Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দালালদের ধোকায় যেন কেউ না পড়েন : প্রধানমন্ত্রী

বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতারণা ঠেকাতে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দালাল চক্রের অসততা সম্পর্কে পূণরায় বিদেশ গমনেচ্ছুদের সতর্ক করে দিয়ে যেসব দেশে প্রবাসী শ্রমিকরা প্রতারণার শিকার হন সেসব দেশকে এর প্রতিকারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অনুরোধ করবো যেসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, সেসব এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে, যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
গতকাল আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আহ্বান জানাবো বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা আছে, সকলকে-কেউ যেন দালালদের ধোকায় না পড়ে। আর এই ধোকায় পড়ে কেউ কেউ তাদের ছেলে-মেয়ে এমনকি বিয়ে করা স্ত্রীকেও বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। এমনকি বিক্রিও করে দেয় অনেক স্বামী তার স্ত্রীকে। এরকমও অনেক ঘটনা আমরা পেয়েছি, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি কিছু কিছু দালালের খপ্পড়ে পড়ে যায় আমাদের গ্রাম বাংলার মানুষ। তাদেরকে এরা বিদেশে পাঠিয়ে সোনার হরিণ ধরার স্বপ্ন দেখায় এবং অনেকে সর্বস্ব বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমায়। বর্তমানে বিদেশ গমনেচ্ছুদের জন্য প্রদত্ত সুযোগ সুবিধার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ আছে, কোথায় চাকরি করবে যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ রয়েছে। যে দেশে যাবে সেখানে চাকরির অবস্থা, বেতনের ব্যবস্থা সম্পর্কে জানার সুযোগ রয়েছে এমনকি তাদেরকে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে দক্ষ কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা এবং ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’ কে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যে যে জায়গায় যতগুলো ট্রেনিং হয় তার ওপরেও একটু নজরদারি করে উপযুক্ত ট্রেনিং যাতে তারা পায় এবং ভাষা শিক্ষার ওপরও আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৪১টি কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আরও ৫০টি টিটিসি নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ৪৯৩টি উপজেলাতেই এটি করে দেওয়া হবে।
প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারের মনিটরিং জোরদারের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রেনিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা নজরদারি বৃদ্ধি করেছি কারণ মাঝে মাঝে দেখতাম অনেকে ট্রেনিংয়ের নামে যেত, কিন্তু ট্রেনিং নিত না। কিন্তু সেটা এখন নিতে হবে। এখন প্রশিক্ষণটা বাধ্যতামূলক। আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বলবো-এটার ওপর আরো গভীরভাবে নজর দিতে। যেন সঠিক ট্রেনিংটা নিয়েই সকলে প্রবাসের কর্মক্ষেত্রে যায়। নইলে তারা নানা ধরনের নির্যাতনেরও শিকার হয়।

জনশক্তি রপ্তানীতে যুক্ত সংস্থাগুলোকে তিনি পুনরায় সতর্ক করে বলেন, আমাদের রিক্রুটিং এজেন্সীগুলোকেও বলবো তারা শুধু নিজেদের অর্থ উপার্জনের জন্য অযথা কর্মীদের বিদেশে যেন না পাঠায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশ গমনেচ্ছু নারী কর্মীদের জন্য সিমের ব্যবস্থা সরকার করেছে। যাতে মোবাইল ফোনে তারা দেশে যোগাযোগ করতে পারে।
সরকার প্রধান বলেন, সরকার যে স্মার্ট কার্ড দিচ্ছে তা বিদেশ গমনকালে যেমন হয়রানি দূর করবে তেমনি দেশে ফেরার সময়ও বিমানবন্দরের হয়রানি দূর করবে। বিমানবন্দরে কর্মরত একশ্রেণীর কর্মচারীর মানসিকতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিমানবন্দরে এমন কিছু কর্মচারী থাকে যারা বিদেশ ফেরত কর্মী দেখলেই কিছু টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বা এই ধরণের প্রবনতাটা লক্ষ্য করা যায়। প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে আলাদা ডেস্কের ব্যবস্থা সরকার করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে সিসি ক্যামেরা এবং সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করা হবে। যাতে প্রবাস থেকে ফিরতে গিয়ে কেউ বিমানবন্দরে কোনরকম হয়রানির শিকার না হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট কার্ডে রেকর্ড থাকার কারণে বিমানবন্দরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্মীর এমবারকেশন কার্ড প্রিন্ট হওয়ার ফলে বিমানবন্দরে কর্মীদের হয়রানি অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে।
তিনি বলেন, ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট চালুর উদ্যোগসহ বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে নিজস্ব উদ্যোগে নির্মিত ভবনে প্রবাসী কর্মীদের জন্য সবরকমের সুযোগ-সুবিধা রাখায় বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টাও তুলে ধরেন সরকার প্রধান।

একইসঙ্গেএ বছর থেকে বিদেশগামী কর্মীদের স্বল্প খরচে বীমার আওতাভুক্ত করা হচ্ছে। এ বীমার পলিসি মূল্যের অর্ধেক সরকার থেকে প্রদান করা হচ্ছে। আশা করা যায় এতে প্রবাসী কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি সকলকে এইটুকুই বলবো আমাদের দেশের ভাবমূতি বিদেশে উজ্জ্বল রাখার জন্য যারাই বিদেশে কাজ করবেন আর যারাই বিদেশে কর্মী প্রেরণ করবেন তারা সবসময় যতœবান হবেন।
প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা’র (আইওএম) বাংলাদেশের মিশন প্রধান জর্জি জিগাউরি এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সী (বায়রা) সভাপতি বেনজির আহমেদ এমপি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ