পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমি খুবই সৌভাগ্যবান আপনাদের সাথে এখানে একত্রিত হতে পেরেছি। বসুন্ধরা গ্রুপের এই উদ্যোগের কারণে আমি এখানে এসেছি, আপনাদের সবাইকে কাছ থেকে দেখতে পারছি। ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের এই মাসে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আর কিছুদিন পরই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর শুভক্ষণ অপেক্ষা করছে। বসুন্ধরার এই উদ্যোগ জাতির পিতার স্বপ্নের সাথে জুড়ে রয়েছে। আমাদের দেশের মানুষকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এ কাজে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সরকারের সহযোগিতা পাচ্ছেন।
বিটুমিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করতেন উল্লেখ্য করে মন্ত্রী বলেন, বিটুমিনের বিরুদ্ধে আমরা জিহাদ ঘোষণা করেছি। বিটুমিন নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আমরা আলোচনা করেছি। কিন্তু আমরা সমাধান খুজে পাইনি। আমাদের আবহওয়ার সাথে মিলে এমন বিটুমিন আমরা পাইনি। বলা হতো, এগুলো আমদানি করার পর বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে যখন আসতো তখন এগুলোর গুণগত মান ঠিক থাকত না। এগুলো মিশে যেত। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কের বিটুমিন নষ্ট হয়ে যেত। যেসব বিটুমিন ব্যবহার করে রাস্তা তৈরি করতাম সেগুলো টেকসই হতো না। প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) বা বাইরে সব জায়গায় আক্ষেপ করতেন, আমাদের রাস্তাগুলো কবে বিদেশের রাস্তার মতো হবে? আমাদের বলা হতো, এখানে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির কারণে বিটুমিনের মান ঠিক থাকে না। সে কারণে কখনো এগুলোকে আমরা আমাদের মতো করে ব্যবহার করতে পারিনি। আজ আমরা আনন্দিত। বসুন্ধরা আমাদের সে সুযোগটি করে দিচ্ছে। বসুন্ধরার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এখন আর বাইরে থেকে আমদানি করতে হবে না। নিজের দেশেই আমরা আমাদের চাহিদা মেটাতে এমন বিটুমিন আমরা পাব। চাহিদা মেটাবার পরে তাদের স্বপ্ন হচ্ছে, বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশকে সম্মানিত করার জন্য তারা রপ্তানি করবেন। এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় অর্জন বলে বিশ্বাস করি।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে উদ্বোধন করা হয় দেশের প্রথম বেসরকারিখাতের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ‘বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বসুন্ধরা বিটুমিন প্ল্যান্ট। সড়ক নির্মাণে উন্নত বিটুমিনের যোগান দিতে ‘রোড টু দ্যা ফিউচার’ ¯েøাগানকে সামনে রেখে এটিই দেশের প্রথম কোন বেসরকারি বিটুমিন প্ল্যান্ট। সরকারি-বেসরকারি নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ড ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতে গতি আনতে বেসরকারি পর্যায়ে বিটুমিন উৎপাদনের পদক্ষেপ নেয় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রæপ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান এবং অনুষ্ঠানের সভাপতি আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান তানভীর, বসুন্ধরা গ্রæপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান সানভীর এবং ওয়ালিদ সোবহান। এ ছাড়া বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।
বসুন্ধরা গ্রæপ একটি কারখানায় তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করবেন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এখানে আসার আগে বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার আলাপ হচ্ছিল। আমি উনাকে বলেছি একটা বড় কারখানা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যেন তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। তিনি (বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান) আমায় আশ্বস্ত করেছেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এমন একটা কারখানা গড়ে তোলা হবে। এটি আমাদের জন্য বড় সু-সংবাদ। এর আগে কেরানিগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ পোস্তগোলা সেতুর টোল সম্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি ৩০ বছর পুরোনো সেতুটিকে টোলমুক্ত করার দাবি জানান। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, টোলের ব্যাপারটি আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাব। তিনি নিশ্চয়ই আপনাদের সাথে একমত হবেন। আগামী ছয় মাস বা তার কিছুদিন পর টোলের ব্যাপারটি মীমাংসা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বক্তব্যের পর উপভোগ্য লেজার শো প্রদর্শন করা হয়। সেখানে বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি খাতের উদ্যোগে গড়ে ওঠে ‘বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট’র চিত্র মূর্ত হয়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছি আমরা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে প্রাইভেট খাত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছেন। সেই স্বপ্ন পূরণে হাজারও মানুষের কর্মসংস্থানের জোগান দিতে দেশে যারা এগিয়ে এসেছে, তাদের সম্মুখভাগে রয়েছে বসুন্ধরা গ্রæপ। এ সময় তিনি জানান, কেরানিগঞ্জে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলও হবে বসুন্ধরা গ্রæপের হাত ধরে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের উদ্দেশ্যে বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু টোল মুক্ত করার দাবি জানান নসরুল হামিদ বিপু। নসরুল হামিদ বিপু বলেন, এই ব্রিজটি বিগত ৩০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। ২০ বছরেরও বেশি সময় হল এই ব্রিজের অর্থ উঠে গেছে। কিন্তু এখনও টোলমুক্ত হয়নি ব্রিজটি। আমি ব্রিজটিকে টোলমুক্ত করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখনও সেই টোল রয়েই গেছে। তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গায় আরও দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলোতে টোল নেই। অথচ এই ব্রিজটিতে এখনও টোল বিড়ম্বনা রয়েই গেছে। এই অনুষ্ঠানে যেসব অতিথি এসেছেন তারাও ২০ থেকে ৩০ মিনিট এই টোল বিড়ম্বনায় ভুগেছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি সারা বিশ্বের কাছে বিস্ময়। এই ক্ষুদ্র দেশের একজন অর্থমন্ত্রী কিভাবে সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী হয়-তা সবার প্রশ্ন।
পরিশোধিত ক্রুড অয়েলের উপজাত থেকে তৈরি বিটুমিন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। আর বাংলাদেশের মতো দেশগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমদানি করা বিটুমিনের ওপর নির্ভরশীল। দেশে বিটুমিনের মাসিক চাহিদা ৪২ হাজার টন। এই চাহিদা প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট এককভাবে বছরে সাড়ে আট লাখ মেট্রিক টন বিটুমিন উৎপাদন করতে পারবে। এতে সরকারের বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
সূত্র জানায়, আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে একই সঙ্গে সময়মতো চাহিদার জোগান এবং গুণগত মান নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতে বসুন্ধরা গ্রæপই দেশে প্রথমবারের মতো বিটুমিন উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই কারখানায় উৎপাদিত বিটুমিন মানগত দিক দিয়ে সাধারণ বিটুমিনের চেয়ে আরো উন্নত হবে। এটি হবে বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ডের বিটুমিনের সঙ্গে তুলনীয়। এ ছাড়া ক্রেতার চাহিদামতো গ্রেড ও মানের বিটুমিন সরবরাহ করা যাবে।
বসুন্ধরা বিটুমিন কারখানাটি স্টেট অব আর্ট অবকাঠামো হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে রয়েছে উন্নত মানের সব সেবা ও সুযোগ-সুবিধা। ক্রেতাকে চাহিদা অনুয়ায়ী সময়মতো ড্রাম বা বাল্ক আকারে বিটুমিন সরবরাহ দেওয়ার জন্য কারখানা এলাকায় দক্ষ ও মানসম্পন্ন সুযোগ-সুবিধার অবকাঠামোও গড়ে তোলা হয়েছে। নতুন কারখানাটি চাহিদা অনুযায়ী উন্নত গ্রেডের বিটুমিন উৎপাদন করবে। কাটব্যাক, এমালসিফাইড, অক্সিডাইজড ও পলিমারসহ (এসবিএস, রাবার পাউডার) ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ও সরবরাহে সক্ষম এই প্লান্ট।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি অভ্যন্তরীণভাবে কিছু বিটুমিন উৎপাদন করে। চাহিদার বাকি ৯০ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আর আমদানি করা বিটুমিনের মান নিয়ে প্রশ্ন আর অভিযোগ উঠেছে বারবার। বলা হয়েছে, নিম্নমানের হওয়ায় এসব বিটুমিন সড়কে ব্যবহারের পর তা টেকসই হচ্ছে না। এতে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থের সদ্ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। আবার সরকারকে চাপে পড়ে আবার নতুন প্রকল্পও নিতে হয় মাঝেমধ্যে। এ অবস্থায় দেশেই সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন বিটুমিন উৎপাদনের পরিকল্পনা পুরো অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ইতিবাচক বড় ভূমিকা রাখবে। আর বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টটিও স্থাপন করা হয়েছে সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে। এখানে আদর্শ বিপণন ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে। বিটুমিনের পাশাপাশি এই প্লান্টে জ্বালানি তেলসহ কিছু বাই-প্রডাক্টও উৎপাদন করা হবে।
বসুন্ধরা গ্রুপের চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিমেন্ট সেক্টর) খন্দকার কিংশুক হোসাইন জানান, দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতেই বসুন্ধরা গ্রুপ বিটুমিন প্ল্যান্ট চালু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, বিশেষ করে সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণে বিটুমিনের চাহিদা পূরণে এই প্ল্যান্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর আমরা উৎপাদিত উচ্চমানের বিটুমিন বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছি। দেশের চাহিদা বাড়লে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে বসুন্ধরা বিটুমিন প্ল্যান্টে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।