পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘গত দুইদিন থাকি যে শীত বাহে ঘরত (ঘর) থাকি বেরের পাংনা (পারি না)। হামার তিস্তা পারত খুব ঠান্ডা। দুই দিন থাকি কাজ নাই ছোয়াপোয়া (ছেলে-মেয়ে) নিয়া নাখেয়া আচুং। হামাক কায় দেখে।’ হাড় কাঁপানো শীতে একেবারেই কাহিল হয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের তিস্তা পারের বাসিন্দা জোনাব আলী (৪৫)। তিনি ছাড়াও তীব্র শৈত্য প্রবাহে কাজে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন দিনমজুর, শ্রমিকসহ নি¤œ আয়ের মানুষেরা। স্থবিরতা নেমে এসেছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায়। শিশু ও বৃদ্ধরা একেবারেই জবুথবু হয়ে পড়েছে। তীব্রতা চরম আকার ধারণ করলেও এখন পর্যন্ত দুঃস্থদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণের তেমন কোন খবর পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যেই ঠান্ডাজনিত রোগ ব্যাধি দেখা দিয়েছে। হাসপাতালগুলোতে বেড়ে চলেছে নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়া, আমাশয়, হাঁপানি, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা। খামারিরাও চরম বেকায়দায় পড়েছেন গরু-ছাগল নিয়ে।
রাজশাহী : রাজশাহীতে গত চার দিনের প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমছে। এ তাপমাত্রা আরও কমবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাজশাহী আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গতকাল ভোরে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে ভোগান্তিতে খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। সকাল থেকেই বাহিরে যেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষের। এছাড়াও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।
বরিশাল : মৌসুমের সর্বনি¤œ তাপত্রায় বিপর্যস্ত দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন। তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিচে নামার সাথে উত্তর ও উত্তর-পূর্বের হিমেল হাওয়ায় কৃষি এবং জনস্বাস্থ্যে ঝুঁকি বাড়ছে। বরিশালে গতকাল বৃহস্পতিবার তাপমাত্রার পারদ ১২ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যায়। অথচ ডিসেম্বরে বরিশালে স্বাভাবিক সর্বনি¤œ তাপমাত্রা থাকার কথা ১৩.৩ ডিগ্রী। বৃহস্পতিবার বরিশালের আকাশে সূর্য উকি মারে সকাল ১০টারও পরে। হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশায় সড়ক এবং নৌ-যোগাযোগের জন্য ঝুঁকি বৃদ্ধির সাথে রবি ফসলের উৎপাদন ও গুনগত মান ক্ষতিগ্রস্থ হবারও আশঙ্কা বাড়ছে।
এদিকে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় বোরো বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন সকালে বোরো বীজতলাতে লাঠি দিয়ে চারার গায়ে জমে থাকা শিশির ছাড়িয়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা। তবে এ শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত থাকলে নিউমোনিয়া ও টাইফয়েড ছাড়াও ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ এসময়ে বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে বলে জানিয়ে শিশু ও বয়স্কদের যথাযথ শীতবস্ত্র ব্যবহারেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
রংপুর : দু’দিন ধরে শৈত্য প্রবাহে একেবারেই কাহিল হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। স্থবিরতা নেমে এসেছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। গতকাল সকালে কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশার কারনে ১৫/২০ ফুট দূরের কোন বস্তুকে দেখা যাচ্ছে না। শিশু ও বৃদ্ধরা একেবারেই কাহিল হয়ে পড়েছে। কাজে বের হতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে দিনমজুর ও শ্রমিকরা। শীতের তীব্রতা চরম আকার ধারণ করলেও এখন পর্যন্ত দুঃস্থদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরনের তেমন কোন খবর পাওয়া যায়নি। তীব্র শীতের কারনে ইতোমধ্যেই শীত জনিত রোগ ব্যাধি দেখা দিয়েছে। খামারিরাও চরম বেকায়দায় পড়েছেন গরু-ছাগল নিয়ে।
মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা : মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল ভোরে হঠাৎ করেই নেমে গেছে তাপমাত্রা। সকাল ৬টায় এই দুই জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস। গতকাল ভোর থেকে তীব্র শীতে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার মানুষের জবুথবু অবস্থা হয়। খেটে খাওয়া মানুষ ও শ্রমিকরা অন্যদিনের মতো রাস্তায় বের হননি। দু-চারজন যারা কাজের সন্ধানে বের হয়েছিলেন তাদের কষ্টের সীমা ছিল না। শীত নিবারণে গরম পোশাকের পাশাপাশি আগুন পোহাতে দেখা গেছে বস্তির বাসিন্দাদের।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত কিছুটা কমলেও বিকেলের পর থেকে আবার বাড়ে শীত ও বাতাসের তীব্রতা। শীতের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী, পথচারী থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ।
পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। কনকনে শীতে দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নম‚ল আর খেটে খাওয়া মানুষের। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে স্থানীয়দের।
নীলফামারী : নীলফামারীতে হাড় কাঁপানো শীত আর হিমেল বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছে এ জনপদের দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষজন। তীব্র শীতে মানুষজনের পাশাপাশি গবাদি পশুও জবুথবু হয়ে পড়েছে। গতকাল সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র ও ছিন্নমূল লোকজন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছেনা। দুপুরের পর থেকে পুরো জনপদে তাপমাত্রা কমতে থাকে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরাই আক্রান্ত হচ্ছে শীতজনিত নানা রোগে। জেলার চরাঞ্চলসহ নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষগুলো ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে। দূরপাল্লার গাড়িগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যায়। খেটে খাওয়া মানুষগুলো কাজে যেতে না পারায় পড়েছে চরম বিপাকে। তাই এ জনপদের মানুষ শীতে কষ্ট লাঘবে শীতবস্ত্রসহ গরম কাপড় সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।
নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় শীত বাড়ায় গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় করছে লোকজন। বেশি ভিড় করছেন ফুটপাতের পুরোনো কাপড়ের দোকানে। কেউ কেউ শীতের পিঠা খেতেও দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। সকাল থেকেই স‚র্যের দেখা মেলেনি বললেই চলে।
লালমনিরহাট : পৌষের শুরুতেই উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে মানুষ। গত তিন দিনে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। মাঝরাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। বৃষ্টির মতো শিশির ঝড়ছে। এতে তিস্তার চরাঞ্চলের লোকজন কাজে বের হতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : শীতে কাপছে সুন্দরগঞ্জ বাসী। গরম কাপড়ের দোকানে উপছে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে সর্বত্র কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে এলাকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা। গত তিন দিন থেকে সূর্যের দেখা মিলছে না। খেটে খাওয়া মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কনকনে ঠান্ডায় বৃদ্ধ ও শিশুদের মাঝে ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শীতকালিন ফসল সরিষা, গম, আলু, বেগুন, পিয়াজ, মরিচ ও বোরো ধানের বীজতলায় শীত রোগ আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত কম্বল চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
গফরগাঁও : গফরগাঁয়ে প্রচন্ড এই শীতে শিশু ও বয়স্করা কাবু হয়ে পড়েছে সবচেয়ে বেশি। শীতের তীব্রতায় কাহিল হয়ে পড়েছে গরীব শ্রেণির মানুষ। বিগত বছরগুলোতে সরকারিভাবে না মিললেও বিভিন্ন সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান কিছু কিছু শীত বস্ত্র বিতরণ করতো। কিন্তু এবার তেমনটি পরিলক্ষিত হয়নি। কুয়াশার কারণে গত কয়েকদিন ধরে লোকাল, মেইল ও আন্তঃনগর ট্রেন কুয়াশার কারণে বিলম্ব হচ্ছে । ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।