পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভারত সফর আটকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোদি সরকারকে কড়া বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে মনে করছে কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা। গতকাল শুক্রবার ‘বিদেশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর আটকে বার্তা হাসিনার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে পত্রিকাটি। ইন্ডিয়ান ওশিয়ান সংলাপে যোগ দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুপুরের পর হঠাৎ করেই ওই সফর বাতিলের কথা জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে শুক্রবার সকালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার আমন্ত্রণে মেঘালয়ে যাওয়ার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। বৃহস্পতিবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু মন্ত্রীর এই সফর স্থগিতের কথা জানান।
বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর হঠাৎ করেই ভারত সফর বাতিলকে দিল্লির জন্য বার্তা হিসেবেই দেখছে কলকতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। পত্রিকাটি জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তেই শেষ মুহূর্তে দুই মন্ত্রী তাদের সফর বাতিল করেছেন।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- নয়াদিল্লির বিমানে ওঠার কয়েক ঘণ্টা আগে সফর বাতিল করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। ভারত ওশিয়ান সংলাপে যোগ দিতে তিন দিনের এই সফর বাতিলের কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস (১৪ ডিসেম্বর) সামনেই। সেই অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত থাকতে হবে তাঁকে। একই সময়ে ওশিয়ান সংলাপের তারিখ পড়ায় তাঁর ভারত যাওয়া হচ্ছে না। গতকাল শুক্রবার মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার আমন্ত্রণে শিলংয়ে যাওয়ার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরে ‘উপযুক্ত সময়ে’ মন্ত্রী এই সফরে যাবেন।
প্রশ্ন উঠেছে, যে-সব অনুষ্ঠানের কারণ দেখিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সফর বাতিল করা হল, সেগুলো বহু বছর ধরে ওই দিনেই হয়! ওশিয়ান সংলাপের দিনও স্থির হয়েছে মাসখানেক আগে। তা হলে সম্মতি দিয়েও শেষ মুহূর্তে কেন বিমানে উঠলেন না মোমেন? ক‚টনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বুধবার রাতে মোমেন শেখ হাসিনার বাসভবনে দেখা করতে গিয়েই এই নির্দেশ নিয়ে ফিরেছেন। স¤প্রতি সংসদে পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি যে ঢাকার রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিসরে গভীর অসন্তোষ তৈরি করেছে তা, এই সিদ্ধান্তে স্পষ্ট হয়ে গেল। মোদী সরকারকে এতটা কড়া বার্তা দিতে সা¤প্রতিক কালে দেখা যায়নি বলে মনে করছেন ক‚টনীতিকেরা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিল করা এবং সিএবি পাশের বিষয়টিকে পৃথক ভাবে দেখা উচিত বলে জানিয়েছেন। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তৃতা উদ্ধৃত করে রবীশ জানিয়েছেন, অমিত শাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ভারত সরকার মনে করে সামরিক শাসন এবং খালেদা জিয়ার সময়েই সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার ভ‚মিকার প্রশংসাই করেছেন শাহ।
কিন্তু ঘটনার গতি থেকে স্পষ্ট যে বাংলাদেশের অসন্তোষ গভীরে। বৃহস্পতিবার রাতে সিএবি পাশ হওয়ার পর এই মোমেনই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘ভারতের নিজের দেশে অনেক সমস্যা রয়েছে। ওরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করুক, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। বন্ধু দেশ হিসাবে আমরা আশা করছি ভারত এমন কিছু করবে না, যাতে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশের মতো খুব কম দেশই রয়েছে যেখানে এত সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি রয়েছে। উনি (অমিত শাহ) আমাদের দেশে কয়েক মাস থাকলেই দেখতে পাবেন, এখানকার স¤প্রীতি নজির হতে পারে।’’
বাংলাদেশ সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছেন, বিল পাশের সময় যে ভাবে বার বার পাকিস্তানের সঙ্গে একই বন্ধনীতে বাংলাদেশকে রেখে সংখ্যালঘু নিপীড়নের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে, তা শেখ হাসিনা সরকারের জন্য বিড়ম্বনার।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সফর বাতিল করার পর রবীশ বলেছেন, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ এবং মজবুত। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সফর বাতিল এবং নাগরিকত্ব বিল পাশ হওয়া, দু’টি আলাদা ঘটনা। নয়াদিল্লি না আসতে পারার কারণ হিসাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেটিকেই মানা উচিত।’’ পাশাপাশি রবীশ বাংলাদেশকে বার্তা দিতে চেয়ে বলেছেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কি, কিছু বিভ্রান্তি হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে সাফ ব্যাখ্যা করেছেন যে সংখ্যালঘুদের উপর ধর্মীয় উৎপীড়ন বর্তমান সরকারের সময় হয়নি। সে দেশে পূর্ববর্তী সরকার এবং সামরিক শাসনের সময় এটা হয়েছে। বরং বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছেন।’’
ঢাকা সূত্রের বরাতে আরও বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু ও হাসিনার প্রশংসা করার পাশাপাশি অমিত শাহ এ কথাও বলেছেন, ‘‘একাত্তরের পরেও সে-দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।’’ ঢাকা মনে করে, কার সময়ে কী ঘটেছে সেই কাদা বার বার ছোঁড়ায় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সার্বিকভাবে একটি বার্তা গিয়েছে। আওয়ামী লীগের কট্টর ইসলামি অংশকে ভারত-বিরোধিতার জিগির তোলায় উদ্বুদ্ধ করার পক্ষে তা যথেষ্ট। ভারত-বিদ্বেষী প্রচারের ইন্ধন জোগাতে শুরু করেছে বিএনপিও।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যে ক‚টনৈতিক কর্ম-কর্তারা ভারতে গিয়েছিলেন, তাঁদের মতে— আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুসলমানদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের জনমানসে। ঘরোয়া রাজনীতিতে তা শেখ হাসিনার পক্ষে অনুকূল নয়। আওয়ামী লীগের ইসলামপন্থী অংশ ভারত-বিরোধী প্রচার শুরু করলে ভারত-বাংলাদেশ কৌশলগত ও বাণিজ্যিক আদানপ্রদান বাধার মুখে পড়তে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। মাঝখান থেকে চিনের প্রতি নির্ভরতা বাড়বে ঢাকার।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।