাচ্ছেন।
গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। ‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারীর অধিকার’ শীর্ষক এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নিয়ে সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মেয়েরা ভারত্তোলন থেকে শুরু করে এভারেষ্ট পর্যন্ত বিজয় করে ফেলেছে। তিনি বলেন, খেলাধূলায় আমাদের যেসব মেয়েরা ভাল করছে তাদেরকে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি এবং সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, মেয়েরা যে পারে সেটা আজ প্রমাণিত।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের হাইকোর্ট এবং সুপ্রীম কোর্টে বিচারপতি পদে কখনও কোন মেয়েরা পদোন্নতি পায়নি। তবে, প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরই সে সময়কার প্রেসিডেন্টকে বলেছিলাম, এখানে মহিলা বিচারপতি নিয়োগ দিতে হবে এবং সেই থেকেই শুরু আর এখন অনেক মহিলা বিচারপতি আছেন।
সরকার প্রধান বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের পুলিশ বাহিনীর যে কন্টিনজেন্ট কঙ্গোতে আছে, সেখানে তারা খুব ভালো করছে এবং শান্তিরক্ষা মিশনে মেয়েদের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর নারী অফিসারদেরকেই তারা চাচ্ছে। কারণ মেয়েরা সেখানে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য আমি সত্যিকারেই গর্বিত। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ইউএন উইমেনের এদেশীয় প্রতিনিধি এবং ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়ক শোকো ইশিকাওয়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘জয়িতা পদকে’ ভূষিত সফল পাঁচজন নারীর হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
পদক প্রাপ্তরা হলেন- আনোয়ারা বেগম, ডা. সুপর্ণা দে সিম্পু, মরহুম মমতাজ বেগম, অরনিকা মেহেরিন ঋতু এবং সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর।
অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু ও নারী উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্র পরিবেশিত হয়। পরে অনুষ্ঠিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নারীরা যত শিক্ষিত হবে, নারীরা যত স্বাবলম্বী হবে সমাজ তত দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে। কারণ সমাজের অর্ধেক অংশকে অকেজো রেখে দিয়ে একটি সমাজ সঠিকভাবে চলতে পারে না। সে সমাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে।
প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, সংসদ উপনেতা, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা সহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন তিনি।
নারীদের নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতা জোর করে হয় না। ক্ষমতা নিজের যোগ্যতায় অর্জন করে নিতে হয়। ক্ষমতা কেউ হাতে তুলে দেয় না। সেভাবেই আমাদের বোনদের নিজেদের তৈরি করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ধর্ষণের মত সামাজিক ব্যাধি থেকে সমাজকে রক্ষায় পুরুষদের সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান। অন্যদিকে বাংলাদেশে নারীদের চেয়ে ছেলেরা পিছিয়ে রয়েছে উল্লেখ করে জেন্ডার গ্যাপ সমস্যার সমাধানে এর কারণ খুঁজে বের করে ব্যবস্থা গ্রহণেও সংশ্লিষ্ট মহলকে পরামর্শ দেন।
বিশ্বব্যাপী আতংক সৃষ্টিকারী করোনা ভাইরাস নিয়ে আতংকিত না হয়ে বাংলাদেশের এই সমস্যা মোকাবেলার সামর্থ রয়েছে উল্লেখ করে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্যও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার প্রধান বলেন, ইদানিং নারী ধর্ষণের বিষয়টি কেবল বাংলাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বজুড়েই একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি এখানেও আমাদের একদিকে যেমন সচেতনতা দরকার তেমনি পুরুষ শ্রেণী যারা, তাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। পুরুষ সমাজের পক্ষ থেকেও আমরা চাই ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। নারীদের পাশবিক নির্যাতনকারীরা সমাজে সবচেয়ে ঘৃণিত এবং পশুর চেয়ে ও অধম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে আমাদের পুরুষ সমাজকেও ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি এই বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন গণহত্যা চালিয়েছে সেই সময় মেয়েদের ওপর কী রকম পাশবিক অত্যাচার করেছিল। ক্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতন চালাতো আর বলতো সাচ্চা পাকিস্তানী তৈরী করছে।
জাতির পিতা এই নারীদের ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধিতে ভূষিত করে তাদের সমাজে পুণর্বাসনের উদ্যোগ নেন। নারী পূণর্বাসন বোর্ড গঠন করেন। বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা করান। যে সব মেয়েদের বিয়ে হচ্ছিল না, তাদের নিজের পরিচয়ে বিয়ের উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন- লিখে দাও বাবার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, ঠিকানা ধানমন্ডী-৩২ নম্বর। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জাতির পিতা বলতেন- শুধু মেয়েদের অধিকারের কথা বললে হবে না, তাদের অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধু সেটাই করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে জেন্ডার গ্যাপ নিয়ে একটি প্রশ্ন থাকলেও বাংলাদেশে বিষয়টির উল্টো ঘটছে। তিনি বলেন, আমাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা উল্টে গেছে। কারণ আমাদের এখন মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে, ছাত্রের সংখ্যা কমেছে। পাশও ছাত্রীরাই বেশি করছে এবং ফলাফলও তারা ভাল করছে। ছেলেরা কেন পিছিয়ে আছে সেজন্য জেন্ডার গ্যাপ পূরণে তাকে এখন নজর দিতে হবে এবং এজন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষামন্ত্রীকে এ বিষয়টিতে নজর দেয়ার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘আরেকটি সমস্যা সারা বিশ্বব্যাপী এখন চলছে- করোনাভাইরাস,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক দেশ এখন অর্থনৈতিক ভাবেও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু সারাক্ষণ মনিটর করছি। কোথাও যদি কোন সমস্যা দেখা দেয়, যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইনশাল্লাহ এই ধরনের সমস্যা মোকাবেলার যথেষ্ট সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সবাইকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।