পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
০ এখন দাম বাড়ার সুফল কৃষক পাবে না : ইফপ্রি
০ চালের দাম নিয়ন্ত্রণে বিশেষ মনিটরিং টিমঅকারণেই বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম। গত এক মাসে মোটা-চিকন, সাধারণ-উত্তম সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে চিকন চালের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৮ টাকা। মোটা চালের দামও বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা। অথচ আমন মৌসুমের ধান কাটার পর এই সময়ে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখছে না খাদ্য মন্ত্রণালয়। অসময়ে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি দেখছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সরকার ধানের দাম নির্ধারক করে দিলেও সময় মতো ধান ক্রয় করেনি। বাধ্য হয়েই অধিকাংশ গরীব কৃষক কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। কৃষকের ঘরে ধান নেই,ফরিয়াদের ঘরে। ব্যবসায়ীদের দাবি, কৃষক যাতে চালের ন্যায্য মূল্য পায় তার জন্যই দাম বেড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি ও গবেষণা সংস্থা-ইফপ্রি’র তথ্য মতে, এখন দাম বাড়লে এর সুফল কৃষক পাবে না। আর তাই চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ মনিটরিং টিম গঠন করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। কারসাজির মাধ্যমে কেউ যাতে চালের মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে তার পদক্ষেপ হিসেবে এই টিম গঠন করা হয়েছে। এদিকে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে চাল রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা (ভর্তুকি) দেওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সরকারের বিক্রয় সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সাধারণ মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের দাম। ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরের চাল মাস খানেকের ব্যবধানে পৌঁছে গেছে ৫৪-৫৬ টাকায়। অর্থাৎ শতকরা হিসেবে সাধারণ নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের দাম এক মাসের ব্যবধানে ১৫ দশমিক ৭৮ টাকা বেড়েছে। আর ভালো মানের নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী মধ্যবিত্তের ভরসা মাঝারি মানের চালের দাম এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। ৪০-৫০ টাকা কেজি দরের এই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৫২ টাকা। সাধারণ মানের পাইজাম ও লতা চালের দাম ৭ শতাংশের মতো বেড়েছে। এ ধরনের চালের এখন দর ৪৬-৪৮ টাকা, এক মাস আগেও তা বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৮ টাকায়। তবে উত্তম মানের লতা ও পাইজামের দাম ততটা বাড়েনি। এক মাস আগে ৪৮-৫০ টাকার এ চাল এখন ৪৮-৫২ টাকা। আর বাজারে সবচেয়ে মোটা চাল স্বর্ণা ও চায়না চালের কেজি ছিল ৩০-৩৫ টাকা। গরিবের এ চালটির দাম এক মাসের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে ৩২-৩৫ টাকা। অর্থাৎ শতকরা ৩ শতাংশ বেড়েছে সবচেয়ে মোটা এ চালের কেজি।
রাজধানীর কাপ্তান বাজারে কথা হয় এক চাল ব্যবসায়ীর সাথে। তিনি বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ীরা একটু একটু করে বাড়াচ্ছেন চালের দাম। যাতে সরকারের নজরে না আসে। এর আগে মোকাম থেকে যে চাল নিয়ে এসেছেন তার থেকে প্রায় দেড়শ টাকা বেড়েছে চালের বর্তমান দাম। তবে আগের চাল দোকানে থাকায় একটু কম দামে বিক্রি করছেন তিনি।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই চিকন চালের দাম কেজি প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। বাজারের যা অবস্থা দেখলাম তাতে আরও ৩ থেকে ৪ টাকা বাড়বে দাম। তবে মোটা চালের দাম কিছুটা কম বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদের দেশের কৃষকরা ধানের দাম পায় না। তারা ধানের দাম না পেলে কিভাবে আবাদ করবে। তার জন্যই চালের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম লায়েক আলী বলেন, কৃষকরা ধানের দাম পাচ্ছে না। এর জন্য ধানের দাম বেড়েছে পাশাপাশি চালের দাম বেড়েছে। তবে চালের দাম যে হারে বেড়েছে, ধানের দাম সেই হারে বাড়েনি। সরু চালের চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়ছে। এখন রিকশাওয়ালারাও সরু চাল খাচ্ছে। অনেক জায়গায় ব্যবসায়ীরা মোটা চাল বিক্রি করতে পারছে না। তাই দাম বাড়ছে।
তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় চালের মোকামে ধানের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোটা ধানের দর কেজিতে ১৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৬ টাকা হয়েছে। অথচ সরকার ওই ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ২৬ টাকা। আর সরু ধানের দর প্রতি কেজি ২০ টাকা থেকে বেড়ে ২২ টাকা হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি ও গবেষণা সংস্থা-ইফপ্রি’র তথ্য মতে, আমাদের দেশে কৃষকের কাছে সবচেয়ে বেশি ধান মজুত থাকে এপ্রিল থেকে মে মাসে। এরপর থেকে কৃষকের মজুত ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই এই সময়ে কৃষকের কাছে ধান নেই অথচ এখন হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। তার এর সুফল কৃষক পাচ্ছে না। ইফপ্রি’র বিশ্লেষণে এমনটাই উঠে এসেছে।
অপরদিকে চাল রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা (ভর্তুকি) দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে বিশেষায়িত অঞ্চলে (ইপিজেড, ইজেড) অবস্থিত প্রতিষ্ঠান এ সুবিধার বাইরে থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকার রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে দেশে উৎপাদিত ধান থেকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎপাদিত চাল রপ্তানির বিপরীতে ভর্তুকি দেবে। এ সুবিধা আলোচ্য প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাহাজীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ধানের দামের সঙ্গে চালের দামের সামঞ্জস্য রাখতে হবে। কোনোক্রমেই যেন মিল মালিক এবং ব্যবসায়ীরা বাড়তি সুবিধা না নিতে পারে। কৃষক যেন ন্যায্যমূল্য পান, অন্যদিকে ভোক্তারাও যাতে সহনীয় দামে চাল কিনে খেতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে কেউ কারসাজির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। পরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শামীম হাসান এবং খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি অফিস আদেশে বাজার মনিটরিং টিম গঠন করার বিষয়টি জানানো হয়।
এছাড়া খাদ্যশস্যের বাজার মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা রোধ, নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদান এবং বাজারদর স্থিতিশীল রাখা, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার স্বার্থে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে মোট ৭টি বাজার মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।
চালের বাজারদরে ঊর্ধ্বগতি প্রবণতা রোধে ঢাকা মহানগরের বড় বড় পাইকারি বাজার সরেজমিনে তদারকির জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৪টি এবং খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে ৩টি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলোকে বাজারদর সংগ্রহ করে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা কমিটিগুলো প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করবে।
চালের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, চালের দাম বাড়লে কৃষক লাভবান হবে। তাই চালের দাম বাড়–ক। এতদিন কৃষক ধানের দাম পায়নি চালের দাম বাড়ার কারণে ধানের দাম বাড়বে। চিকন চালের দাম বাড়লে মোটা চালের চাহিদা বাড়বে। অনেক জায়গায় ক্রেতার অভাবে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।