পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সীমান্তবর্তী টেকনাফ থেকে উদ্ধার হয়েছে আট লাখ ১০ হাজার ইয়াবার চালান। সাথে পাওয়া গেছে দেশি-বিদেশি ছয়টি অস্ত্র। পাকড়াও করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদকের কারবারিসহ চারজনকে। তার আগে চট্টগ্রাম নগরীর বড়পুলে ধরা পড়ে ষোল কোটি টাকার কোকেন। সম্প্রতি র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অভিযানে ওই দুটি বড় চালানের মতো বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিদিনই ধরা পড়ছে মাদকের ছোট বড় চালান।
ধরপাকড়ের মধ্যেও সীমান্ত পথে আসছে মাদকদ্রব্য। নেশার নীল ছোবলে ধ্বংসের পথে তরুণ সমাজ। নেশা আসক্তের সাথে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। পাড়ায়-মহল্লায় গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। সর্বনাশা মাদকে পরিবার ও সমাজে বাড়ছে অস্থিরতা। মাদকের নীল ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য পরিবার। আবার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে অস্ত্রবাজি ও খুন-খারাবির ঘটনাও ঘটছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযানের মুখে ভয়াবহতা কমলেও মাদকের বিস্তার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গেল বছরের মে মাস থেকে টানা ১৯ মাসের অভিযানে চার শতাধিক মাদক কারবারি কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। আত্মসমর্পণ করেছেন শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী। গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন অনেকে। তবে ইয়াবাসহ মাদকের গডফাদারদের বেশিরভাগই থেকে গেছেন আড়ালে। ফলে মাদক বিরোধী যুদ্ধে তেমন সাফল্য আসছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলমান অভিযানেও কমছে না মাদকের আগ্রাসন। নিত্যনতুন কৌশলে দেশে আসছে মাদকদ্রব্য। অভিযানের মুখে ইয়াবার রুট বদল হয়েছে। মিয়ানমার থেকে ভারত হয়ে দেশে ঢুকছে রঙিন এই নেশার ট্যাবলেট। ভারত থেকে আসছে ফেনসিডিল, গাঁজাসহ হরেক মাদক। সাগর পথে আসছে বিদেশি মদ, হেরোইন, কোকেন। পাহাড়ে তৈরি দেশি মদের জোয়ারও থেমে নেই।
দেশে ইয়াবা, ফেনসিডিল তৈরি হয় না। ইয়াবা আসে মিয়ানমার থেকে, আর ভারত থেকে আসে ফেনসিডিল। বাংলাদেশকে টার্গেট করে মিয়ানমার সীমান্তে গড়ে উঠা ছোট-বড় অর্ধশত কারখানায় তৈরি ইয়াবা ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। জানা যায়, সাঁড়াশি অভিযানের পর টেকনাফের নাফ নদীকে আর নিরাপদ মনে করছে না মাদকের কারবারিরা। তারা ওই পয়েন্টের বদলে নতুন নতুন রুটে ইয়াবা পাচার করছে। মিয়ানামার থেকে সরাসরি ভারতে গিয়ে সেই চালান দেশে ঢুকছে বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঢাকায় দশ হাজার ইয়াবাসহ এক ভারতীয়কে আটকের পর নতুন এই রুট সম্পর্কে ধারণা পায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী।
মিয়ানমার থেকে সরাসরি সাগর পথে ইয়াবা পাচারের সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও র্যাবের অভিযানে বড় বড় অনেক চালান ধরা পড়ে। এখন শীতকাল হওয়ায় সাগর শান্ত রয়েছে। আর এ সুযোগে আবারও বড় চালান দেশে আসতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় অন্তত ২০ জন মাদক কারবারি মারা গেছে। কথিত বন্দুকযুদ্ধে কক্সবাজারেই মারা গেছে প্রায় ৯০ জন। প্রতিদিনই টেকনাফ, উখিয়ায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটছে। পুলিশের হিসাবে ওই জেলায় মাদক কারবারির সংখ্যা ১১৫১ জন।
তাদের মধ্যে গডফাদার হিসাবে চিহ্নিত ৭৩। গেল ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩০ জন গডফাদারসহ ১০২ জন আত্মসমর্পণ করেন। তবে কক্সবাজার থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম হয়ে রাজধানী ঢাকায় তৎপর ইয়াবা সিন্ডিকেটের হোতাদের অনেকে এখনও আড়ালে থেকে গেছে। তারা এখনও পুরো ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। মাদক ব্যবসার সাথে একশ্রেণির জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তা জড়িত। আর এই কারণে পাচারকারিদের নেটওয়ার্ক ভাঙা যাচ্ছে না। অভিযানে যারা ধরা ও মারা পড়ছে তাদের বেশিরভাগই মাদক বহনকারী অথবা ক্ষুদে ব্যাপারী।
এদিকে অভিযানের মধ্যেও মাদকের চালান ধরা পড়ছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শুধু র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ৬২ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৮ পিস ইয়াবা। এ সময় ২৯ হাজার ৮০১ বোতল ফেনসিডিল, সাত হাজার ৭৯৪ বোতল বিদেশী মদ ও বিয়ার উদ্ধার হয়। অন্যদিকে এক কোটি ২৫ হাজার ১২৫ লিটার দেশি মদ, এক হাজার ৬১৮ কেজি গাঁজা, সোয়া সাত কেজি আফিম এবং তিন কেজি হেরোইন, এককেজি কোকেন উদ্ধার হয়েছে। মহানগর ও জেলা পুলিশের অভিযানেও প্রায় সম পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়েছে।
আগে বড় বড় চালান ধরা পড়লেও এখন ছোট ছোট চালান ধরা পড়ছে। র্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, পাচারকারীরা তাদের কৌশল পাল্টে ছোট ছোট চালানে মাদক পাচার করছে। চলমান অভিযানে নগরীর বেশ কয়েকটি মাদকের আখড়া গুঁড়িয়ে দেয় র্যাব-পুলিশ। এসব আখড়ায় প্রকাশ্যে মাদকের হাট বসতো। জানা গেছে, হাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নেশাগ্রস্তরা এখন অনলাইনে মাদক কিনছেন। পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর মোবাইলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। মোবাইলে ফোন দেওয়ার পর নির্দিষ্ট স্থানে মাদক পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বলা যায় মাদকের হোম ডেলিভারি চালু হয়েছে।
সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত অভিযান চলবে বলে জানা সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারির চট্টগ্রাম নগর পুলিশের এক অনুষ্ঠানে বলেন, মাদককে আমরা দেশ ছাড়া করবো। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হারিনি। মাদকের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধেও হারবো না। কারণ জনগণ মাদকের বিরুদ্ধে। তিনি মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরও জোরদার করারও নির্দেশনা দেন।
চট্টগ্রাম রেঞ্জ, মহানগর ও জেলা পুলিশ এবং র্যাবের কর্মকর্তাদের দাবি, অভিযানের মুখে মাদক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলেও ভয়াবহতা কমে আসছে। রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, মাদকের উৎস বন্ধ না হওয়ায় আগ্রাসন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে অভিযানের ফলে মাদকের ভয়াবহতা কমে আসছে, মাদক কারবারিরাও দৌঁড়ের উপর আছে। অনেকে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, মাদকের আখড়া গুড়িয়ে দেয়ায় এখন আর প্রকাশ্যে মাদক সেবন হয় না। পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ না হলেও মাদকের বিস্তার কমে আসছে বলেও দাবি করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।