পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধে আঘাত করে এমন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার সবসময় সতর্ক রয়েছে। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেয়েদের ওড়না পরা নিষিদ্ধের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির গর্ভনিং বডিও এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলেও জানান তিনি।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেছেন। মসিউর রহমান তার প্রশ্নে ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মেয়েদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এমন দাবি করে-এর বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। মেয়েদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন গতিশীল ও স্থায়ী করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত, সুশিক্ষিত ও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে আমাদের সরকার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিচর্চায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা ও সততার অনুশীলন করানো হচ্ছে। শিক্ষকরা আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর। ছেলে-মেয়ে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য সমান শিক্ষা, শিষ্টাচার ও ধর্মীয় জ্ঞান দেয়ার লক্ষ্যে আমরা শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেয়েদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করে দিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করানো হচ্ছে মর্মে সংসদ সদস্যের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। মেয়েদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের গর্ভনিং বডিও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গর্ভনিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীদের ২০২০ সালের নির্ধারিত ইউনিফর্ম (ড্রেস কোড) হচ্ছে রয়েল ব্ল-কামিজ ও সাদা সালোয়ারের সঙ্গে চওড়া ক্রস বেল্ট ওড়না।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্য সব ধর্মের চেতনা ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর। বর্তমান সরকার ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধে আঘাত করে এরকম যে কোনো কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সর্বদা সচেতন রয়েছে।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জননিরাপত্তা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। দুর্নীতি, মাদক নির্মূল ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের অভিলক্ষ্য হলো- নিরাপদ জীবন ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গঠন। সন্ত্রাস, সা¤প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূলে পুলিশ বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সরকারি দলের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের নানামুখী শ্রম কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ কর্মী বিদেশ যাচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬৬ লাখ ৩৩ হাজার ২৫৪ জনের বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সময়ে রেমিটেন্স এসেছে ১৫৩ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সরকারি দলের আহসানুল ইসলামের (টিটু) সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই ছাত্রছাত্রীরা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই হাতেকলমে কাজ শিখবে। আর এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এজন্য আমরা স্কুল থেকেই নির্দিষ্ট বিষয়গুলোতে প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে আমরা শিক্ষাকে ঢেলে সাজাচ্ছি। তিনি বলেন, কেউ ইচ্ছা করে বেকার থাকলে সেটা ভিন্ন কথা কিন্তু এখন এত বেশি কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছি তাতে যে কেউ চাইলে কিছু না কিছু করে খেতে পারে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উদযাপনে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় সংসদের শপথ কক্ষে মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সভায় এ তথ্য জানান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সভায় বক্তব্য রাখেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। তিনি মুজিববর্ষ উদযাপনের কর্মপরিকল্পনা অবহিত করেন। এ সময় তিনি বর্ষব্যাপী মুজিববর্ষ অনুষ্ঠানমালার অনুষ্ঠান সূচী হস্তান্তর করেন।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রমূখ।
সভায় স্পিকার বলেন, বঙ্গবন্ধু’র জন্মশতবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনে জাতীয় সংসদ পৃথক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে সংসদের বিশেষ অধিবেশন অন্যতম। আগামী ২২ থেকে ২৩ মার্চ বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করা হচ্ছে। একজন বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্বকে বিশেষ অধিবেশনে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। বিশেষ অধিবেশনে দক্ষিণ এশিয়ার স্পিকারগণসহ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ১৯ মার্চ শিশু মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর আলোকচিত্র নিয়ে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন স্থাপন এবং পয়লা ডিসেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর ‘মুজিবমঞ্চ’ স্থাপন করা হবে। মুজিবমঞ্চের পাশেই বিজয় মেলা আয়োজন করা হবে। এ সময় স্পিকার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি, জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি ও জাতীয় সংসদের গৃহীত কর্মপরিকল্পনা সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।