পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিলের পানি ও পাড় জুড়ে পানকৌড়ি, পাতি সরালি, শামুক ভাঙা, কালেম, অতিথি পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ঝাঁক বেঁধে ওড়াওড়ি আর কোলাহলে মুখরিত এখন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাইক্কা বিল। প্রতি বছরের মতো এবারো শীত আসার সাথে সাথে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখির দল।
প্রতিদিনই দল বেঁধে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শীত প্রধান অঞ্চল থেকে ডানায় ভর করে এখানে আসছে। এসব পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির ডাক আর জলকেলিতে মুখরিত হচ্ছে বাইক্কা বিলের মৎস্য অভয়াশ্রমটি। এই দৃশ্য আগামী ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত দেখা যাবে। পুরো শীতটাই এখানে কাটিয়ে একসময় নিজ গন্তব্যে পাড়ি জমাবে অতিথি পাখিরা। এরা দল বেঁধে সাইবেরিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসে আবার দল বেঁধেই চলে যায়।
এ অভয়াশ্রমটি মূলত দেশি প্রজাতি মাছের প্রজনন কেন্দ্র এবং সরকার ঘোষিত মৎস্যসম্পদ প্রজননের নিরাপদ স্থান। একশত হেক্টর আয়তনের এ বাইক্কা বিল দেশের একটি সংরক্ষিত এবং সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক জলাভ‚মি। বিলটিতে ‘ইউএসএইড’র অর্থায়নে প্রকল্পের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে মাছ ও পাখির স্থায়ী অভয়াশ্রম। অভয়াশ্রমটিতে দেশের বিলুপ্তপ্রায় মাছসহ প্রায় ৯০ প্রজাতির মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে।
শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওড়ের পূর্বদিকে প্রায় ১০০ হেক্টর আয়তনের একটি জলাভ‚মির নাম বাইক্কা বিল। বিশাল আয়তনের এই বিলে যেমন রয়েছে অসংখ্য শাপলা, পদ্ম ও নাম না জানা অসংখ্য জলজ ফুল তেমনি রয়েছে পাখি। অপরুপ সৌন্দর্য্য বাইক্কা বিলের মূল আকর্ষণ পরিযায়ী আর স্থানীয় পাখি। দলে দলে পার্পল সোয়াম্প হেন বা কালেম। বিলের মাঝামাঝি অংশে রয়েছে দর্শনার্থী টাওয়ার। তিনতলা বিশিষ্ট এই টাওয়ারে ওঠে পাখি দেখাসহ ছবি তোলা, ভিডিও রেকর্ডিং করার সুব্যবস্থা রয়েছে।
এখানে আগত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রী তাবাসুম ও কামরুন নাহার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিলে পাখিদের ওড়াওড়ি দেখাই আলাদা আনন্দ। খুব ভালো লাগছে এখানে এসে। এখন থেকে প্রতি বছরেই এখানে আসবো ভাবছি পাখিদের ওড়াওড়ি দেখতে। পরিযায়ী পাখি পৃথিবীর বরফজমা দেশ সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, জিনজিয়াং, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, হিমালয়সহ শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে বেঁচে থাকার তাগিদে খাদ্যের সন্ধানে আর ঠাÐা থেকে রেহাই পেতে এখানে আসে।
এসব পরিযায়ী পাখিরা শীতের শুরু থেকে আসতে থাকে এবং শীত শেষে যখন গ্রীষ্মের শুরু তখন ওরা ফিরে যায় নিজেদের ঠিকানায়। বাইক্কা বিলে গত কয়েক বছর থেকে শীত মওসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখি ছুটে আসে নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের সন্ধানে। ভাব জমিয়ে নেয় দেশীয় পাখিদের সাথে। ক্রমেই সখ্য ও প্রেমের বন্ধনে স্থায়ীভাবে বসবাসও করছে প্রচুর পাখি। তবে শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে প্রতিদিন বিচিত্র রঙ আর বর্ণে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখিদের কলকাকলীতে মুখরিত থাকে এ বিলটি। এদের কিচিরমিচির শব্দে বিরাজ করে এক মধুময় আবহ।
বিল পাড়ের স্থানীয় বাসিন্ধা তোফায়েল, আলআমিন ও আনোয়ার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বাইক্কা বিলে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ নানা জাতের পাখি। অতিথি পাখির মধ্যে পানকৌড়ি, কাস্তেচড়া, কানিবক, ধলাবক, রাঙা বক, মাছরাঙা, গোবক, ধুপনিবক, পাতিসরালী, রাজসরালী, পিন্টেল, সাদাবক, দলপিপি, ঈগল, বেগুনি কালেম, ছোট মাথা টিটি, ল্যাঞ্জা হাঁস, সরালি, মরচে রঙ ভুতিহাঁস, কালো লেজ জৌরালি ও দাগিলেজ জৌরালি, লম্বা পায়ের পাখি দলপিপি, নেউপিপি, কুট, পান মুরগি ও বেগুনী কালেম, কালামাথা কাস্তেচরা, গেওয়ালা বাটান, মেটেমাথা টিটি, কালাপাখা ঠেঙ্গী এবং বিলের নিয়মিত অতিথি পাখি পান ভোলানি। বিপন্ন তালিকায় থাকা পালাশী কুড়া ঈগল। এ ছাড়া এই বিলের দাপুটে পাখিরা হলো শঙ্খচিল, ভুবন চিল, পালাসী কুড়া ঈগল, গুটি ঈগল। শীতে প্রায় ১৬০ প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে বিলটিতে।
এছাড়াও বিলের পাশেই দেখবেন গ্রেট কর্মোরান্ট বা ছোট পানকৌড়ি, লিটল কর্মোরান্ট বা বড় পানকৌড়ির দল। শুধু পাখিই নয়, হাওরে মাছের রাজ্যেও রয়েছে অসংখ্য প্রজাতির মাছ। আইড়, মেনি, কই, ফলি, পাবদা, বোয়াল, রুই, গজারসহ অসংখ্য প্রজাতির মাছেরও অভয়াশ্রম।
বাইক্কা বিলের টিকেট বিক্রেতা আক্তার হোসেন জানান, প্রতিদিন এখানে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার টিকেট বিক্রি হয়ে থাকে। তবে শুক্র ও শনিবার পর্যটকরা বেশি আসে। বাইক্কা বিলের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত থাকা সমাজ ভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন বড় গাঙ্গিনার সাধারণ সম্পাদক মিন্নত আলী জানান, এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শীতের শুরুতে অনেক পাখি ছিলো। পর্যটক বেশি থাকায় পাখিরা দূরে চলে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।