পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার সমুদ্রের তীরে উচ্চ-স্থাপনা নির্মাণ না করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,আমরা সমুদ্রের তীর ঘেঁষে উচ্চ-স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেব না। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের মাস্টার প্ল্যান প্রধানমন্ত্রীর সামনে অবলোকন করা হয়। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে এই নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কতৃর্পক্ষকে (বেজা) মহেশখালীতে সোনাদিয়া ইকোন্ট্যুরিজম পার্ক এবং টেকনাফ উপজেলায় নাফ ট্যুরিজম পার্ক (এনএএফ) এবং সাবরং ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী মহেশখালী উপজেলায় সোনাদিয়া ইকোন্ট্যুরিজম পার্ক, টেকনাফ উপজেলার টেকনাফ সদর ইউনিয়ন নাফ ট্যুরিজম পার্ক, সাবরাং ইউনিয়নে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হবে। কয়েক ধাপে ৯ বছরে ৮ হাজার ৯৬৭ একর জমিতে সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক তৈরি করা হবে। প্রথম ধাপের কাজ শেষ দুই বছরে। ১০৪৭ একর জমিতে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক এবং ২৯১ একর জমিতে নাফ ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলা হবে। মাস্টারপ্ল্যান দেখার পর প্রধানমন্ত্রী সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক শুধু বিদেশিদের জন্য গড়ে তোলার কথা বলেন। নাফ ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার কাজ তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সমুদ্রের আশপাশে কোনোবহুতল স্থাপনা সরকার বরদাস্ত করবে না বলে জানান শেখ হাসিনা। পার্কগুলোতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। মাষ্টার প্ল্যানগুলোর লক্ষ্য হলো বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত ভারসাম্য এবং জীববৈচিত্র, দেশের কৃষ্টি,সংস্কৃতি এবং পরম্পরাকে রক্ষা করে পর্যটনবান্ধব অঞ্চল গড়ে তোলা এবং কক্সবাজার জেলার আওতাধীন বিভিন্ন পর্যটন এলাকাগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করা।
প্রধানমন্ত্রী ভ‚মিকম্প,ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ সহনশীল করে ট্যুরিজম পার্কের বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের আহবান জানান। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখেই ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করতে হবে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বালুময় সমুদ্র সৈকত আখ্যায়িত করে সরকার প্রধান বলেন,এই ৮০ মাইল দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত বিশ্বের অন্যতম সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী সাবরং ট্যুরিজম পার্কটি কেবলমাত্র বিদেশিদের জন্যই নির্মাণের নির্র্দেশনা দেন।
তিনি প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত করে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্নভাবে এই পার্কটি নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, এটি এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যাতে অন্যান্য দেশের পর্যটকেরা এর প্রতি আকর্ষিত হয় এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসে। নাফ ট্যুরিজম পার্কের বিষয়ে শেখ হাসিনা আগামী তিন বছরের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন, যাতে করে তিনি নিজে এর উদ্বোধন করতে পারেন। তিনটি ট্যুরিজম পার্কে আরো নানারকম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়েও তিনি এসময় সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়’র (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক খায়রুল আনাম অনুষ্ঠানে সাবরং এবং নাফ ট্যুরিজম পার্কের মাষ্টার প্ল্যানের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য্য দিক উপস্থাপন করেন। অন্যেিদেক বালাকৃষ্ণাণ সুরেশ মাহিন্দ্র ভিডিও প্রেজেন্টেশনের সাহায্যে সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন। সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্কের মাষ্টার প্ল্যান তৈরীর পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস প্রদান করেন যে, আগামী ২৪ মাসের মধ্যেই এখানে পর্যটকরা পরিভ্রমন করতে পারবেন এবং পার্কটিকে সস্পূর্ণ রুপ দিতে নয় বছর সময় লাগবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কতৃর্পক্ষ ( বেজা) সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের বাস্তুগত ভারসাম্য সুরক্ষা এবং জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করে এই ট্যুরিজম পার্কটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সোনাদিয়ায় দেশের প্রথম ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে বেজা মাহিন্দ্র কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স এবং ডেভকন কনসালটেন্টস লিমিটেড’কে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিযুক্ত করেছে। কক্সবাজারের আওতাধীন সাবরং এবং নাফ ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্ট এবং কোরিয়ার দোহওয়া (ডিওএইচডবিøউএ) কনসালটেন্ট লিমিটেডকে পরামর্শক সংস্থা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সোনাদিয়ায় ৮ হাজার ৯৬৭ একর জমির ওপর সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্কটি গড়ে তোলা হচ্ছে। যার ৯০৯ একর জমিকে কাজে লাগানো হবে এবং বাদ বাকী অংশ অটুট থাকবে।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত সোনাদিয়া দ্বীপে যে পার্কটি গড়ে তোলা হচ্ছে, সেখানে হেরিটেজ, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ ৬টি জোন থাকবে। এছাড়া সোনাদিয়া দ্বীপ রক্ষায় প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এই পার্কগুলো বাস্তবায়ন হলে ৪০ হাজার পর্যটক একসঙ্গে সুবিধা পাবে। এছাড়া প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বেজা জানায়, সিয়াম সিয়াম ইন্টারন্যাশনাল থাইল্যান্ডে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল, রিসোর্ট, বিনোদন কেন্দ্র, স্পা, ফিটনেস সেন্টারসহ পর্যটনের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত। সিয়ামের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তারা বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগে ফ্যান্টাসি কিংডম নির্মাণ, ফয়’স লেকে পর্যটন অবকাঠামো তৈরি এবং কক্সবাজারের রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ সচিব ড.আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী তিনটি মাস্টারপ্ল্যান অবলোকন করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী একমাসের মধ্যে এই মাষ্টার প্ল্যান চুড়ান্ত করা হবে।
কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে জালিয়ার দ্বীপটির অবস্থান। এর প‚র্বপাশে মিয়ানমার, দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে বাংলাদেশের নেটং পাহাড়। টেকনাফের মূল শহর থেকে এটি ৬ কিলোমিটার ও কক্সবাজার শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঢাকা থেকে জালিয়ার দ্বীপের দূরত্ব ৪৫৬ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম থেকে ১৮৫ কিলোমিটার। ২৭১ দশমিক ৯৩ একর আয়তনের এই দ্বীপে দীর্ঘদিন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মাছের চাষ করতেন। ২০১৫ সালের দিকে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জালিয়ার দ্বীপে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। পরে দ্বীপটি দখলমুক্ত করা হয়। বেজার অনুক‚লে ২৯৩ একর ভূমির দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত সম্পন্ন করা হয়।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য বেজা জালিয়ার দ্বীপে ট্যুরিজম পার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এটি প্রতিষ্ঠার কাজ ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে। আন্তর্জাতিকমানের নাফ ট্যুরিজম পার্ক দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেবে। এটি দেশের পর্যটনশিল্পের উন্নয়নেও বড় ভ‚মিকা রাখবে। ৫ বছরের মধ্যে পার্কটি উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।