Inqilab Logo

বুধবার, ০৫ জুন ২০২৪, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা যেন বীমার টাকা পান : প্রধানমন্ত্রী

বীমার সেবা ডিজিটালাইজের পরামর্শ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশের সব বীমা পদ্ধতিকে অটোমেশন পদ্ধতিতে নিয়ে আনার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতে করে গ্রাহকদের বিশ্বাস বাড়বে। আর বীমা করলে মানুষ যে সুবিধাগুলো পাবে, তা প্রচার করতে হবে। এছাড়া বীমার টাকা যেন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা পান এবং বীমার টাকা নিয়ে দিতে কোম্পানিগুলোর ফাঁকিবাজির প্রবণাতাও রোধ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বীমা দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী দুঃসময়ে বীমা থাকার বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি আধুনিক তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বীমা সংস্থাগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত ও এর পরিসেবা আরো উন্নত করতে বীমা কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বীমার যেকোনো কিছু অর্থাৎ বীমার দাবি নিষ্পত্তি থেকে শুরু করে বীমা সেবাকে আরো সহজীকরণে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। এটা করলে তবে দুর্নীতি দূর হবে। এর থেকে মানুষ উপকার পাবে।

কাজেই সেক্ষেত্রে বীমা খাতটাকেও আপনাদের প্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে। প্রত্যেকেরই ইন্স্যুরেন্সটা করা থাকলে পরে তাদের যে সুবিধাটা হয় সেটা একটু দেখা দরকার এবং এক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিটা এখন কার্যকর করা দরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীমা কোম্পানিতে চাকরি করতেন। আমার জন্যও বীমা কোম্পানিতে যেন একটি চাকরি থাকে। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িয়ে কারাবন্দি করা হয়। জনগণের আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান সেই মামলা প্রত্যাহার করেন। বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেলে একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে তাকে চাকরির প্রস্তাব দেয়া হয়। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি জীবন-জীবিকার জন্য ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করেছেন। তাই তিনি বীমার গুরুত্ব জানতেন। এজন্য ৪৯টি বীমা কোম্পানিকে তিনি জাতীয়করণ করেন। পরে তিনি বীমা কর্পোরেশনের উন্নয়নে আইন প্রণয়ন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে বীমা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম। মানুষের মধ্যে বীমার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। বীমার গুরুত্ব বোঝাতে হবে। স্বাধীনতার পর দেখেছি, পাটের গুদামে আগুন লাগত, আর ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির টাকা হাতিয়ে নেয়া হতো। ক্ষমতায় আসার পর দেখি, গার্মেন্টসে আগুন লাগানো হতো ইন্স্যুরেন্সের টাকা খাওয়ার জন্য। পরে আমি গোয়েন্দা সদস্যদের লাগিয়ে দিয়ে দেখলাম, কিছু কিছু মানুষ ধরাও পড়ল। এজন্য বীমা কোম্পানিতে সৎলোক নিয়োগ দিতে হবে। যেন বীমার টাকা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা পান।

শেখ হাসিনা বীমা কোম্পানির উদ্দেশে বলেন, আপনাদের যারা পর্যবেক্ষক হবেন বা ঘটনার ইন্সপেকশনে যারা যাবেন তাদেরকে ভালো ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং সৎলোক হতে হবে। তিনি বলেন, গ্রাহকরা বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামটা যাতে সঠিকভাবে দেয় সেটাও যেমন প্রয়োজন, বীমার টাকা যেন পায় এবং সঠিকভাবে পায় সেটা নিশ্চিত করাটাও জরুরি। যতটুকু ক্ষতি ততটুকুই যেন ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। ফাঁকি দিয়ে নেয়ার প্রবণতাটাও দূর করতে হবে।

বীমা করে অর্থ উপার্জনটা এক সময় মধ্যবিত্ত এবং চাকরি প্রত্যাশীদের ভালো উপার্জনের একটি পথ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা এখন আর তেমনভাবে নেই। আমি মনে করি এটা আবার ফিরে আসা উচিত। সরকারের প্রচেষ্টায় দেশের বেকার সমস্যা অনেকাংশেই লাঘব হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বীমা কোম্পানির মালিক যারা রয়েছেন তারা যদি এজেন্ট হিসেবে কাজ দেন তাহলে অনেক যুবক এবং বিশেষ করে মেয়েরা কাজ করতে পারে ফলে কর্মংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং বেকারত্ব দূর হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাড়ি যারা ব্যবহার করে তাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় গাড়ির ইন্সুরেন্সটা সঠিকভাবে করেনি। থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্স, সামান্য কিছু টাকা দিলেই সার্টিফিকেটটা পেয়ে যায় এবং গাড়ি চালাতে পারে। কিন্তু যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন কিন্তু আর কিছুই পায় না। শেখ হাসিনা বলেন, কারো গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে সে যে টাকা পেতে পারে বা ইন্স্যুরেন্সের টাকায় গাড়ি মেরামত করাতে পারে, সে বিষয়টা মানুষকে আরো ব্যাপকভাবে জানানো দরকার।

তিনি তার নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, কেউ যদি আপনাকে পেছন থেকে ধাক্কা মারে তাহলে তার ইন্স্যুরেন্স থেকেই আপনার জরিমানার টাকা পাওয়া দরকার। যদিও এই সিস্টেমটা আমাদের দেশে এখনও শক্তিশালীভাবে গড়ে উঠেনি। আমি মনে করি এটা গড়ে ওঠা দরকার। তিনি বীমা কেম্পানির উদ্দেশে বলেন, বীমা করলে মানুষ যে সুবিধাগুলো পাবে সেগুলো মানুষের কাছে আরো ব্যাপভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে।

জাতির পিতা আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, এই বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

মুজিববর্ষ উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন- মার্চ মাস শুরু হয়েছে, কাজেই মুজিববর্ষে আমি সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এটুকু বলব- আসুন সকলে মিলে সে প্রত্যয় ব্যক্ত করি যে, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করব।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বীমা খাতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ ব্যক্তির মাঝে ‘বীমা পদক’ বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির (আইডিআরএ) ‘বীমা ম্যানুয়েল’ এবং ‘বীমা নির্দেশিকা’ নামক দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আশরাফুল ইসলাম, আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন, বিশিষ্ট ইন্স্যুরেন্স ব্যক্তিত্ব বেগম ফরিদুন্নাহার লাইলি এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ) প্রেসিডেন্ট বিএম ইউসুফ আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।



 

Show all comments
  • Babu Brri ২ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয় জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা
    Total Reply(0) Reply
  • আয়াত শেখ ২ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    বর্তমান সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • তানভীর ইভান ২ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • সাকা চৌধুরী ২ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনার নির্দেশনা যেন ঠিকমতো মানা হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • কে এম শাকীর ২ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
    বীমা কোম্পানিগুলো যাতে কমিটমেন্ট ঠিক রাখে সেজন্য আপনার তদারকি কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ২ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
    শুকরিয়া, আপনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাক অনেক দূর। শুভ কামনা রইলো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ