পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে উচ্চ আসনে নিয়ে যেতে চাই, যেন বিশ্বদরবারে প্রতিটি বাঙালি মাথা উঁচু করে চলতে পারে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ প্রদান শেষে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয়ীদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতে পুরস্কার বিজয়ী শিল্পী ও কলাকুশলীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে একটা সমাজকে জানা যায়, তেমনি সমাজের কাছে বিশেষ কোনও বার্তাও পৌঁছাতে হলে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তা সহজে পৌঁছানো যায়। চলচ্চিত্র সমাজকে সংস্কার করতে পারে, কলুষমুক্ত করতে পারে। আবার কখনও কখনও অপসংস্কৃতি সমাজকে নষ্ট করতে পারে। তাই সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে দেন তিনি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধে সব শহীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্কুলজীবন থেকে বাঙালির শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেছেন। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু। এসময় তিনি বাঙালির শোষিত-বঞ্চিত হওয়ার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংস্থা উন্নয়ন বিল ১৯৫৭ সংসদে উপস্থাপন করেন এবং সেটি পাস হয়। এর মাধ্যমে এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া নানা কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নেন। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির উন্নয়নে তিনি কাজ করেন। এবং তিনি যে সংবিধান দিয়েছেন, সেখানেও সব ধরনের অধিকারের নিশ্চয়তা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এসময় বর্ণনা করেন, কীভাবে ’৭৫-এর হত্যাকাÐের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক জগতে অপসংস্কৃতি নেমে আসে। পরিবার-পরিজন নিয়ে সিনেমা দেখার অবস্থাটাও নষ্ট হয়ে যায়। তবে সেই অশুভ জায়গা থেকে আমরা ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসেছি।
এজন্য সাংস্কৃতিক জগতের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন অনেক বেশি সমাজসংস্কারমূলক ও আবেদনমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়। তবে ডিজিটাল যুগের কারণ জেলা-উপজেলার হলগুলো চালু থাকতে পারছে না। তিনি সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি নিজেও এ ব্যাপারে হলমালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন।
তিনি বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। তাদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য মফস্বলের সিনেমা হলগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। হলগুলোকে ডিজিটাইজড করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য সরকারের তরফে যা যা করা দরকার তা করা হবে। এরই মধ্যে চলচ্চিত্র নীতিমালা ২০১৭, যৌথ প্রযোজনা নীতিমালা ২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬টি যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ৭ নভেম্বর একসঙ্গে ঘোষণা করা হয় ২০১৭ ও ২০১৮ সালের সিনেমার জন্য চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এবার গত দুই বছরের ২৮টি শাখায় ৬৩ জন পুরস্কৃত হচ্ছেন। ২০১৭ সালের জন্য আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন বর্ষীয়ান অভিনয় শিল্পী এটিএম শামসুজ্জামান ও সালমা বেগম সুজাতা। আর ২০১৮ সালের জন্য এ সম্মাননা পাচ্ছেন অভিনেতা প্রবীর মিত্র ও এমএ আলমগীর। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ফেরদৌস ও পূর্ণিমা।
যারা ২০১৭ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তা হলেন: ২০১৭ সালে আজীবন সম্মাননা: এটিএম শামসুজ্জামান ও সালমা বেগম সুজাতা; শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র: ঢাকা অ্যাটাক (কায়সার আহমেদ ও সানী সানোয়ার); শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: বিশ্ব আঙিনায় অমর একুশে (বাংলাদেশ টেলিভিশন); শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক: বদরুল আনাম সৌদ (গহীন বালুচর); শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্র: শাকিব খান (সত্তা) ও আরিফিন শুভ (ঢাকা অ্যাটাক); শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্র: নুসরাত ইমরোজ তিশা (হালদা); শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্র: মো. শাহদাৎ হোসেন (গহীন বালুচর); শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্র: সুবর্ণা মুস্তাফা (গহীন বালুচর) ও রুনা খান (হালদা); শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্র: জাহিদ হাসান (হালদা); শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্র: এম ফজলুর রহমান বাবু (গহীন বালুচর); শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী: নাইমুর রহমান আপন (ছিটকিনি); শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার: অনন্য সামায়েল (আঁখি ও তার বন্ধুরা); শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: এম ফরিদ আহমেদ হাজরা (ফরিদ আহমেদ (তুমি রবে নীরবে)।
শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক: ইভান শাহরিয়ার সোহাগ, (ধ্যাততেরিকি); শ্রেষ্ঠ গায়ক: মাহফুজ আনাম জেমস (তোর প্রেমেতে অন্ধ., চলচ্চিত্র: সত্তা); শ্রেষ্ঠ গায়িকা: মমতাজ বেগম (গান: না জানি কোন অপরাধে., চলচ্চিত্র: সত্তা); শ্রেষ্ঠ গীতিকার: সেজুল হোসেন (গান: না জানি কোন অপরাধে., চলচ্চিত্র: সত্তা); শ্রেষ্ঠ সুরকার: শুভাশীষ মজুমদার বাপ্পা (গান: না জানি কোন অপরাধে., চলচ্চিত্র: সত্তা); শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার: আজাদ বুলবুল (হালদা); শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: তৌকির আহমেদ (হালদা)
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা: বদরুল আনাম সৌদ (গহীন বালুচর); শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: মো. কালাম (ঢাকা অ্যাটাক); শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক: উত্তম কুমার গুহ (গহীন বালুচর); শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: কমল চন্দ্র দাস (গহীন বালুচর); শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: রিপন নাথ (ঢাকা অ্যাটাক); শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা: রিটা হোসেন (তুমি রবে নীরবে); শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান: মো. জাভেদ মিয়া (ঢাকা অ্যাটাক)
২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা: আজীবন সম্মাননা: অভিনেতা প্রবীর মিত্র ও এম এ আলমগীর; শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র: পুত্র (চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর); শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: গল্প সংক্ষেপ (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট); শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক: মোস্তাফিজুর রহমান মানিক (জান্নাত); শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্র: ফেরদৌস আহমেদ (পুত্র) ও সাদিক মো. সাইমন (জান্নাত); শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্র: জয়া আহসান (দেবী); শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্র: আলী রাজ (জান্নাত); শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্র: সুচরিতা (মেঘকন্যা); শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্র: সাদেক বাচ্চু (একটি সিনেমার গল্প); শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্র: মোশাররফ করিম (কমলা রকেট) ও আফজাল শরিফ (পবিত্র ভালোবাসা); শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী: ফাহিম মুহতাসিম লাজিম (পুত্র); শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার: মাহমুদুর রহমান (মাটির প্রজার দেশে); শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: ইমন সাহা (জান্নাত); শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক: মাসুম বাবুল (একটি সিনেমার গল্প); শ্রেষ্ঠ গায়ক: নাইমুল ইসলাম রাতুল (গান: যদি দুঃখ ছুঁয়ে.., চলচ্চিত্র: পুত্র); শ্রেষ্ঠ গায়িকা: সাবিনা ইয়াসমিন (গান: ভুলে মান অভিমান, চলচ্চিত্র: পুত্র) ও আঁখি আলমগীর (গান: গল্প কথার ঐ.., চলচ্চিত্র: একটি সিনেমার গল্প); শ্রেষ্ঠ গীতিকার: কবির বকুল (গান: যদি এভাবেই ভালোবাসা.., চলচ্চিত্র: নায়ক) ও জুলফিকার রাসেল (গান: যদি দুঃখ ছুঁয়ে দেখো.., চলচ্চিত্র: পুত্র); শ্রেষ্ঠ সুরকার: রুনা লায়লা (গান: গল্প কথার ঐ.., চলচ্চিত্র: একটি সিনেমার গল্প); শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার: সুদীপ্ত সাঈদ খান (জান্নাত); শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: সাইফুল ইসলাম মান্নু (পুত্র); শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা: এস এম হারুন-অর-রশীদ (পুত্র); শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: তারিক হোসেন বিদ্যুৎ (পুত্র); শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক: উত্তম কুমার গুহ (একটি সিনেমার গল্প); শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: জেড এইচ মিন্টু (পোস্ট মাস্টার ৭১); শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: আজম বাবু (পুত্র); শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা: সাদিয়া শবনম শানতু (পুত্র); শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান: ফরহাদ রেজা মিলন (দেবী)।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।