Inqilab Logo

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে ক্ষমতাসীন ব্যবসায়ী জোট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে ক্ষমতাসীন ‘ব্যবসায়ী জোট’ই দায়ী বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার একদিকে মুক্তবাজারের দর্শনে বিশ্বাসী, অন্যদিকে নিজস্ব দলীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় আগ্রহী। সরকারের দুর্নীতি, টাকা পাঁচার, লুটপাটের মাধ্যমে পাহাড় সমান সম্পদ অর্জনের ফলোশ্রæতিতে দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি আকাশচুম্বি হয়েছে। এর পেছনে প্রধান কারণ দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহতার ন্যূনতম আঁচ তাদের উপর লাগেই না। আপনার-আমারসহ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের শ্রমে, ঘামে অর্জিত ট্যাক্সের টাকা শতকরা ৩৬ ভাগই পাঁচারকৃত, বাইরে চলে যাচ্ছে। গত এক বছরে ৪৩৭ ভাগ পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির ঝাঁজ- এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল (মঙ্গলবার) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলীয় ব্যবসায়ীদের দ্বারা তৈরি ব্যবসায়ী জোট ভাঙতে না পারলে, টিসিবিকে শক্তিশালী করতে না পারলে, দলীয় লোকজন দ্বারা পরিবহনের চাঁদাবাজি বন্ধ না করতে পারলে এবং মধ্যস্বত্ব ব্যবস্থা বন্ধ করতে না পারলে দ্রব্যমূল্য হ্রাস করা সম্ভব হবে না। বক্তৃতা-বিবৃতি ও লোক দেখানো ভÐামী দ্বারা আর যাই হোক দ্রব্যমূল্য হ্রাস বা অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কারণ যারা দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছে তারা সবই তো আওয়ামী লীগের লোক। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সরবারহের কোনো ঘাটতি না থাকলেও সরকারের ব্যর্থতার কারণেই মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছার ওপরই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য নির্ভরশীল। খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার সম্পর্ক রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- এই জনগণের দাবি।

তিনি বলেন, বর্তমান মিডনাইট সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কারণ তাদের সরকার গঠনের জন্য জনগণের ভোটের কোনো দরকার হয়নি এবং আগামী নির্বাচনে তাদের জনগণের ভোটের কোনো দরকার নেই। তারা নির্বাচনের খোলসে দলীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের ঘাড়ে ভর করে গায়ের জোরে পুনরায় সরকার গঠন করতে চায়। জনগণ তাদের এই গণবিরোধী ষড়যন্ত্র আর বরদাশত করবে না।

বিএনপি-আওয়ামী লীগ আমলে দ্রব্যমূল্যের তুলনা: বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের সর্বশেষ ২০০৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এবং বর্তমান সরকারের আমলে গত ১ ডিসেম্বর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আমাদের সময়ে ২০০৬ সালে মোটা চাল ছিলো গড় ১৭ টাকা ৫০ পয়সা, এখন ২০১৯ সালে তা ৩৪-৪০ টাকা, সরু চাল ছিলো ২৪ টাকা ৫০ পয়সা, এখন হচ্ছে এটা ৪১ থেকে ৬০ টাকা। পেঁয়াজ ৮-২০ টাকা, এখন হয়েছে এটা ২২০-২৪০ টাকা। সোয়াবিন তেল ছিলো ৫৫ টাকা, এখন হয়েছে ৯৪-১১০ টাকা। আটা ছিলো ১৭ টাকা, এখন হচ্ছে ২৮-৩২ টাকা। হাঁসের ডিম আমাদের সময় ছিলো ১২ টাকা এখন হচ্ছে ৭০ টাকা, আলু ছিলো ৬ টাকা, এখন ৩০ টাকা, চিনি ছিলো ৩৬ টাকা, এখন হচ্ছে ৬০ টাকা।
মির্জা ফখরুল বলেন, এসব দাম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিগত ১৩ বছরে জিনিসপত্রের মূল্য গড় হিসেবে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, অনেক জিনিসের মূল্য বেড়েছে ৩ গুণ। অথচ এসেনশিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট অনুযায়ী সরকার ১৭টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। এই সরকারের প্রতিশ্রæত ১০ টাকার চাল আমজনতা খেয়েছে ৭০ টাকায়।

বিএনপির এই নেতা বলেন, পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকটকে পূঁজি করে অতি মুনাফালোভী সরকার দলীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠি, আমদানিকারক, আড়তদার, মজুদদার, খুচরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। চাল, তেল, ডিম, আদা, রসুন, ময়দা, মরিচ, হলুদ, মসলা, চিনিসহ অধিকাংশই নিত্যপণ্যের দাম।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে দেশের জনজীবনের দুর্বিষহ চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ কতটা অসহায় তার একটা উদাহরণই তাদের মানবেতন জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারনা দিতে সক্ষম। দ্রব্যমূল্যের উর্ধবগতিতে গ্রাম থেকে আসা এক শিক্ষার্থীর সহজ স্বীকারোক্তি হচ্ছে এরকম- ‘‘ বাজারে সবজির মূল্য বৃদ্ধির ফলে সবজি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ বাজারে এমন কোনো সবজি নাই যার মূল্য ৮০ থেকে ১০ টাকার নিচে। এমন কি পেঁয়াজ পাতার দামও হচ্ছে কেজিতে ১০০ টাকা। প্রশ্ন ছিলো তাহলে তার খাদ্য তালিকায় কী থাকে। উত্তর ছিলো ডিম এবং যথারীতি এক বাটি পানি সমৃদ্ধ ডাল। তাও একটা ডিম দুই জনে ভাগ করে খায়। দ্রব্যমূল্যের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এটাই হচ্ছে বাস্তব চিত্র। আর এই হচ্ছে আমাদের ভোটার বিহীন সরকারের দেশকে মধ্য আয়ে পরিণত করার অসহনীয় ফলাফল। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এই ভয়াবহ চিত্র রুপায়িত করার জন্য যারা দায়ী তারা হচ্ছেন, বর্তমান ভোটার বিহীন অবৈধ সরকার।

বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, দ্রব্যমূল্যসহ জনজীবনের সকল স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে সহনীয় মাত্রায় রাখতে হলে আমাদের গড়ে তুলতে হবে একটি জবাবদিহিতামূলক সরকার। অবিলম্বে এই অবৈধ ভোটারবিহীন তথাকথিত নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার পরিচালনায় সকল দলের অংশগ্রহনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। অন্যায় শুধু দ্রব্যমূল্য মানুষের দৈনিন্দিন জীবনের সমস্যাই নয় জাতির গোটা ভবিষ্য জীবন আরো দুর্বিষহ ও অসহনীয় হয়ে উঠবে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে দলের বড় কোনো কর্মসূচি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারা দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা কর্মসূচি নিয়েছি, কর্মসূচি হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো হবে প্রয়োজনে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা গণশুনানীতে আমাদের প্রতিনিধি গিয়েছিলো, সেখানে দলের বক্তব্য দেয়া হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে অতীতে আমরা কর্মসূচি নিয়েছি। আবার যদি মূল্য বৃদ্ধি করা হয় আমরা অবশ্যই কর্মসূচি নেবো। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম শুধু বিএনপিকে এ্যাফেক্ট করে না, পেঁয়াজের দাম শুধু বিএনপিকে এ্যাফেক্ট করে না, জনগণকে এ্যাফেক্ট করে। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং এগিয়ে এসে এই যে দানব তাদেরকে অপসারণ করতে হবে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ