পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহাসঙ্কটে পড়েছে মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীরা। মালয়েশিয়া থেকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় ব্যাক ফর গুড কর্মসূচিতে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৯১ জন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩০৯ অবৈধ অভিবাসী নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছে। দশ সিন্ডিকেটের অনৈতিক কারণে ২০১৮ সনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ ঘোষণা করেন। ফলে দেশটিতে অভিবাসী কর্মীর সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ছয় লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে।
এখনও দেশটিতে লক্ষাধিক অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নতুন বছরের শুরু থেকে অবৈধ অভিবাসীদের আটক করতে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে। এতে বাংলাদেশি কর্মীদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মালয়েশিয়া থেকে একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
নতুন বছরের শুরুতেই অভিযান চালিয়ে মালয়েশিয়ায় ৭৮ বাংলাদেশিসহ ২২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবৈধ বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই বিমানের টিকিট যোগাতে না পেরে, বিমানের টিকিট সংগ্রহের পরে ইমিগ্রেশন থেকে অনুমতিপত্র যথাসময়ে না পেয়ে এবং নানা সমস্যার দরুণ ৩১ ডিসেম্বেরের মধ্যে ইচ্ছা থাকা সত্বেও দেশে ফিরতে পারেনি। ব্যাক ফর গুড কর্মসূচির মেয়াদ আর বৃদ্ধি করেনি দেশটি। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, গত ১ জানুয়ারি ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন অঞ্চলে ১২৪টি অভিযানে বিভিন্ন দেশের ১ হাজার ৮শ ৭১ জনকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ২২০ জনকে গ্রেফতার করে অভিবাসন বিভাগ। গ্রেফেতারদের মধ্যে ৭৮ জন বাংলাদেশি রয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন দেশের নাগরিক। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ অনুপ্রবশ ও দেশটিতে অবৈধদের বসবাস ঠেকাতে বিভাগটি কাজ করছে। দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার তাগিদে কোনও পক্ষের সঙ্গে আপোস করা হবে না।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তান শ্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিন সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন ধরনের সুযোগ দেয়ার কারণেই অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার আর কোনো সুযোগ দিতে চায় না। তিনি আরও বলেন, ৫টি রূপরেখার ভিত্তিতে দেশজুড়ে অবৈধ অভিবাসী বিরোধী অভিযান পরিচালিত হবে। আর সেই অভিযানে যারা গ্রেফতার হবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেবে সরকার।
এদিকে, অভিবাসী কর্মীর অভাবে মালয়েশিয়ায় শিল্পাঞ্চল ও কৃষি খাতে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। মালয়েশিয়ার ক্যামেরুন হাইল্যান্ড অঞ্চলে অভিবাসী শ্রমিকের অভাবে শত শত একর কৃষি জমি বিরান যাচ্ছে। বাংলাদেশি কর্মীর অভাবে মালয়েশিয়ার কৃষি খাতে শাক সব্জি উৎপাদনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মালয়েশিয়ার চাহিদা মেটাতে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে প্রচুর শাক সব্জি আমদানি করতে বাধ্য হচ্ছে। ইয়াম্বু ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসাইন গতকাল রোববার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীর অভাবে শিল্প কারখানা ও কৃষিখাতে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তাইপে ইনভেস্টর এসোসিয়েশন ইন মালয়েশিয়ার সেক্রেটারি মি সুফিয়া ইয়েন গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসাগারানের সাথে সাক্ষত করে অতিদ্রুত বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের জোর দাবি জানান। অন্যথায় তাইওয়ানের বিনিয়োগকারিরা তাদের শিল্প কারখানা অন্যদেশে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। এসময় মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসাগারান বাংলাদেশ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। এসোসিয়েশন অব ম্যানুফেকচারিং ইন্ডাষ্ট্রিজ অব মালয়েশিয়ার শীর্ষ নেতৃবৃন্দও বিদেশী অভিবাসী কর্মীর সঙ্কট দ্রুত নিরসনের লক্ষ্যে কয়েক দফা দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসাগারানের সাথে বৈঠক করে কর্মী নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্য চাপ দেন। মানবসম্পদ মন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
জাতীয় শ্রমিক লীগ মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি নাজমুল হক বাবুল গতকাল রোববার মালয়েশিয়া থেকে জানান, গত ১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের ৭০০ রিংগিত জরিমানা দিয়ে নিজ নিজ দেশে যাওয়ার সুযোগ দেয় মালয়েশিয়া সরকার। কিন্তু বিমানের টিকেট মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এবং ইমিগ্রেশনে শেষ মূহুর্তে অবৈধ কর্মীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ইমিগ্রেশনের লোকজন সময় মতো দেশে যাওয়ার ছাড়পত্র ইস্যু করতে পারেনি। ফলে বিপুল সংখ্যক অবৈধ কর্মী নির্ধারিত সময়ে দেশে যেতে পারেনি। শ্রমিক নেতা নাজমুল হক বাবুল বলেন, এখনও লক্ষাধিক অবৈধ কর্মী মালয়েশিয়ায় পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধতা লাভের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মালয়েশিয়ার ব্যাক ফর গুড কর্মসূচিতে বিমানের টিকিটের মূল্যে দুই হাজার টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে তাদের টিকিটে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেয়া হয়। কুয়ালালামপুর টু ঢাকা ব্যাক ফর গুড কর্মসূচির সুবিধা নিয়ে দেশে ফিরে আসতে বাংলাদেশ সরকার ১৪ ডিসেম্বর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অতিরিক্ত ১৬টি ফ্লাইটের মাধ্যমে কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে এনেছে। মালিন্দ, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, রিজেন্টসহ অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলো অতিরিক্ত ফ্লাইট চালু করে অবৈধ কর্মীদের পরিবহন করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার বিগত সরকার দেশটিতে থাকা অবৈধ বিদেশিদের বৈধ হওয়ার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। সেই হিসেবে সরকার মাই-ইজিসহ তিনটি ভেন্ডরাকে (ঠিকাদার) দায়িত্ব দিয়েছিল অবৈধ বিদেশি কর্মীদের নাম নিবন্ধন করতে। সেসময় ভেন্ডার কোম্পানিগুলো কোন কোম্পানিতে কতজন কর্মী প্রয়োজন সেটা যাচাই বাচাই না করে ঢালাওভাবে নিবন্ধন শুরু করে।
এ তিনটি ভেন্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী নিবন্ধিত হয়েছিলেন। নিবন্ধিতদের মধ্যে তিন লাখের অধিক কর্মী ভিসা পেয়েছেন। তারপরও অনেকেই বৈধ হতে পারেননি। কারণ, কারও নাম জটিলতা, কারও বয়স জটিলতা। আবার কেউ কেউ স্থানীয় এজেন্ট ও দালালকে পাসপোর্ট ও রিঙ্গিত দিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ায় বৈধ হতে পারেননি। প্রতারণার শিকার কর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়ে হাজার হাজার কর্মী অবৈধ হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও হাইকমিশনকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তারা।
গত ৬ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুকরণের লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার পুত্রাজায়ায় দেশটির মানবসম্পাদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারানের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। বহু দেন দরবারের পর ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে কুলাসেগারানের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে সফরে আসার কথা ছিল। কিন্ত দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী বাংলাদেশের সফর বাতিল করে ভারতের দিল্লী যান। গতকাল রোববার মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কাউন্সেলর জহিরুল ইসলাম দেশটিতে অবৈধ বাংলাদেশিদের প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, সাগরপথে এসে অনেকেই অবৈধভাবে কাজ করছে। কেউ কেউ ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে অবৈধভাবে কাজ করছে। এছাড়া অনেকেই বৈধভাবে গিয়েও ভিসা নবায়ন করতে না পেরে এবং কোম্পানী পরিবর্তন করে অবৈধ হয়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।