Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা উদ্বোধন

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস রেপ্লিকায় স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। গতকাল ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে আনুষ্ঠানিকভাবে ল্যাটপটের বোতাম চেপে ক্ষণগণনার উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে (জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড) ৪৮ বছর আগে জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনাপ্রবাহ রেপ্লিকার মাধ্যমে প্রতীকী মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে এই ক্ষণগণনার সূচনা হয়। দেশের ১২ সিটি করপোরেশনে ২৮টি স্পটে, ৫৩ জেলায় ও দুটি উপজেলা মিলিয়ে মোট ৮৩টি জায়গায় বসানো কাউন্টডাউন ক্লকও সঙ্গে সঙ্গে চালু হয়ে যায়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্ম না হলে জাতি হিসেবে বাঙালি আত্মপরিচয় পেত না।

বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়সহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য, সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, দুই হাজারের বেশি আমন্ত্রিত অতিথি এবং দশ হাজারের বেশি নিবন্ধিত দর্শক উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের কারাগারের থাকার পর, মুক্তি পেয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে ফিরে আসার ঐতিহাসিক এই দিনটিতে তার জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগনণার দিন হিসেবে ঠিক করা হয়।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে বহনকারী উড়োজাহাজটি তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে অবতরণ করেছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতীকী উড়োজাহাজ (সি-১৩০ জে) অবতরণ করে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে। অতঃপর উড়োজাহাজটি ট্যাক্সি করে টারমাক এলাকায় পৌঁছানোর পর দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ২১ বার তোপধ্বনি দেয়া হয়। প্লেনের দরজা খোলা হলে ১৫০ শিক্ষার্থী ও তার নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানায়। এ সময় বাজানো হয় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠের সেই গান- ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়’।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি থেকে পাকিস্তানি সেনারা আটক করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ওই রাতেই বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর শুরু হয় বর্বর হামলা। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অভ্যুদয় হলেও তখনও পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাকে নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষ। এমনকি সারাবিশ্বের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।

বিশ্ববাসীর চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিলে যুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি নিজের স্বপ্নের স্বাধীন দেশে পা রাখেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর বাংলার মাটিতে পা রাখার মধ্য দিয়েই সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল। তখন থেকে দিনটি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে এলেও ৪৮ বছর পর এবার আয়োজনে ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে এসেছে ‘মুজিববর্ষ’। বেঁচে থাকলে এই বছরই ১০০ বছর পূর্ণ করতেন জাতির জনক; আর তাই তার জন্মশতবার্ষিকী ঘটা করে উদযাপনের যে পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ। তার ক্ষণগণনা শুরু হলো স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরের এই অনুষ্ঠান থেকে।
আমন্ত্রিত অতিথি ও নিবন্ধিতদের জন্য দুপুরের পর থেকেই উন্মুক্ত করে দেয়া হয় অনুষ্ঠানস্থলের নির্ধারিত প্রবেশ পথগুলো। সবাইকে নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। মন্ত্রিসভার সদস্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ বেলা ২টা থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠানস্থলে এসে মঞ্চে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং দেশের সিনিয়র নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি সাবেক প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের স্মৃতি রোমান্থন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমরা বন্দিদশায় ছিলাম। ১৭ ডিসেম্বর মুক্তি পাই। ওই সময় মানুষের মুখে হাসি দেখি। যারা যুদ্ধে সব হারিয়েছিলেন তারা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন প্রিয় নেতাকে পেয়ে। তিনি আরো বলেন, বাংলার দুঃখী মানুষের কথা বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু জীবনটা কারাগারে কাটিয়েছেন। এদেশের মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা পায় এটিই ছিল তার স্বপ্ন। পাকিস্তানের মিলানওয়ালি জেলখানায় তাকে আটকে রাখা হয়। সেই জেলখানায় গরমের সময় প্রচন্ড গরম, শীতের সময় ছিল প্রচন্ড শীত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ ৯ মাস তিনি কারাগারে বন্দি ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেন, যখনই কোর্টে নিয়ে যাওয়া হতো বঙ্গবন্ধু জয়বাংলা স্লোগান দিতেন। বাংলাদেশের জনগণ ‘জয়বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। নির্বাচনে জয়ী হয়ে জাতির পিতার প্রত্যাবর্তন দিবসে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু করলাম। আজকে যে আয়োজন হয়েছে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের রেপ্লিকায় সেই দিনটি স্মরণ করা হলো। এই কাজের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের ধন্যবাদ জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু যেদিন দেশে ফেরেন আমরা আসতে পারিনি। আমার মা একটি রেডিও নিয়ে বসেছিলেন। তিনি সারাক্ষণ সেই ধারাভাষ্য শুনেছিলেন। আমরা মায়ের পাশে বসে সেই রেডিও শুনেছিলাম।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলী অর্পণের মাধ্যমে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অতঃপর স্বাধীনতার এই মহান স্থপতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতিকৃতির বেদীতে আরেকটি পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এরপর একে একে আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন সহযেগী সংগঠন যেমন মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর এবং দক্ষিণ, যুব লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।



 

Show all comments
  • Md Kamruzzaman ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 1
    "তুমি জন্মেছিলে বলেই জন্মেছে এই দেশ, মুজিব তোমার আর এক নাম স্বাধীন বাংলাদেশ" মুজিব বর্ষের শুভেচ্ছা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mukta Pijush ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 1
    যাঁর জন্মে হেসেছে বাঙালি, যে আনে জীবনে হর্ষ তাঁর স্মরণে শুভ হোক ক্ষণ গণনা মুজিববর্ষ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mostakim Dewan ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪১ এএম says : 1
    প্রতীক্ষার প্রহর শেষ। শুরু হলো ক্ষণ গণনা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি,জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‍উদযাপনে বছরব্যাপী মহাকর্মযজ্ঞে বাংলাদেশের সকলকে জানাই সুস্বাগতম।
    Total Reply(0) Reply
  • Jesmin Nahar ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪১ এএম says : 1
    শুভ ও সার্থক হোক ক্ষণগণনার এই সুন্দর আয়োজন ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী ও সকল মানণীয়দের
    Total Reply(0) Reply
  • Sohel Mahmud ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪১ এএম says : 1
    জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান কে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Amin Shorif ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪২ এএম says : 0
    এগুলো না করে কোরআন তেলায়ত করে দোয়া করেন ।
    Total Reply(0) Reply
  • Sayed Mizan ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪২ এএম says : 0
    আল্লাহ বঙ্গবন্ধু কে কবুল করেন, আর বর্তমান হিংস্র নেতাদের হাত হতে আমাদের রক্ষা করেন, আমীন..
    Total Reply(0) Reply
  • Ensan Ahmed ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪২ এএম says : 1
    হাসিনা তুমি এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার পাশে
    Total Reply(0) Reply
  • Hp Shuvo ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪২ এএম says : 0
    জয় বাংলা / জয় বঙ্গবন্ধু সেই দিন বলবো। যে দিন বঙ্গবন্ধুর দেশে গনতন্ত্র ফিরে আসবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Joynal Abedin ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৩ এএম says : 0
    জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
    Total Reply(0) Reply
  • Jakir Hossain Jakir ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৩ এএম says : 0
    বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এর মধ্যদিয়ে বাঙালি স্বাধীনতার মুল স্বাদ আস্বাদন করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Hemel Paul ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 1
    ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়; তোমারি হউক জয়! জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের শুভেচ্ছা।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul Islam ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    Today I salute to My Great leader ,Father of Bangladesh Nation Bangobandhu Sheikh Mujebur Rahman.Almigty Allah grant him Jannatul Ferdous.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ