পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। নতুন আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে না পারায় আবারো বেপরোয়া পরিবহন শ্রমিকরা। আইনের তোয়াক্কা কেউ করে না। অন্যদিকে, রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ রহস্যজনক কারণে নিস্ক্রিয়। তাদের সামনেই চলে যতো অনিয়ম।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সরকারের উচ্চমহল থেকে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। সরব হয়েছিল পরিবহন মালিক সমিতিও। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কয়েক মাসের ব্যবধানে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে গণপরিবহন সেক্টর। সড়ক-মহাসড়কে আগের মতোই চলছে ফিটনেসবিহীন লক্কর ঝক্কর বাস, চলছে চালক হেলপারদের দৌরাত্ম। চালকদের সিগনাল না মানা, যেখানে সেখানে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো, পাল্লা দিয়ে ছুটে চলার প্রবনতা এখনও বহাল আছে। একই সাথে পথচারীদের পুরনো অভ্যাসও পরিবর্তন হয়নি। তারাও ফুটওভার ব্রিজ রেখে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে দ্বিধা করছেন না। পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা জানান, মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে বেশ কিছু উদ্যোগের চিন্তা-ভাবনা। সেখানে গণপরিবহণের শৃঙ্খলার বিষয়টিও আছে। বিশেষ করে মুজিব বর্ষে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ি কোনোভাবেই নগরীতে চলতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর উদ্যোগ নেয়া হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আইন প্রয়োগে গাফিলতি ও ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি রোধ করতে না পারলে কোনোদিনই গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। তিনি বলেন, বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সড়ক নির্মাণ ও অবকাঠামোখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। সে হিসাবে সড়ক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলায় কাঙ্খিত অগ্রগতি হয়নি।
বিশঙ্খলার জন্য সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার পাশাপাশি প্রাণহানীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সড়কে মৃতু্যৃর পরিসংখ্যান বলে দেয় গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরেনি। বরং দিন যতো যাচ্ছে পরিস্থিতির ততোই অবনতি ঘটছে। ভুক্তভোগিদের মতে, সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের ব্যস্ততার কারণে গত প্রায় এক মাসে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা বলতে কিছুই ছিল না। এখনও সে অবস্থা রিরাজমান। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ বা টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ফ্লাইওভারের নীচে পুরো রাস্তাই আটকে রেখেছে দুরপাল্লার বাসগুলো। টার্মিনাল থেকে একেকটি বাস বেরিয়ে মূল রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। তাতে ওইসব বাসের পেছনে অনেক গাড়ি আটকে থাকছে। বার বার হর্ণ দেয়ার পরও বাসগুলোর চালক-হেলপারদের কোনো তোয়াক্কা নেই। কয়েকজন ভুক্তভোগি এর বিচার দাবি করে বলেন, রাজধানীর ব্যস্ত এলাকায় এমন অনিয়ম মেনে নেয়া যায় না। টার্মিনালের শ্রমিকরা জানান, টার্মিনাল ফাঁড়ি পুলিশকে বাসপ্রতি চাঁদা দিয়ে ম্যানেজ করে রাখা হয়। এজন্য পুলিশ বাসগুলোকে রাস্তার উপর দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেয়।
এদিকে, রাজধানীর সড়কে এখনও চলছে ফিটনেসবিহীন বাস ও মিনিবাস। ভুক্তভোগি যাত্রীদের অভিযোগ, আগের মতোই কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এখনও চলছে। ট্রাফিক পুলিশের একাধিক সদস্যের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের সড়ক-মহাসড়কে এখনও ফিটনেসবিহীন বাস-মিনিবাসসহ গণপরিবহন চলছেই। এ প্রসঙ্গ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরের যে কোনো স্পটে দাঁড়িয়ে দেখলেই বোঝা যায়, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে। অবশ্য গণপরিবহনের মালিকপক্ষের দাবি, নগরীতে এখন যেসব বাস চলাচল করছে সেগুলোর ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে। যেগুলোর ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই, সেগুলো রাস্তায় নামছে না। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গতকাল দুপুরে সরেজমিনে গুলিস্তান এলাকায় কয়েকটি বাস পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বাসের সীট নড়বড়ে, দরজা-জানালা নাই, বডি থেকে টিন খুলে পড়েছে, সামনে-পেছনের লাইট জ্বলে না, হুইস পাইপ দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে, চলতে গিয়ে বিকট শব্দ হচ্ছে আরও কতো কি? চলাচলের ক্ষেত্রে এসব বাসের বেপরোয়া গতি যাত্রীদেরকে আতঙ্কিত করে তুলছে। চিটাগাং রোড থেকে গুলিস্তানে আসা নাসের নামে এক যাত্রী বলেন, হিমালয় পরিবহনের একটি বাসে তিনি এসেছেন। বাসটির চালক অল্প বয়সি। পথিমধ্যে সে বেশ কয়েকটি বাসকে পেছনে ফেলার জন্য খুবই দ্রæতবেগে এসেছে। এক পর্যায়ে ঝুঁকির কথা ভেবে যাত্রীরা হই চই শুরু করলে চালক কিছুটা শান্ত হয়ে গাড়ি চালায়। তারপরেও পথিমধ্যে সে যাত্রী তোলার জন্য এক ঘণ্টারও বেশি সময় নষ্ট করেছে। বাদল নামে একজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, রায়েরবাগ থেকে যাত্রাবাড়ীর ভাড়া ১০ টাকা হলেও ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে আসার কারণে অনেকের কাছে থেকে ১৫ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হয়েছে। পথিমধ্যে বাসটি ফ্লাইওভারের উপরেই দুই বার দাঁড়িয়ে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা সময় নষ্ট করেছে।
এদিকে, ট্রাফিক পুলিশের অভিযোগ, রাজধানীতে যাত্রীদের সচেতনতা মোটেও বাড়েনি। একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট প্রশ্ন রেখে বলেন, যাত্রীরা সচেতন না হলে পুলিশ একা কি করবে? যাত্রীদের এই অসচেতনতার দৃশ্য চোখে পড়ে বাংলামোটর, কাওরানবাজার, পল্টন, বিজয়নগর এলাকায়। এসব পয়েন্টে বাসগুলো যেমন সিগনালের পরোয়া করে না, তেমনি যাত্রী বা পথচারীরাও ফুটওভার ব্রিজ রেখে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হয়। সব মিলে গণপরিবহনে আগের মতোই বিশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করছে। যা সাধারণ মানুষকে হতবাক ও হতাশ করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রভাবশালী রাজনীতিকদের বাস কোম্পানি থাকায় এতোদিন ফিটনেসবিহীন, রংচটা, লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাসের বিরুদ্ধে খুব একটা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রভাবশালী মালিকের বাস চালকেরা বরাবরই বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে গাড়ি চালিয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে কোনো যাত্রী উচ্চবাচ্য করলে তাদের শায়েস্তা করার জন্যও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিজেদের লোক রাখেন পরিবহন মালিকেরা। এ কারণে সিটিং, বিরতিহীন, সময় নিয়ন্ত্রণ, গেইটলকসহ নানা কৌশলে সরকার-নির্ধারিত হারের দু-তিন গুণ ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পান না যাত্রীরা। কিছুদিনের জন্য সে অবস্থার পরিবর্তন হলেও আবার আগের পরিবেশই ফিরে এসেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।