Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাবির শেখ রাসেল স্কুলের নির্মাণ কাজ বন্ধ করল ছাত্রলীগ

৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি

রাবি সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বিজয় দিবস উদযাপনের একদিন আগেই গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নামে নির্মিতব্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ রাসেল স্কুলের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ৩০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে স্কুলের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু এই চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ করেন নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শিকদার কন্সট্রাকশন।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৩০ জুলাই ১০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জুবেরি ভবন মাঠের ১.৩ একর জায়গা জুড়ে শেখ রাসেল স্কুলের চারতলা নতুন ভবন নির্মাণের এই কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিকদার কন্সট্রাকশন।
শিকদার কন্সট্রাকশনের অভিযোগ, শেখ রাসেল স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ গত ৩০ জুলাই শুরুর কয়েকদিন পর থেকেই চাঁদা দাবি করে আসছিলো ছাত্রলীগের নেতারা। আগস্ট মাসের প্রথম দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির সুপারভাইজার মমতাজউদ্দিন ডনের কাছে এই চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু সুপারভাইজার মমতাজউদ্দিন ডন চাঁদা দিতে রাজি হননি।

সুপারভাইজার ডন জানান, সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু এসে প্রশ্ন করেন তাদেরকে না জানিয়ে, তাদের সাথে আলোচনা না করে আমি কেন কাজ শুরু করেছি। এক পর্যায়ে তারা আমার কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তবে আমি প্রথম থেকেই তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর ভাইয়ের নামে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কাজেও আপনারা এমন চাঁদা দাবি করতে পারেন না, বলেও তাদেরকে জানিয়েছি। পরে চাঁদা না দিলে কাজ বন্ধের হুমকি দিয়ে চলে যান তারা। তারপরও আমরা কাজ বন্ধ না করায়, তারা বিভিন্ন উপায়ে কন্সট্রাকশন সাইটে এসে কাজ বন্ধ করে দেবার হুমকি দিয়ে গেছেন। সর্বশেষ গতকাল রোববার দুপুর ২টার দিকে কন্সট্রাকশন কাজের ম্যানেজার আশরাফুল আলমকে ডেকে নিয়ে গিয়ে চাঁদা না দেয়া অবধি কাজ বন্ধ রাখার হুমকি দেয় রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রাসাদ বৃত্তসহ আরো একজন নেতা।
তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ম্যানেজার আশরাফুল আলম জানান, দুপুর ২টার দিকে ছাত্রলীগের দুজন নেতা এসে আমাকে কাজ বন্ধ করতে বলে। আমি কাজ বন্ধ না করায়, আমাকে গালাগালি করে এবং একই সাথে কাজের মালামাল সরবরাহকারি আবু বক্করকে মারতেও উদ্যত হয়। পরবর্তীতে তারা আমাকে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ৩০ টাকা লাখ দিতে না পারলে কী পরিমাণ টাকা দিতে পারব। এ বিষয়ে সমাধান না হওয়া অবধি যেন আমরা কাজ বন্ধ রাখি সে হুমকিও দেয়া হয় আমাকে।

এদিকে শেখ রাসেল স্কুলের নির্মাণ কাজ বন্ধের খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে যান বিশ^বিদ্যালয়ের কয়েকজন সাংবাদিক। সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে নির্মাণ শ্রমিকরা বসে রয়েছেন। সেখানে নির্মাণ শ্রমিকদের প্রধান মিস্ত্রি শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ছাত্রলীগের দুজন নেতা এসে আমাদের ম্যানেজারকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তারা দীর্ঘদিন থেকে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো। কিন্তু চাঁদা না দেয়ায় তারা আজ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জানান, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমরা কন্সট্রাকশন সাইটের কোনো কাজের সাথেই সম্পৃক্ত না। ছাত্রলীগের মর্যাদা নষ্ট করার জন্যেই এই ষড়যন্ত্র করা হয়ে থাকতে পারে।

সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু জানান, এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয়। আর বৃত্তর কথা বলা হচ্ছে আমি কথা বলেছি তার সঙ্গে সে এ ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, গতকাল বিকালে কন্সট্রাকশনে একটি ঝামেলার কথা শুনেছি। তবে চাঁদাবাজি কিনা এখনো জানিনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ