পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জনশক্তি রফতানির বাজারে দিন দিন শঙ্কা বাড়ছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মী নিয়োগে আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। সউদী আরবের বৃহৎ শ্রমবাজার নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশটিতে হুরুবপ্রাপ্তদের (কফিলের নিকট থেকে পালিয়ে যাওয়া কর্মী) এবং ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া আমেল মানজিলি কিংবা সায়েখ খাস পেশার কর্মীদের এক্সিট আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। সম্ভাবনাময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণের বিষয়টিও পিছিয়ে যাচ্ছে। সোমবার গভীর রাতে সফররত মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসাগারনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যৌথ ওয়ার্কিং গ্রæপের সভা বাতিল করে চলে গেছেন।
গত ১৯ ফেব্রæয়ারি থেকে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ডিপ্লোমেটিক কোয়ার্টারে এসব অবৈধ কর্মীদের এক্সিট আবেদন নেয়া শুরু হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিকে দেশে ফিরে আসতে হবে। রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ এসব কর্মীদের বৈধতা লাভ এবং সুরক্ষায় কার্যকরী উদ্যোগ নিতে পারেনি। সউদী থেকে একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
বিদেশে মিশনগুলোর যথাযথ উদ্যোগের অভাবে বন্ধ শ্রমবাজারের দুয়ার খুলছে না। বহির্বিশ্বে শ্রমবাজার সম্প্রসারণেও বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিতে সক্ষম হচ্ছে না মিশনগুলো। মিশনগুলোর লেবার উইংয়ে জনবল বৃদ্ধির প্রস্তাব দীর্ঘদিন যাবত লাল ফিতায় আটকা পড়েছে।
ফ্রি ভিসার নামে কর্মীদের মিথ্যা প্রতিশ্রæতি দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। দালাল চক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে প্রবাসী কর্মীরা ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসছে। প্রবাসী কর্মীর কেউ কেউ প্রতারণার শিকার হয়ে আত্মীয়-স্বজনের স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে বিমানের টিকিট কিনে খালি হাতে দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। সউদী থেকেও নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতি মাসেই বহু মহিলা গৃহকর্মী খালি হাতে দেশে ফিরছে। বৈধ ইকামা থাকার পরও সউদী থেকে অনেক পুরুষ কর্মীকে ধরে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দরুন সম্ভাবনাময় ইউরোপের শ্রমবাজারও হাত ছাড়ার উপক্রম হচ্ছে। বেশ কিছু অভিজ্ঞ জনশক্তি রফতানিকারক কঠোর পরিশ্রম করে ইউরোপের পোল্যান্ড রুমানিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিয়োগের প্রচুর চাহিদাপত্র সংগ্রহ করে অনুমোদনের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মাসের পর মাস দৌড়-ঝাঁপ করেও কোনো সাড়া পাচ্ছে না। ভারতসহ অন্যান্য দেশ ইউরোপে কর্মী নিয়োগে দ্রæত অনুমোদন দেয়ায় এ বাজারটি হাতছাড়া হবার উপক্রম হয়েছে।
এভিয়েট ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ও বায়রার সাবেক শীর্ষ নেতা মো. নূরুল আমিন এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, রুমানিয়ায় নির্মাণ খাতে ১৭৩ জন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্রে অনুমোদন দেয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গত ডিসেম্বর মাসে ফাইল জমা দিলেও দু’মাস আটকে রেখে অনুমোদন না দিয়ে গত সপ্তাহে তা ফেরত দেয়া হয়েছে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের আক্রান্তের ঘটনায় ইতালির বিভিন্ন বিভিন্ন হোটেল এবং পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ ঘোষণা করায় প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশি কর্মী বেকার হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ দেশে ফিরে আসতে শুরু করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দেশ ব্রæনাইয়ে দালাল চক্রের হাতে প্রতারণার শিকার হয়ে দেশটিতে প্রায় ৫ হাজার কর্মী বন্দি অবস্থান অনাহার-অনিদ্রায় দিন কাটাচ্ছে। দালাল চক্র প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে ভালো কাজ দেয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রæতি দিয়ে ব্রæনাইতে নিয়ে কাজের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। প্রতারণার শিকার কর্মীদের ভাড়া করা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আটকে রেখেছে। অনেকেই স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে বিমানের টিকিট কিনে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে খালি হাতে দেশে ফিরছে। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের মধুপুর থানার নজরুল ইসলাম ও মোফাজ্জল আত্মীয়-স্বজনের স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে বিমানের টিকিট কিনে ব্রæনাই থেকে দেশে ফিরেছে।
সম্প্রতি ব্রæনাই দারুসসালামস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হোসেন ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে এ বিষয়টি শিকার করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, দালাল চক্র বাংলাদেশি কর্মীদের মিথ্যা প্রতিশ্রæতি দিয়ে ব্রæনাইতে এনে কাজ দিতে পারছে না। তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাবন করছে। এসব দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে কয়েকজনকে দেশটি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে বলেও হাইকমিশনার উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, এখানে প্রায় ৩ হাজার কর্মী প্রতারণার শিকার হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছে। প্রতিদিনই প্রতারণার শিকার কর্মীরা হাইকমিশনে এসে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেশ করছে। হাই কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতারণার শিকার কর্মীদের যথাসম্ভব সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
২০১৯ সালে সউদী থেকে ২৫ হাজার ৭৮৯ জন নারী-পুরুষ কর্মী খালি হাতে দেশে ফিরেছে। গত জানুয়ারির দু’সপ্তাহেই দেশটি থেকে দেশে ফিরেছে ১ হাজার ৬১০ জন কর্মী। ফেরত আসা নারী কর্মীদের অনেকেই নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সউদীর নিয়োগকর্তার কাছে যথাযথ সুরক্ষার অভাব এবং নানা অভিযোগের দরুন প্রায় শতাধিক মহিলা প্রেরণকারী রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভার লক করে রেখেছে বিএমইটি কর্তৃপক্ষ। এসব এজেন্সির অধীনে শত শত সউদী গমনেচ্ছু কর্মীর ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রতি দিন রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসে ধরনা দিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে কর্মীরা।
দীর্ঘ আট বছর ধরে বন্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার। নানা ক‚টনৈতিক তৎপরতা চালানোর পরও সরকার বাংলাদেশিদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের এই শ্রমবাজারটি উন্মুক্ত করতে পারেনি। যদিও এটি সহসাই খোলার ব্যাপারে ‘আশার আলো’ দেখছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সংযুক্ত আরব আমিরাত দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজারটিতে ১৯৭৬ সালের পর থেকে বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭৬ হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়। বর্তমানে এ বাজারে ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত। নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয় আরব আমিরাত।
প্রধানমন্ত্রী কয়েকবার আরব আমিরাত সফর করলেও শ্রমবাজার নিয়ে কোনো সুখবর মিলছে না। ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী আমিরাত সফরে যান। তখন শ্রমবাজারটি বাংলাদেশিদের জন্য খুলে দেয়ার ইঙ্গিত দেন আবুধাবির যুবরাজ ও দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি সুপ্রিম কমান্ডার শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান। আমিরাতে ওয়ার্ল্ড সেন্টারে দুবাই এয়ার শো-২০১৯ এর ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এ ইঙ্গিত দেন তিনি। ২০১৮ সাল থেকে বাহরাইনের শ্রমবাজার বন্ধ। এ দেশটিতে পুনরায় কর্মী প্রেরণের কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েতে অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীদের দুর্দিন চলছে। ২০২০ সালের মধ্যে দেশটিতে অবৈধ অভিবাসী কর্মীরা সাধারণ ক্ষমা পাবে না। অবৈধ প্রবাসীদের মধ্যে যারা গ্রেফতার হবেন তাদের মধ্যপ্রাচ্যসহ কুয়েতে প্রবেশে পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। কারণ সাধারণ ক্ষমার সুবিধাকে বিপুল সংখ্যক অবৈধ প্রবাসী অপব্যবহার করছে। কুয়েতে এ পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার অবৈধ অভিবাসী বসবাস করছে। এটি কুয়েতের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে স্বল্প সংখ্যক কর্মী যাচ্ছে। ঢাকায় কুয়েত গমনেচ্ছু কর্মীদের ভিসা পেতেও সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে প্রতি ভিসায় ১শ’ ডলার ঘুষ দিতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এ তথ্য জানান।
দশ সিন্ডিকেটের অনৈতিক কর্মকাÐের দরুন জনশক্তি রফতানির অন্যতম দেশ মালয়েশিয়ায় ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বহু দেন-দরবারের পর দেশটির শ্রমবাজার পুনরায় চালু হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারান ও তার সাথে আসা প্রতিনিধিদলের সদস্যরা মালয়েশিয়ায় ফিরে গেছেন। মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপের সভার দুদিন আগেই বাংলাদেশ ছাড়তে হলো এ প্রতিনিধিদলের। মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের দরুনই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুর বিষয়টি পিছিয়ে যেতে পারে। একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বিএমইটির সূত্র জানায়, জনশক্তি রফতানির সর্ববৃহৎ সউদীর বাজারটিতে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ নারী-পুরুষ কর্র্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৯৯ হাজার বাংলাদেশি কর্মী দেশটিতে চাকরি লাভ করেছে। এর মধ্যে ৬২ হাজার ৫৭৮ জন নারী গৃহকর্মী গেছে। গত জানুয়ারি মাসে ৫১ হাজার ৭৮৬ জন নারী পুরুষ কর্মী গেছে দেশটিতে। গত জানুয়ারি মাসে সউদীসহ বিভিন্ন দেশে ৬৯ হাজার ৯৮৮ জন এবং ১ ফেব্রæয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৯১৮ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর বড় কৃতিত্ব প্রবাসী আয়ের। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের দিক থেকে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানও বহু বছর ধরে যথেষ্ট শক্তিশালী। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী বেশি রেমিট্যান্স আসা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। আর বরাবরের মতো প্রবাসী আয়ের বৈশ্বিক তালিকায় প্রথম স্থানে ভারত।
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান বলেন, আরব আমিরাতের শ্রমবাজার পুনরায় চালু করতে উচ্চ পর্যায়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি পুনরুদ্ধার সম্ভব হলে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের সুযোগ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে হলে বন্ধ শ্রমবাজারগুলো পুনরুদ্ধার এবং নতুন নতুন শ্রমবাজার চালুর ওপরগুরুত্বারোপ করেন বায়রার নেতা মিজানুর রহমান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।