Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী চান না প্রধানমন্ত্রী’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) তুলে দিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন দেশের শিক্ষাবিদেরা। কোমলমতি শিশুদের ওপর পরীক্ষার সময় যে চাপ তৈরি হয়, সেটিকে ‘বিভীষিকা’ উল্লেখ করে শিশুদের কৈশোরের আনন্দ ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানিয়ে আসছেন শিক্ষাবিদেরা। বিভিন্ন মহল থেকে উঠা দাবির প্রেক্ষিতে অবশেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী থেকে সরে আসার ইঙ্গিত মিলেছে সরকারের পক্ষ থেকে। যদিও এতদিন সরকারের যুক্তি ছিল, পিএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় এবং পরীক্ষার ভীতি দূর হয়।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর বিকল্প ভাবতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পরীক্ষার নামে বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষা দিতে দিতে বাচ্চারা ক্লান্ত। পরীক্ষা কোমলমতি বাচ্চাদের শেষ করে দিচ্ছে। এখান থেকে বেরিয়ে এসে বিকল্প কিছু বের করতে হবে। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, পিএসসি তুলে নেওয়া ও তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখার বিষয়টি আলোচনায় আসে ‘ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ’ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময়। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাচ্চাদের কাঁধে অনেক বেশি বই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাচ্চাদের ওপর বইরে বোঝা কমাতে হবে। পিএসসি না নিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে আলোচনা হচ্ছে। আমিও একমত এই পরীক্ষা না নিতে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। পরীক্ষা হবে; তবে সেটি স্কুলের দৈনন্দিন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। সেখানেই মার্কিং হবে। বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশে প্রথমবারের মতো প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী বা পিএসসি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

গতকালের একনেক সভায় আলোচনায় উঠে আসে, অস্ট্রেলিয়ার নাম। দেশটিতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হয় না। ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখার কথা বলা হয়েছিল। যদিও মন্ত্রণালয় থেকে সেটি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা রাখার প্রয়োজন নেই। বিদ্যালয়ে দৈনন্দিন পরীক্ষা কার্যক্রম চলতে পারে। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, পড়াশোনার চেয়ে বাচ্চাদের বেশি করে খেলাধুলার দিকে নজর দেওয়ার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করার কথাও বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী কোমলমতি শিশুদের বইয়ের ভার কমাতে বলেছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পিএসসি পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিন বছর আগে ২০১৬ সালে একবার আলোচনা হয়েছিল সরকারের মধ্যে। তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার পিএসসি পরীক্ষা তুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। যদিও পরে তা কার্যকর হয়নি। এদিন একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী পিএসসির পরিবর্তে বিকল্প কি হতে পারে সেটি নিয়ে ভাবতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ বিষয়ে আরও নতুন নতুন চিন্তা ভাবনা করার জন্য। শিশুদেরকে বই ও পরীক্ষার চাপ থেকে মুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে তারা যাতে খেলাধুলা করতে পারে। আনন্দে থাকতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, পিএসসি নিয়ে দুইটা পক্ষ আছে। কেউ বলছেন, ভালো। আবার কেউ বলছেন ভালো নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পরীক্ষার বিকল্প ভাবতে।

গতকালের একনেক সভায় ঢাকা মহানগরীর ১৫৪টি বিদ্যালয়ের দুই হাজার ৯৭৫টি কক্ষ নতুনভাবে নির্মাণ উত্তরাতে তিনটি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও পূর্বাচলে নতুন করে ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে এক হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এই টাকা যোগান দেওয়া হবে। ২০২৪ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ