পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি দলটি সরকার গঠন করে। আজ এ সরকারের বর্ষপূর্তি। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। টানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর গত একবছরে তাঁর সরকারের সফলতা তিনি জাতির সামনে তুলে ধরবেন।
আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর গত বছরটি বেশ ঘটনাবহুল কেটেছে। শুরু থেকেই সরকারকে নানা রকম অস্বস্তিকর ঘটনার মধ্যে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিসহ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, সড়ক পরিবহণের বিশৃংখলা নিয়ে ছাত্র আন্দোলন, বুয়েটের আবরার হত্যাসহ আরও কয়েকটি হত্যাকান্ড সরকারকে কিছুটা হলেও উদ্বেগ উৎকন্ঠায় ফেলে দেয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং তার দিক নির্দেশনায় এসব সাময়িক সঙ্কট কাটিয়ে বছর শেষে সরকার অনেকটাই স্বস্তিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এ সব ইস্যুতে বিরোধীদল কার্যত কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। এত সব আলোচিত ঘটনার পরও রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সরকারের বড় সাফল্য। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা ও বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, সরকার অনেক সাফল্য রয়েছে। খাদ্য-ঘাটতির দেশটিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে রূপান্তর করা হয়েছে। শিল্প, শিক্ষা, কৃষিসহ সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতি ঘটছে। রোহিঙ্গা সমস্যা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর সহসা গুরুতর চাপ সৃষ্টি করলেও সরকার তা সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করছে। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সৃষ্ট সংকটের সময়েও শেখ হাসিনা সাহস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে তার মোকাবেলা করেছেন। হাসিনা-সরকার দেশকে রাজনৈতিক সন্ত্রাসমুক্ত করেছে। বিশ্বরাজনীতিতে বাংলাদেশ তার একটি সম্মানজনক স্থান লাভ করেছে।
সরকারের এক বছরের নানা কর্মকান্ডের বিচার বিশ্লেষনের মাধ্যমে বছর শেষে তার মন্ত্রীদের ব্যর্থতা ও সফলতার বিষয় উঠে এসেছে। গত এক বছরে মন্ত্রীদের কিছু ব্যর্থতার মাঝেও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী তাদের কর্মকান্ডে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তাদের সাফল্যের কারণে এখনো সরকারের ওপর জন আস্থা রয়েছে। মন্ত্রীদের সাফল্য-বর্থতার হিসাব- নিকাশের মাধ্য দিয়ে শিগগিরই মন্ত্রী সভায় রদবদল হতে পারে বলে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, মন্ত্রী সভায় ৫ থেকে ৬টি মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন হবে। এ ছাড়া মন্ত্রী সভায় ৩ থেকে ৪ জন নতুন মন্ত্রী যুক্ত হচ্ছেন।
গত বছরের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো নতুন মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রী নিয়ে বর্তমান সরকার গত বছরের ৭ জানুয়ারি পথচলা শুরু করে। এ মন্ত্রিসভায় ছোট খাটো কয়েকটি পরিবর্তন ছাড়া পুরো মন্ত্রিসভাই একবছর পার করেছে। তবে বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, এই একবছরে মন্ত্রিসভায় এগারো জন মন্ত্রীকে ব্যর্থ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর সফল হিসেবেও রয়েছে ১২ মন্ত্রীর নাম। সফল মন্ত্রীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। তিনি সম্প্রতি বিশ্ব সেরা অর্থমন্ত্রী হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছেন। অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রীর ব্যর্থতার কারণে সরকারের অনেক সাফল্য ম্লান হয়েছে, অনেক অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে।
সরকারের ধারাবাহিকতায় তাদের হাতে জনআকাঙ্খার বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে। এসব মেগা প্রকল্প গুলো হচ্ছে- পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্প, ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লা ভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প।
এসব মেগা প্রকল্পগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের সাফল্যের অগ্রনায়ক। তিনি এদেশের জনগণের আস্থার প্রতীক। যে কোন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তিনি সাহসী ও বৃদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এখনো বাংলাদেশে সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী এবং রাজনীতিবিদ হলেন শেখ হাসিনা। তিনি টানা তৃতীয়বারসহ মোট চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে জনগণের দুঃখ এবং সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে সফল ব্যক্তি। তার অধিনস্ত মন্ত্রণালয় গুলো ভালো ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
ওবায়দুল কাদের : আওয়ামী লীগের মতো প্রবীণ ও বড় রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন টানা দ্বিতীয়বারের মতো। দলের প্রতি তার নিষ্ঠা ও সততায় প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয়বারের মতো তার প্রতি অস্থা রেখেছেন। দলে তিনি যেমন অস্থাভাজন হয়েছেন তেমনি মন্ত্রী হিসাবে সরকারেও বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। পদ্মাসেতু- মেট্রোরেলসহ সড়ক অবকাঠামোয় যে সব বড় বড় কাজ গুলো হচ্ছে, যেখানে কোন দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। মন্ত্রী হিসেবে তিনি এইসব কাজ তদারকির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সিরিয়াস। এসব বিবেচনায় তিনি একজন সফল মন্ত্রী হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে চমক দেখিযেছেন আ হ ম মুস্তাফা কামাল। বছরের শুরুতে তিনি গ্লোবাল ফিন্যান্স মিনিস্টার অব দ্য ইয়ার পুরস্কারে ভ‚ষিত হয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বিষয়ক পত্রিকা ্রদ্য ব্যাংকারগ্ধ ২০২০ সালের সেরা অর্থমন্ত্রীদের এ তালিকা প্রকাশ করে।
প্রতিবছর এশিয়া-প্যাসিফিক, আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ- এই পাঁচটি অঞ্চল থেকে পাঁচ জন অর্থমন্ত্রীকে পুরস্কৃত করে দ্য ব্যাংকার। এই পাঁচজনের মধ্য থেকে একজনকে বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের সেরা অর্থমন্ত্রীদের এই তালিকায় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে মনোনীত হন মুস্তফা কামাল। পরে তাকেই বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রীর সম্মানে ভ‚ষিত করে লন্ডনভিত্তিক এই বাণিজ্য সাময়িকী। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো অর্থমন্ত্রী এই সম্মাননা অর্জন করলেন।
দ্য ব্যাংকারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো বিশ্ব পুঁজিবাজারে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেন তিনি। বৈদেশিক বিনিয়োগের পথ সুগম করার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিয়ে সফল হন তিনি। ২০১৯ সালে মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ থেকে ৮.১৫ শতাংশে উন্নীত হয়। আ হ ম মুস্তাফা কামাল দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ঋণ খেলাপীর সংখ্যা আর বাড়বে না। সেটি বাস্তবায়নের কাজ করছেন। ব্যাংকখাতকে সাধারণ মানুষের কছে গ্রহণ যোগ্য করে তুলেছেন। এই অর্থবছরেই দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের প্রভ‚ত উন্নতি হয়।
এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সফল মন্ত্রীদের তালিকায় একজন। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, জঙ্গীবাদ দমন ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তার দৃঢ় অবস্থান তাকে সফলদের তালিকায় অন্যতম করেছেন।
সফলদের তালিকায় রয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। দায়িত্ব গ্রহণ করেই তথ্য মন্ত্রণালয়কে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে এনেছেন। বিশেষ করে বিদেশি চ্যানেল গুলোর ব্যাপারে তার আইনানুগ কঠোরতা আরোপ এবং অনলাইন মিডিয়া গুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। সম্প্রতি দলের কাউন্সিলেও তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন। মন্ত্রী হিসাবে এবং সংগঠক হিনেবে তিনি দলীয় প্রধানের আস্থা অর্জন করেছেন।
সফল হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি যে বড় কাজটি করেছেন সেটি হলো প্রশ্নপত্র ফাঁসের কেলেঙ্কারি বন্ধ করেছেন। এর পাশাপাশি শিক্ষা অঙ্গনের যে সমস্যাগুলো ছিল সেগুলো কথা কম বলে ঠান্ডা মাথায় সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন।
আইন মন্ত্রী আনিসুল হকও একজন সফল মন্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। বিশেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নুসরাত হত্যার বিচার করা, আবরার হত্যা মা’মলা দ্রুত বিচারে আনাসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ বিচার কাজগুলোকে দ্রুত নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে তিনি সফল হয়েছেন।
এ ছাড়া ভ‚মি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম গস্তগীর গাজী, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, নৌ-পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ সফল মন্ত্রীদের তালিকায় রয়েছেন।
ব্যার্থতার খাতায় যে সব মন্ত্রীদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে প্রথমে রয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্যর উর্ধ্বগতি এবং পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি তাকে ব্যর্থতার তালিকায় শীষে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া ব্যর্থতার তালিকায় রয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ চৌধুরী, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী মাহবুব আলী এবং ধর্মমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহর নাম রয়েছে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।