Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

এরশাদের ওই ১১ জন বিদায়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শেষ জীবনের ২০ বছর স্ত্রী রওশন এরশাদ আলাদা বাসায় থেকেছেন। এ সময়ে বহুবার গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়েছিলেন, হাসাপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু স্ত্রী রওশন এরশাদ একবারও স্বামী এরশাদকে দেখতে বারিধারার দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ বাসায় যাননি। দীর্ঘ এই সময় অসুস্থ এরশাদের মল-ম‚ত্র পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে সাবেক প্রেসিডেন্টকে ওষুধ খাওয়ানো এবং সেবাশুশ্রূষা করতেন কর্মচারীরাই। এরশাদের দুর্দিনের সেই ১১ কর্মচারীকে বিদায় করা হয়েছে।
২০২০ সালের প্রথম দিন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্ক বাসা থেকে চোখের পানি ফেলে তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। এদের কেউ ২৫ বছর কেউ ২০ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট পার্কে কাজ করে এরশাদের বিশ্বস্ত এবং দুর্দিনের স্বজন হয়ে উঠেছিলেন।

জানতে চাইলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের পরিচালক মেজর (অব.) খালেদ আকতার বলেন, বারিধারার বাসভবন থেকে এরশাদের বিশ্বস্ত কর্মচারী, যারা সাবেক প্রেসিডেন্টের জীবনের শেষ দিনগুলোতে পাশে থেকে সেবা দিয়েছেন বিদিশা সিদ্দিক তাদের সবাইকে বিদায় দিয়েছেন। ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক। আমরা ট্রাস্ট থেকে তাদের বেতন দিতাম। এখন বিদিশা তার নিজস্ব লোক নিয়োগ দিয়েছেন। আমরা বিদিশার লোকদের বেতন দেব কি না? মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেব। তবে বিদিশা সিদ্দিক বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। কেউ চাকরি ছেড়ে গিয়েছেন, কেউ ছুটিতে গেছেন। আমি কাউকে চাকরিচ্যুত করিনি।

সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ মৃত্যুর আগে শেষ জীবনের প্রায় তিন বছর ছিলেন গুরুত্বর অসুস্থ। মাসের বেশির ভাগ সময় হয় বিছানায় নয়তো হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বিদায়ী কর্মচারীরা জানান, এ সময়ে প্রায় প্রতিদিন শয্যায় মল-মূত্র ত্যাগ করতেন বয়সের ভারে ন্যূয্য এরশাদ। তাকে দেখভাল করার স্ত্রী এবং পরিবারের কেউ থাকতেন না বারিধারার বাসায়। পুত্র এরিকও প্রতিবন্ধী। মল-ম‚ত্র পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওষুধ খাওয়ানো এবং সেবাশুশ্র‚ষা করতেন কর্মচারীরাই। মাঝেমধ্যে গভীর রাতে চালকদের ডেকে বেরিয়ে পড়তেন এরশাদ। চিৎকার করে বলতেন, দ্রæত গাড়ি বের করো, ভূতের ভয় লাগছে, বাসায় থাকলে আমি মারা যাব। সে দিনগুলোতে সারা রাত জেগে থাকতে হতো বাসার ১১ কর্মচারীকে।

এরশাদের দুর্দিনে পাশে থাকা ওই কর্মচারীরা চাকরি হারালেন। এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক এরশাদের সন্তান এরিক এরশাদের মাতৃত্বের দাবি নিয়ে প্রেসিডেন্ট পার্কে প্রবেশের পর থেকে কর্মচারিদের তিনি বিদায় দেয়া শুরু করেন। তাদের বলা হয়েছে ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে বারিধারার বাসায় প্রবেশ না করতে।

এরশাদের দুর্দিনের আস্থাভাজন কর্মচারী হলেন গাড়িচালক আবদুল আউয়াল, আজিজুর রহমান ও আবদুল মান্না, ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল ওয়াহাব, মতিউর রহমান, পাচক ডিউক রোজারিও, বিপ্লব হোসেন, ক্যামেরাম্যান আবদুস সাত্তার, কাজের বুয়া নিপা, রুবিনা এবং মালি আতাউর রহমান।
জানা গেছে, এরশাদের এসব কর্মচারীকে বিদায় দিয়ে বিদিশা সিদ্দিক তার নিজস্ব লোকদের ওই পদগুলোতে নিয়োগ দিয়েছেন। এরশাদের বাসার কর্মচারীদের বেতন দেয়া হয় এরশাদ গঠিত ট্রাস্ট থেকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ