পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না’। অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই এক বছর আগে আ হ ম মুস্তফা কামাল এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের চলমান অন্যতম প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছেই। হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও খেলাপি ঋণ কমাতে নানামুখী পদক্ষেপও নেন অর্থমন্ত্রী। যদিও সে পদক্ষেপগুলোর এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এখনও খেলাপি ঋণ আগের ধারাবাহিকতায় রয়েছে । তারপরও বছর ঘুরে দেখা যাচ্ছে, নিয়মিত হিসাবে কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণের পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। শতাংশের হিসাবে বেশ কিছুটা কমেছে। গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে উঠে এসেছে এই চিত্র। এতে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো মোট ঋণ ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এরমধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো ডিসেম্বর পর্যন্ত (অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক) যত টাকার ঋণ বিতরণ করেছে তার ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। সেপ্টেম্বর (প্রথম প্রান্তিক) শেষে এই হার ছিল ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে কাগজে-কলমে ২২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তুলনায় সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে। যদিও এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ রয়ে গেছে ৪২০ কোটি টাকা।
তবে অর্থমন্ত্রীর পদক্ষেপগুলোর পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে খেলাপি ঋণ আরও কমবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাই এক বছর পর ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে নানা সমালোচনা সহ্য করার পরও বছরান্তে সফল হয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একাধিক ব্যবসায়ীর মতে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সময়োগযোগী নানা সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের ঋণযোগ্য তহবিল বাড়বে। অর্থনীতিতে গতি ফিরবে। একই সঙ্গে ঋণ অবলোপন ও খেলাপি ঋণের ২ শতাংশ নগদ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিতকরণের সুযোগ এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ে আগের চেয়ে অনেকটা সচেষ্ট। তারা আশা করছে, খুব শিগগির খেলাপি ঋণ আদায়ে ইতিবাচক সাড়া মিলবে।
ব্যাংক মালিকদের সংগঠন ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, অর্থমন্ত্রীকে আমরা আশ্বস্ত করেছি। খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না। সরকারের সহযোগিতা এবং আমাদের শক্তি ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে খেলাপি ঋণ আর বাড়তে দেব না বলে জানান নজরুল ইসলাম।
জানতে চাইলে দ্বিতীয় প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমায় সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারের কড়া নির্দেশনায় ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ বেশ তৎপরতা চালিয়েছে। অনেক বকেয়া ঋণ আদায় করেছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য সবাই চেষ্টা করছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, সরকার ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ঋণ পুনঃতফসিল করার যে ‘বিশেষ’ সুযোগ দিয়েছিল, তা খেলাপি ঋণ কমাতে অবদান রেখেছে। এককালীন এক্সিট সুবিধাও বড় ভূমিকা রেখেছে।
ঋণ খেলাপিদের নানা সুবিধার প্রভাবই খেলাপি ঋণের হিসাবে পড়েছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়ার কারণেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে। এছাড়া অন্য কোনো কারণ নয়। তিনি বলেন, এটাতে ইতিবাচক তেমন কোনো লক্ষণ নেই। ঋণ পুনঃতফসিল সরকারের উদ্যোগ। এই সুযোগ দেয়ায় আপাতত খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম দেখাবে। কিন্তু এটা স্থায়ীভাবে কমছে কি না সেটা বলা মুশকিল। এটা হয়তো আবার বেড়ে যাবে। তা ভবিষ্যতই বলে দিবে।
তবে ব্যাংকগুলোও খেলাপি ঋণ আদায় করার চেষ্টা করেছে। ‘বিশেষ’ সুবিধা নিয়ে যে সব ঋণ নিয়মিত করা হয়েছে সেগুলো যাতে ফের খেলাপি না হয় সেদিকে ব্যাংকগুলোকে সজাগ দৃষ্টি রাখার পরমর্শ দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রনী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বথত।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নানা সুযোগ নিয়ে ৫০ লাখ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ এক বছরে বাড়লেও ব্যাপক হারে পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়ায় প্রথমবারের মতো বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তুলনায় সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে।
২০১৯ সালের শুরুতে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রথমে খেলাপি নীতিমালায় শিথিলতা আনা হয়। আগে ৩ মাস অনাদায়ী থাকলেই তা খেলাপি হিসেবে শ্রেণিকরণ করতে হত। এটি সংশোধন করে ৬ মাস এবং সর্বোচ্চ ১২ মাস করা হয়। অন্যদিকে খেলাপিদের বিশেষ পুনঃতফসিল নীতিমালা জারি করা হয়।
গত বছরের মে মাসে জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়, ঋণ খেলাপিরা মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের মেয়াদে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। ‘বিশেষ’ সুবিধার আওতায় ১৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছে ব্যাংকগুলো। যার অর্ধেকই করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েও গত বছর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ৫২ থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এর বাইরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন (রাইট অফ) করেছে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে এই অর্থ বাদ যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংক ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। যারমধ্যে ৪৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। শতাংশ হিসাবে যার পরিমাণ ২৪ শতাংশ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ১ লাখ ৬২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ছিল ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা।
ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা ঋণের ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগের বছর খেলাপি ঋণ ছিল ৩৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকা।
অনেক বছর ধরেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ বেশি ছিল। কিন্তু গত বছর বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে। বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৫৯ কোটি টাকা; আগের বছর যা ছিল ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।