পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খেজুরের রস হচ্ছে যশোরের যশ। ঐতিহ্যটি দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। এখন একেবারেই খুঁড়িয়ে চলছে খেজুরের গুড় শিল্পটি। কোনরূপ উদ্যোগ নেই শিল্পটি রক্ষার। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ শীতকাল আসলেই হা-হুতাশ করে থাকেন। চারিদিকে জোরেশোরে উচ্চারিত হয় নানা প্রশ্ন ‘শিল্পটি কী কোনভাবেই বাঁচানো যাবে না, এভাবে শেষ হয়ে যাবে, একটু উদ্যোগ কী নেয়া যায় না, ঐতিহ্য নিয়ে গর্বের জায়গাটা এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে।’-এসবের উত্তর খুঁজে পান না তারা।
শুধু যশোর নয়, একসময় দেশ ছাপিয়ে উপমহাদেশের মধ্যে শীর্ষস্থানের রেকর্ডে গড়ে যশোরের খেজুরের গুড পাটালি। বিশেষ করে নলেন গুড়। ইংল্যান্ডের মি. নিউ হাউজ যশোরের চৌগাছার তাহেরপুরে এসে ১৮৬৪ সালে প্রথম খেজুরের রস থেকে বাদামি চিনি উৎপাদন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। সেই সময় যশোরের আশেপাশে ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইলের বিভিন্ন গ্রামে ক্ষুদ্র শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠে খেজুরের রস থেকে গুড় ও নলেন পাটালির কারখানা। এখন সেসবের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
যশোরের খাজুরা এলাকার বয়োবৃদ্ধ শামসুল আলমসহ বেশ কয়েকজন তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে জানান, খেজুরের রস থেকে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বাদামি চিনি উৎপাদন করে যশোর বিপ্লব সৃষ্টি করে। দিনে দিনে সম্ভাবনার নানা দিক গবেষণা করে সফলতা আসে। কিন্তু বিপ্লবের কিছুদিন পর মুখ থুবড়ে পড়লো কেন তার অনুসন্ধান নেই। গ্রামে গ্রামে ক্ষুদ্র কারখানা যেখানে স্থানীয় পদ্ধতিতে রস জ্বালিয়ে গুড় ও পাটালি তৈরি বহুকাল থেকেই চলে আসছে। বর্তমানে সেটিও মৃত্যুমুখে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারা অন্যান্য বিষয় যেভাবে উপর নীচে যোগাযোগ করে থাকেন, এটির ক্ষেত্রে মোটেও হয় না। কোন নির্দেশনাও থাকে না উপর মহলের। পারতপক্ষে কেউ খোঁজ রাখেন না এ ব্যাপারে।
মাঠপর্যায়ের একজন কৃষি কর্মকর্তা নামপ্রকাশ করতে নিষেধ করে জানালেন, আমি দীর্ঘদিন চাকরি করছি, উপরের কোন কর্মকর্তা কখনো বলেননি খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে কেন, বাড়ানো যায় কিভাবে, সমস্যার সমাধানই বা কি। তার মতে, সাংবাদিকরা মৌসুমী রিপোর্ট করে থাকেন। আসলে মহাসঙ্কটে শিল্পটি। তার উপর শিল্পটির করুণ অবস্থার অন্যতম প্রধান কারণ গাছি সঙ্কট। বিভিন্ন পেশা বংশপরম্পরায় চলে থাকে। গাছিদের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। গাছির ছেলে গাছি হচ্ছেন না। যেসব গাছি আছেন তারা খেজুর গাছে বাদরের মতো ঝুলে রস সংগ্রহের জন্য সকাল বিকাল পরিশ্রম করেন এখন বয়সের ভারে তারা পেরে উঠছেন না। তাছাড়া সিংহভাগ গাছির মাজায় ও হাটুতে ব্যাথা স্থায়ী হয়ে গেছে।
যশোরের সদর উপজেলার ডাকাতিয়া মাঠপাড়ার গাছি আলী হোসেন ময়না জানান, আমি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের সাথে জড়িত প্রায় ৪০ বছর। এখন কোনরকমে ২টি ছোট গাছ ঝেড়েকুটে রস সংগ্রহের জন্য বাঁশের নলি ও ভাড় ঝুলাতে পারছি। আগে আমি নতুন খয়েরতলা, ডাকাতিয়া, নওদাগ্রামের প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি গাছে থেকে রস সংগ্রহের কাজ করতে পারতাম। তিনি বললেন আর পারি না। তাছাড়া সেইরকম গাছও নেই। গ্রামে গ্রামে সারি সারি খেজুর গাছ যেভাবে দেখা যেত, এখন দেখা যায় না। তার মতে, অল্পকিছু গাছি যশোরের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তাও কতদিন স্থায়িত্ব হবে তা নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২০১৪ সালের মাঠ জরিপ অনুযায়ী যশোর অঞ্চলে ২ হাজার ৮শ’ ৩৮ হেক্টরে খেজুর গাছের সংখ্যা ছিল ১৭লাখ ৮২হাজার ৫শ’৭০টি। গুড় উৎপাদন হতো ২৫হাজার ৯শ’ মেট্রিক টন। আগের জরিপে (১৯৯৮) এর সংখ্যা ছিল প্রায় দ্বিগুণ। দ্রæত কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা। ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় খেজুর গাছ সাবাড় হচ্ছে। তাছাড়া নতুন করে কোন খেজুর গাছ লাগানো হচ্ছে না।
জানা গেছে, গ্রামাঞ্চলে বাড়ীর আঙ্গিনায় ও মাঠে জমির আইলে কিংবা বাগানে অযতœ অবহেলায় ও সম্পুর্ন বিনা খরচে বেড়ে ওঠে ‘মধুবৃক্ষ’ খেজুর গাছ। প্রতিবছর শীত মৌসুমের ৩/৪মাস মানুষের রসনা তৃপ্তির যোগান দেয়। খেজুরের রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা গুড়, নলেন গুড়, মিছরি দানার গুড় ও পাটালি তৈরির দৃশ্য অনেকটাই অভিনব মনে হয়। পুরো শীতে গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক এই উৎসব চলে আসছে আবহমান কাল ধরে।
যশোরের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এখনো খাজুরা, বাঘারপাড়া, ফতেপুর, ছাতিয়ানতলাসহ বিভিন্ন গ্রামের কিছু ব্যক্তি শীত মৌসুমে খেজুরের রস গুড়ের ব্যবসা চালিয়ে যান। অসাধু ব্যবসায়ীরা গুড়ে ভেজাল দিয়ে থাকে চিনি ও সেগারিন। অবশ্য এই ভেজালের বিরুদ্ধে এবার প্রশাসন থেকে কড়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।