পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রকৃতির অপরুপ সমাহার হাতিয়া উপজেলা। দেশের মূল্যবান সম্পদ স্বর্ণদ্বীপ, নিঝুমদ্বীপ ও ভাসানচর দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবেও পরিচিতি লাভ করেছে। এ ৩টি দ্বীপ-ই হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত।
হাতিয়ার চর্তুদিকে বর্তমানে ১৫টি চর ছাড়াও আরও অর্ধশতাধিক ডুবোচর জাগছে। হাতিয়ার উত্তরে মেঘনা নদী, পশ্চিমে হাতিয়া নদী, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে বিশাল বঙ্গোপসাগর। খাদ্যশস্য, মৎস ও পর্যটনের জন্য বিখ্যাত হাতিয়া। সরকারি হিসেবে নোয়াখালীর আয়তন ৪২০২ বর্গকিলোমিটার। এরমধ্যে শুধুমাত্র হাতিয়া উপজেলার আয়তন ২১০০ বর্গকিলোমিটার। অর্থাৎ নোয়াখালীর অপর ৮টি উপজেলার আয়তনের সমান হাতিয়া উপজেলা।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্রতম জেলা নারায়ণগঞ্জের আয়তন ৬৮৩.৭৬ বর্গকিলোমিটার ও মেহেরপুর জেলার আয়তন ৭১৬.০৮ বর্গকিলোমিটার। সে হিসেবে নারায়ণগঞ্জ ও মেহেরপুর জেলার মোট আয়তনের চাইতেও অনেক বড় হাতিয়া উপজেলা। অর্থাৎ হাতিয়া উপজেলার আয়তন দেশের ছোট আকারের কয়েকটি জেলার আয়তনের সমান। এছাড়া আগামীতে সাগরের বুকে যে পরিমাণ ভ‚মি জাগছে সেটা হবে দেশের জন্য আরও চমক।
দেশের প্রধান বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সাথে অবশিষ্ট জেলাগুলোর নৌ যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হাতিয়া চ্যানেল। হতিয়া উপজেলা মূল ভূখন্ডের চর্তুদিকে জেগে ওঠা ৮টি চরে জনবসতি গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে মূল ভূখন্ডের উত্তর-পূর্বদিকে স্বর্ণদ্বীপ, পূর্বদিকে ভাসান চর ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে নিঝুমদ্বীপের অবস্থান। এছাড়া আরো অর্ধশতাধিক নতুন ও ডুবো চর জেগে উঠছে। আগামী ৮/১০ বছরে জেগে ওঠা অধিকাংশ চরে চাষাবাদ শুরু হবে।
অপরদিকে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জন্য ভাসানচরের উঁচুস্থানে নির্মিত মনোমুগ্ধকর আবাস্থলের দক্ষিণ পার্শ্বেশ আরও বিশাল একটি বিশাল চর জাগছে। স্থানীয়রা চরটিকে ’গাঙ্গুরিয়া চর’ নাম রেখেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে ’গাঙ্গুরিয়া চর’ ভাসানচরকে প্রাচীর হিসেবে নিরাপত্তা প্রদানে যথেষ্ট। হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাট থেকে মূল ভূখন্ড নলচিরা ঘাটের দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। এরমধ্যে ২টি স্থানে নদীর গভীরতা (খাড়ি) মাত্র পাঁচ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। অবশিষ্ট ২২ কিলোমিটারে রয়েছে অসংখ্য ডুবোচর।
হাতিয়া মূল ভূখন্ডের পশ্চিম পাশে হাতিয়া নদী। এর পশ্চিমে ভোলা জেলার মনপুরা ও চর ফ্যাশন উপজেলার অবস্থান। হাতিয়া নদীর উভয় পাশের ৬০% অংশে চর জেগেছে। যার আয়তন প্রায় আটশত বর্গকিলোমিটার। অপরদিকে নিঝুমদ্বীপের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সাগরের বুক চিরে জাগছে আরো একটি জেলার আয়তনের সমান ভূখন্ড।
দেশের অন্যান্য উপক‚লীয় ও দ্বীপাঞ্চলের চাইতে হাতিয়ায় বিশাল চর জেগে ওঠার কারণ জানালেন হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে আলম। তিনি বলেন, দেশের প্রধান প্রধান নদীগুলোর পানি হাতিয়া চ্যানেল দিয়ে বঙ্গোপসাগরে যায়। হিমালয় থেকে উৎপত্তি নদীগুলোর পলিমাটি হাতিয়া চ্যানেলে এসে জমা হওয়ার কারণে প্রতি বছর প্রচুর ডুবো চরের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে হাতিয়া উপজেলার আয়তনও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা দেশের জন্য সু-খবর বটে।
হাতিয়া উপজেলার জনসংখ্যা সাত লক্ষাধিক। শিক্ষার হার ৭৬%। খাদ্যশস্য ও মৎস সম্পদে স্বনির্ভর। হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ছাড়াও অন্তত আরো ৩টি স্থান পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। পর্যটনের এলাকাগুলোকে আরো আকর্ষণীয় ও দ্রæত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে দেশি বিদেশি পর্যটকদের ঢল নামবে মেঘনার বুকে নয়নাভিরাম দৃশ্য সম্বলিত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। এতে করে সরকারের বিপুল রাজস্ব আয় হবে। ইলিশ ও বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মৎসের জন্য প্রসিদ্ধ এই অঞ্চল।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার টন মৎস দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়। তেমনিভাবে সংরক্ষণের অভাবে বিপুল মৎস সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। হাতিয়ায় সামুদ্রিক মৎস গবেষণা কেন্দ্র ও মৎস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে প্রতি বছর শত শত টন মৎস বিদেশ রফতানির করে সরকারের রাজস্ব ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে। নৌপরিবহনেও হাতিয়া চ্যানেল অতি গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া স্বর্ণদ্বীপ, ভাসানচর ও নিঝুমদ্বীপের কারণে এখানকার নৌরুট ক্রমান্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এখানে একটি আধুনিক নৌবন্দর স্থাপন করা যেতে পরে। এছাড়া সমুদ্র গবেষণার মাধ্যমে সাগরের অফুরন্ত সম্পদ আহরণ করা যাবে।
পর্যাপ্ত ভূমি, সড়ক ও নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় বর্তমান সরকার মেঘনা ও বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী জেলায় শিল্পকারখানা স্থাপনে গুরুত্ব প্রদান করেছে। উদ্দেশ্য, বাংলাদেশকে স্বনির্ভর ও একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করা। যার ধারাবাহিকতায় ফেনীর সোনাগাজী ও চট্টগ্রামের মীরসরাইতে ৩০ হাজার এক ভ‚মিতে বিশাল আয়তনের ’বঙ্গবন্ধু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে তোলা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মহেশখালীতে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। এক্ষেত্রে হাতিয়া ও সুবর্ণচরের বিশাল ভ‚মি শিল্পকারখানা স্থাপনে উপযোগী।
দেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ফসলি জমি ও শিল্প কারখানা স্থাপনে ভ‚মি ক্রমান্বয়ে সঙ্কুচিত হচ্ছে। অপরদিকে হাতিয়া উপজেলার আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা দেশের জন্য সুখবর বটে। জানতে চাইলে হাতিয়ার সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ইনকিলাবকে জানান, দেশের জন্য অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে হাতিয়া অঞ্চল। অফুরন্ত সম্পদ রয়েছে এখানে। পরিকল্পিতভাবে এসব সম্ভাবনাময় সম্পদের সদ্বব্যবহার এখন সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, হাতিয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতদ্বঞ্চলের উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। পুরো হাতিয়াকে নদীভাঙন রোধকল্পে ইতিমধ্যে একনেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। হাতিয়া আসনের এমপি আয়েশা ফেরদাউস ইনকিলাবকে জানান, বিশাল আয়তনের হাতিয়া উপজেলা দেশের জন্য আশীর্বাদস্বরুপ। হাতিয়ার উপজেলার চতুর্দিকে আরও বিশাল ভ‚মি জাগছে যেটা হবে দেশের জন্য আরেক বিস্ময়। হাতিয়াকে জেলা ঘোষণার লক্ষে আমি কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ের আলোকে সু-বিবেচনা করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।