Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গৃহবধূ যেভাবে অভাবের জাল ভেদ করলেন

ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে সবার দৃষ্টিতে মডেল

মোশফিকুর রহমান, নীলফামারী থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

অভাব নামক শব্দটি চার সদস্যের সংসারকে রীতিমত অক্টোপাসের জড়িয়ে রেখেছিল। এমন অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য দিনের পর দিন চেষ্টা করেও সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারেননি পরিবারের দুই অভিভাবক স্বামী-স্ত্রী। অনেক কষ্টের পর সফলতা ধরা দিয়েছে। 

আর সে কাহিনীই বললেন নীলফামারী সদর উপজেলার ইটা ফকিরপাড়ার গৃহবধূ মুন্নি বেগম। তিনি জানালেন, গরু ও ছাগল পালন শুরুর পর থেকে সংসারে সুদিনের বাতাস লাগে। এক সময়ের অভাব অনটনের সংসারে এখন মুন্নি বেগম ৩৫টি গবাদি পশুর মালিক।
মুন্নি বেগমের স্বামীর নাম মাহমুদুল হাসান। পেশায় কৃষি শ্রমিক। তিনি জানান, স্বামীর একার রোজগারে দুই বেলা তারা ভালো ভাবে খেতে পারতেন না। চার সদস্যের সংসারে নিত্য সঙ্গী ছিল অভাব অনটন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়ায় মুসলিম এইড বাংলাদেশ নামের একটি বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা।
গ্রামের এক প্রতিবেশির পরার্মশে মুন্নি বেগম স্বামীর সাথে আলোচনা করে সংস্থাটির সদস্য হন। প্রথমে স্বামী ভেবেছিলেন বাড়ির বৌয়ের পক্ষে কি সম্ভব হবে গরু-ছাগল পালন করা? স্বামীকে বুঝিয়ে তিনি সামনের দিকে পা বাড়ান।
এরপর ২০১২সালের ২৪ নভেম্বর সংস্থা থেকে প্রথমে ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করেন। এই টাকা দিয়ে এক জোড়া ছাগল কিনেন। পরের বছর আরো ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি গাভী কিনেন। বছরের চাকা ঘুরতেই ছাগল ও গাভী বাচ্চা দেয়া শুরু করে। সেই বাচ্চা বিক্রি করে ওই সংস্থা থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করেন মুন্নি বেগম। ঋণ পরিশোধ করায় সংস্থা থেকে আরো বেশি টাকা নিয়ে গবাদি পশুর সংখ্যা বাড়াতে থাকেন।
এভাবে প্রতিবছর ঋণের সাথে মুন্নি বেগমের সংসারে বাড়তে থাকে ছাগল ও গাভীর সংখ্যা। দশ দফায় তিনি সংস্থা থেকে মোট ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। বর্তমানে তার পাঁচটি গরু ও ৩১টি ছাগল রয়েছে। স্বামী-স্ত্রী মিলে এখন এসব গবাদি পশু লালন পালন করছেন।
মুন্নি বেগম জানান, এখন তাদের সংসারে অভাব নেই। গরু-ছাগল পালন করে বাড়ির জায়গায় নতুন দু’টি ঘর তুলেছেন। ছেলে-মেয়ে স্কুলে লেখাপড়া করছে। এছাড়া ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করে সংসার চালানোর পরেও তাদের প্রতিবছর বেশ কিছু টাকা সঞ্চয় থাকে।
মুসলিম এইড রংপুর সদর শাখার ব্যবস্থাপক সোহরাব হুসাইন জানান, এক সময়ের দরিদ্র মুন্নি বেগম এখন একজন সফল খামারি। গবাদি পশু পালন করে তিনি একজন নারী হয়েও ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে এলাকায় সবার দৃষ্টি কেড়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ