পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিতর্কের মধ্যেই গত সোমবার ভারতের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে নাগরিক সংশোধনী বিল (সিএবি)। আজ বুধবার এটি তোলা হবে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়। বিলের বিরুদ্ধে গতকাল মঙ্গলবার বিক্ষোভে উত্তাল হল ভারতের আসাম-সহ উত্তর-পূর্বের একাধিক রাজ্য। দেশটির বিরোধী দলের নেতাদের পাশাপাশি এই বিলের নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
গতকাল ভারতের একাধিক জায়গা থেকে বিক্ষোভের খবর সামনে এসেছে। আসামের মালিগাঁও-তে একটি সরকারি বাসে ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি স্কুটি। গুয়াহাটিতে বিধানভবন এবং সেক্রেট্যারিয়ট ভবনের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে খন্ডযুদ্ধ বাধে একদল আন্দোলনকারী। আন্দোলনের জেরে গুয়াহাটিতে সমস্ত সরকারি অফিস বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজও। তাতে বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনের জেরে ট্রেন চলাচলও ব্যাহত হয়েছে। আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে গৌহাটি ইউনিভার্সিটি এবং ডিব্রুগড় ইউনিভার্সিটির সমস্ত পরীক্ষা। আসাম রেলের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিক্ষোভের জেরে একাধিক জায়গায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। কামরূপ জেলার রঙ্গিয়ায় নর্থ-ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলের ডিআরএম-এর দফতরও ঘেরাও করা হয় বলে জানান তিনি।
এদিকে, ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া নাগরিকত্ব বিলের নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। মঙ্গলবার এক টুইটার পোস্টে নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উগ্র হিন্দুত্ববাদী আদর্শের বিষাক্ত মিশ্রণ থেকে এই বিল এসেছে।’ তিনি জানান, এই বিলটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সব বিধি এবং পাকিস্তান-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব চুক্তি ভঙ্গ করেছে। তিনি বলেন, আমরা ভারতীয় লোকসভার নাগরিকত্ব বিলের তীব্র নিন্দা জানানই। যে বিলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও পাকিস্তানের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির সব বিধি ভঙ্গ করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট মোদি সরকার আরএসএসের ‘হিন্দু রাষ্ট্রের’ নকশা বাস্তবায়নে কাজ করছে। এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিলটির নিন্দা জানিয়ে বলেছে, মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক ঘোষণার পুরোপুরি লঙ্ঘন এবং ধর্মীভিত্তিক বৈষম্য দূর করার যে আন্তর্জাতিক চুক্তি সেগুলোও লঙ্ঘিত হয়েছে এই বিলে।
এই বিলের বিরুদ্ধে এ বার সংসদের বাইরেও প্রতিবাদ জানাল কংগ্রেস। দলের সাংসদ রাহুল গান্ধী এ দিন টুইটারে বলেছেন, ‘এটা গণতন্ত্রের উপর হামলা।’ দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর টুইট, ‘পরিকল্পিত ভাবে গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করব।’ লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও যে এই বিলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস তীব্র প্রতিবাদ করবে, দলের পক্ষ থেকে তার ইঙ্গিত আগেই দেয়া হয়েছে।
পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশে ধর্মীয় নিপীড়ণের শিকার অমুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের ভারতের স্থায়ী নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে। তা নিয়ে শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির। তাদের দাবি, পড়শি দেশ থেকে দলে দলে অমুসলিমরা এসে ভিড় জমালে, তাদের জীবনযাত্রায় তার প্রভাব পড়বে। সঙ্কটে পড়বে তাদের সংস্কৃতি।
তার পরেও সোমবার লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হয়ে যায়। তাতেই বিক্ষোভ চরমে উঠেছে। আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা, এই ছয় রাজ্যে এ দিন ভোর ৫টা থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত, টানা ১১ ঘণ্টা একজোটে বনধে ডাক দিয়েছে নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (নেসো)। তাদের সমর্থনে এগিয়ে আসে কংগ্রেস, অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ), অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু), কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি, অল অরুণাচল প্রদেশ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এবং নাগা স্টুডেন্টস-এর মতো সংগঠন।
নেসোর চেয়ারম্যান স্যামুয়েল জিরওয়া সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হয়ে গেলে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে বাংলাদেশ থেকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা দলে দলে এসে ভিড় করবেন। এতে সাধারণ মানুষ এত দিন ধরে যে দাবি-দাওয়া জানিয়ে আসছেন, তাকে অসম্মান জানানো হবে।’ নেসোর পাশাপাশি, এ দিন অসমে ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, এআইএসএফ, আইসা, আইপিটিএ-র মতো ১৬টি বাম সংগঠন। এমন পরিস্থিতিতে গৌহাটি ইউনিভার্সিটি এবং ডিব্রæগড় ইউনিভার্সিটির সমস্ত পরীক্ষা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
অন্য দিকে, এ দিন নাগাল্যান্ডেও বন্ধ পালিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হর্নবিল উৎসবের জন্য শেষ মুহ‚র্তে পিছিয়ে যায় তারা। এক দিন আগে পর্যন্ত নাগরিক সংশোধনী বিলে নিয়ে প্রতিবাদ চালিয়ে গেলেও, বনধে শামিল হয়নি মণিপুরও। সোমবার সংসদে ওই রাজ্যকে ‘ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি)’-র আওতায় আনার ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, যার অর্থ, এ বার থেকে অনুমতি ছাড়া বাইরের কেউ ওই রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না। এই ঘোষণার পরই আন্দোলন গুটিয়ে নেয় মণিপুর পিপল এগেইনস্ট সিএবি (ম্যানপ্যাক) সংগঠন।
বিতর্কীত নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল কার্যকর হলে ভারতে আশ্রয় নেয়া অমুলিম শরণার্থীরা নাগরিকত্ব পাবে। মুসলিমদের বাদ দিয়ে আইনটি করার কারণেই সেটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রস্তাবিত ওই আইনে বলা হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে যে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানরা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর ভারতে গিয়েছেন তাদের বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধরা হবে না। তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়া হবে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত মার্কিন কমিশন ইউএসসিআইআরএফ বলেছে, নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ‘বিপজ্জনকভাবে ভুল দিকে বাঁক নিচ্ছে। যদি ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই এই বিল পাস হয়ে যায় তাহলে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর উপরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার দাবি করা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে।’
বিলটি মন্ত্রী সভায় অনুমোদনের পর সোমবার ৩১১-৮০ ভোটে পাস হয়েছে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায়। আজ সেটি তোলা হবে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়। কমিশন জানিয়েছে, যদি বিলটি সংসদের উভয় কক্ষেই পাস হয়ে যায়, তাহলে মার্কিন সরকারের উচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ অন্যান্য প্রধান নেতাদের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা। ইউএসসিআইআরএফ জানিয়েছে, এই বিলে ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করা হয়েছে। সূত্র : টিওআই, এনডিটিভি, দ্য ডন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।