পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘বউ ধান ভানেরে ঢেঁকিতে পার দিয়া, আমি নাচি ঢেঁকি নাচে হেলিয়া দুলিয়া।’ গ্রামাঞ্চলে ঢেঁকিতে ধান ভানার সময় তরুণী, নববধূ ও কৃষাণীদের কণ্ঠে এ রকম গান ছিল একেবারে স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু গ্রামের অভ্যন্তরের পথে চলার সময় এখন আর কানে সেই গান ভেসে আসে না।
ধান ভাঙানোর বৈদ্যুতিক কল জেলা থেকে উপজেলা ছাড়িয়ে ইউনিয়ন পর্যন্ত রয়েছে। এর ফলে ঢেঁকিতে ধান ভাঙার সেই ঐতিহ্য প্রায় নেই বললেই চলে। ঢেঁকিতে ছাটা চাল ও বৈদ্যুতিক কলের চালের ভাতের স্বাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
সাধারণত যাদের বয়স পঞ্চাশের ঘর পেরিয়েছে এবং শৈশব কেটেছে গ্রামে, তারাই বলতে পারবেন ঢেঁকিতে ধান ছাটার চালের ভাত কেমন ছিল। তাদের কাছে সেই স্বাদ অনেকটা ইতিহাসের পাতায় ঠাই নিয়েছে। তারপরও এই ঢেঁকি নামেই ঠিকে আছে। কালের বিবর্তনে ঢেঁকি এখন শুধু ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন করে। ঢেঁকি শিল্প বিলুপ্ত হওয়ার পথে থাকলেও একে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গ্রামগুলোতে এখন আর ঢেঁকি দেখা যায় না। আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আগের মতো আর চোখে পড়ে না। এক সময় ঢেঁকি ছিল গ্রামীণ জনপদে চাল ও চালের গুঁড়া বা আটা তৈরির একমাত্র মাধ্যম। অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে কৃষক ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে কৃষাণীদের ঘরে ধান থেকে নতুন চাল ও চালের গুঁড়া করার ধুম পড়ে যেত। সে চাল দিয়ে পিঠা-পুলি, ফিরনি, পায়েস তৈরি করা হতো।
এছাড়াও নবান্ন উৎসব, বিয়ে, ঈদ ও পূজায় ঢেঁকিতে ধান ভেনে আটা তৈরি করা হতো। তখন বউরা ঢেঁকিতে কাজ করত রাত থেকে ভোর পর্যন্ত। ঢেঁকিতে ছাটা আউশ চালের পান্তা ভাত খেতে খুব স্বাদ হতো। মানুষ ঢেঁকিতে ধান ও চাল ভেনে চিড়া-আটা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করত। ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দে মুখরিত ছিল বাংলার জনপদ। কিন্তু এখন ঢেঁকির সেই শব্দ শোনা যায় না। তখন কবি-সাহিত্যিকরা ঢেঁকি নিয়ে কবিতা ও গান লিখেছেন।
বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়ায় কোথাও ঢেঁকির শব্দ নেই। ফলে বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যবাহী কাঠের তৈরি ঢেঁকি। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানেও ঢেঁকির ব্যবহার কমেছে। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কেউ কেউ বাড়িতে ঢেঁকি রাখলেও ব্যবহার করছে না। যন্ত্র আবিষ্কারের আগে ঢেঁকি শিল্পের বেশ কদর ছিল। তেল বা বিদ্যুৎ চালিত মেশিন দিয়ে ধান ও চাল ভানার কারণে ঢেঁকি আজ কদরহীন।
দেশের যে কোনো প্রান্তের গ্রামে ঘুরেও এখন ঢেঁকির দেখা মেলে না। ঢেঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে অনেকেই জানান, আগে প্রায় সবার বাড়িতে ঢেঁকি ছিল। সেই ঢেঁকি ছাটা চাল ও চালের পিঠার গন্ধ এখন আর নেই। পিঠার স্বাদ ও গন্ধ এখনো মনে পড়ে। আধুনিক প্রযুক্তির ফলে গ্রামবাংলায় ঢেঁকির ব্যবহার কমে গেছে। ঢেঁকি বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য। চৌদ্দগ্রামে অনেকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি রক্ষা এবং সংরক্ষণের জন্য সবার সহযোগিতা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।