পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনও এক মেজরের বাঁশির ফুঁতে দেশে যুদ্ধ শুরু হয়নি বা দেশ স্বাধীন হয়নি। অথচ সে নিজেই চাকরি করত বাংলাদেশ সরকারের অধীনে। ৪০০ টাকা বেতন পেতো। তাকেই ঘোষক বানানোর চেষ্টা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে অনেকে অনেক কথাই বলেছেন। আমি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করব না। আমি শুধু বলব, অনেকে উচ্চারণ করেছেন। আমি শুধু বলব ৭ মার্চের ভাষণের একেকটি লাইনই একেকটি কোটেশন। আর সেই লাইনগুলো ছিল সেই সময়ের জন্য প্রযোজ্য। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের পটভূমি হয়তো অনেকে জানেন। ওই সময় অনেকে অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন। অনেক জ্ঞানী-গুণী লিখিত আকারে ভাষণ তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমাদের ছাত্র নেতারা, তাদের অনেকেই পরে আর আমাদের সঙ্গে থাকেনি, তারা বলেছিলেন এখনই স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হবে, নইলে জাতি হতাশ হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন, কখন কোন পদক্ষেপটি নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ভাবলে দুঃখ হয় যে, ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের দেশে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। আমি জানি না যারা এই ভাষণ মুছে ফেলতে চেয়েছিল তারা এখন লজ্জা পায় কিনা। অবশ্য তাদের লাজলজ্জা আছে বলে মনে হয় না। এই দেশে এমন একটা সময় ছিল যখন মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান সেটাও মুছে ফেলা হয়েছিল। এমনভাবে বিকৃত ইতিহাস তৈরি করা হলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মুজিববর্ষ উদযাপনে অনেক কর্মসূচির চিন্তা করছি। জাতির পিতা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান পায়। তিনি সংবিধানে মৌলিক চাহিদার কথা উল্লেখ করে গেছেন। তার স্বপ্ন ছিল একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এ জন্য তিনি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। মুজিববর্ষের মধ্যে দেশের একটি মানুষও ভ‚মিহীন থাকবে না। আওয়ামী লীগের নেতাদের নিজের এলাকায় খোঁজ নেয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যাদের ঘর নেই তাদের আমরা ঘর করে দেবো। আমরা চাই একটি মানুষও যেন গৃহহারা না থাকে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ আমার এই কথাটা দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। আপনারা চেষ্টা করেন ঘর করে দিতে। না পারলে আমরা টাকা দেবো ঘর করার জন্য।
তিনি বলেন, তখনকার যে অবস্থা, অনেক খবরই আমরা জাতির পিতার পরিবারের সদস্য হিসেবে পেতাম, যা বাইরের মানুষের জানার কথা। ওই সময় পাকিস্তানিরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল। তাদের যুদ্ধ বিমান রেডি ছিল, হেলিকপ্টার রেডি ছিল। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি কী বলবেন, সে অনুযায়ী অ্যাকশন প্ল্যান রেডি ছিল পাকিস্তানিদের। ব্রিটিশ আমলে যেমন জালিয়ানওয়ালাবাগে নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটিয়ে আন্দোলন স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছিল, ঠিক ওই রকম প্রস্তুতিও ছিল। তাই জাতির পিতাকে কৌশলী হতে হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, একটি জাতি তার সামনে কোনো আশা নেই, ভরসা নেই, স্বপ্ন নেই। সেই জাতিকে বঙ্গবন্ধু আশার বাণী শুনিয়েছেন, স্বপ্ন দেখিয়েছেন। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আব্দুল মান্নান, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফসহ অনেকেই।
জয় বাংলা কনসার্টে প্রধানমন্ত্রী
প্রথমবারের মতো জয় বাংলা কনসার্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছয় বছর ধরে ঐতিহাসিক সাতই মার্চে জয়বাংলা কনসার্ট হলেও এবার মুজিববর্ষে আয়োজনে প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আর্মি স্টোডিয়ামে কনসার্ট উপভোগ করতে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি। বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে গ্যালারিতে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী সায়মা ওয়াজেদ হোসেন এবং দৌহিত্র ও সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক বিকাল থেকে ছিলেন কনসার্টস্থলে।
বেলা দেড়টার পর সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় জয়বাংলা কনসার্ট। এরপর একে একে সঙ্গীত পরিবেশন করে ব্যান্ড দল ইনট্রোয়েট, অ্যাডভার্ব, সিন, এফ মাইনর, মিনার রহমান, অ্যাভয়েড রাফা, শূন্য। আদিবাসী মেয়েদের প্রথম ব্র্যান্ড ’এফ মাইনর’ জয় বাংলা কনসার্টে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিহরণ জাগানো গান নোঙর তোলো তোলো, সময় যে হলো হলো’ গানে নিজেদের পরিবেশনা শুরু করে। গান পরিবেশনের পাশাপাশি সন্ধ্যার আগ থেকে শুরু হয় আতশবাজির ঝলকানি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বড় স্ক্রিনে দেখানো হয় বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের রঙিন ভিডিও।
বিকালে সিআরআইয়ের ট্রাস্টি নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, এই কনসার্টের মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর চেতনা তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। আজ যখন কনসার্টের মাঝে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করা হবে, তখন এই হাজার হাজার তরুণ তাতে গলা মেলাবে। আমরা এই তরুণদের সাথেই সংযোগ স্থাপন করতে চাই। কনসার্টে রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের হলোগ্রাফিক প্রজেকশন উপস্থাপন হবে।
উপস্থিত ছিলেন,অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। এছাড়াও উপস্থিত রয়েছেন ভারতের হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ, শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সিআইআইয়ের ট্রাস্টি নাহিম রাজ্জাক।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
এদিকে, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর ধাননমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।
প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ও পরে দলীয় সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভেতরে যান সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। এরপর দলের অন্যান্য সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।