Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রথম আচরণবিধি লঙ্ঘনের শত অভিযোগ

দুই সিটিতে ১৪ মেয়র প্রার্থীসহ ১০৩৯টি মনোনয়নপত্র জমা

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:২২ এএম

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ তিন পদে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩৯ টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এদের মধ্যে মেয়র পদে ১৪ জন প্রার্থী মনোয়নপত্র দাখিল করেছেন। গত কয়েকদিনে দুই সিটিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ২ হাজার ২৬০ জন। অন্যদিকে বিএনপির প্রাথীদের কতজন লোক নেয়া হয়েছে তা মেয়র প্রার্থীদের কাছ থেকে জানতে চায় উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা।
গত সোমবার থেকে সরকারি দলের প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মনোনয়ন গ্রহণ ও জমার বিষয়ে অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমন কি অভিযোগ তদন্তে কোনো ধরনের কমিটিও গঠন করা হয়নি। অন্যদিকে গতকাল থেকে ম্যাজিস্ট্রট নিয়োগ দেওয়া হলেও তেমন কোন কাজ হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউশন (ইটিআই) ভবনে উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেমের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের সঙ্গে শতাধিক নেতাকর্মী আসেন। তাদের ছোট একটা অংশ ইটিআই ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। নেতাকর্মীদের বড় অংশ ইটিআই ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। ইটিআই ভবনে প্রবেশ করতে তার নেতাকর্মীদের কেউ কেউ জোর করে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন গেটে দায়িত্বরত পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। ঘটনাস্থলে অবস্থান করে দেখা যায়, রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষেও অতিরিক্ত লোকজন নিয়ে প্রবেশ করেন মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। তখন তাদের লোকজনই ৫ জন ভেতরে থেকে বাকিদের বাইরে বেরিয়ে যেতে বলেন। বলার পরও ৫ জনের বেশি লোক দেখা যায় কক্ষে।
এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভেতরেই সংবাদ সম্মেলন করেন আতিকুল। তখনও তার সঙ্গে ৫ জনের বেশি লোকজন অবস্থান করেন। এমন কি এক প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেও ফেলেন তার সঙ্গে অতিরিক্ত লোক রয়েছে। আতিকুল ইসলাম বলেন, এখানে আমাদের আওয়ামী লীগের সভাপতি আছেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের বজলুর, এস এম মান্নান কচি আছেন এবং আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরাও আছেন এখানে। এরকম পরিস্থিতি সংবাদ সম্মেলনেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এখানে এসেছি পাঁচজন। বাইরে থাকলেও কোনো শোডাউন হয়নি। তখন এক সাংবাদিক বলেন, স্লোগান হয়েছে। উত্তরে এই মেয়রপ্রার্থী বলেন, যখন হয়েছে, তখন সাথে সাথে বন্ধ করে দিয়েছি।
আমরা চেষ্টা করেছি, মাস পিপলের মধ্য থেকে আমরা একটা কন্ট্রোলের মধ্য থেকে নিয়ে এসেছি। এ ছাড়াও আজকে শুধু আমি না, আমাদের অনেক কাউন্সিলরও কিন্তু ফরম জমা দিচ্ছে। ইট ইস নট অনলি ফর মি’, যোগ করেন আতিকুল। একজন নির্বাচন কমিশনার প্রার্থীদের শোডাউনের কারণে যানজটে আটকা পড়েন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম বলেন, ১ হাজার জন প্রার্থী ৫ জন করে নিয়ে এলেও ৫ হাজার জন হয়। তবে আমরা তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা রেখেছি। অনেকে ৫ জনও না এনে তিনজন নিয়ে এসেছে। তার দাবি, কেউ আচরনবিধি লঙ্ঘন করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১১ নম্বর ধারায় বলা আছে, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় কোনো প্রকার মিছিল কিংবা শো-ডাউন করা যাইবে না বা প্রার্থী ৫ জনের অধিক সমর্থক লইয়া মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন না। শাস্তি বিষয়ে এই বিধিমালার ৩০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচন-প‚র্ব সময়ে এই বিধিমালার বিধান লঙ্ঘন করিলে অনধিক ৬ মাস কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন।
দুই সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর থেকে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ২৬০টি মনোনয়নপত্র বিতরণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে উত্তর সিটিতে এক হাজার ১৫টি এবং দক্ষিণ সিটিতে এক হাজার ২৪৫টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। উত্তরে মেয়র পদে ১০ জন এবং দক্ষিণে ৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। দুই সিটিতে মেয়র পদে সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দলটির চারজন মেয়র পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। তাদের মধ্যে দক্ষিণে হাজী মো. সেলিম ও শেখ ফজলে ন‚র তাপস। উত্তরে মো. আতিকুল ইসলাম ও সালাউদ্দিন। আওয়ামী লীগ থেকে উত্তরে আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণে শেখ ফজলে নূর তাপসকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
দক্ষিণে অন্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন- বিএনপির ইশরাক হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আবদুর রহমান, পিডিপির মো. বাহারানে সুলতান বাহার, জাতীয় পার্টির মো. সাইফুদ্দিন ও স্বতন্ত্র আব্দুস সামাদ সুজন। উত্তরে মেয়রপ্রার্থীরা হলেন- বিএনপির তাবিথ আউয়াল, গণফ্রন্টের কাজী মো. শহীদুল্লাহ, জাতীয় পার্টির জি এম কামরুল ইসলাম, স্বতন্ত্র স্বাধীন আক্তার আইরিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ, পিডিপির শাহীন খান, এনপিপির মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আহম্মেদ সাজ্জাদুল হক। দক্ষিণ সিটি স‚ত্র জানায়, মেয়র পদে আটজন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ১৯০ জন ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে এক হাজার ৪৭ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। উত্তর সিটি স‚ত্র জানায়, মেয়র পদে ১০ জন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ১৭৭ এবং সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে ৮২৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি এবং প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ১০ জানুয়ারি। এছাড়া ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত ৩০ জানুয়ারি।
##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ