পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পরিবেশের ছাড় পত্র ও জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ভাটা। অধিকাংশ ভাটার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের জাল আদেশ দাখিল করে ভাটা চালিয়ে আসার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক বরাবরে ফেসবুকে শিশু মাইশার লেখা চিঠি ভাইরাল হলে উচ্চ আদালতের বিচারপতিগনের স্বাক্ষর জালের তথ্য বেরিয়ে আসে।
প্রাথমিক পর্যায়ে উচ্চ আদালতের নিদের্শে ৩১ ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানায় মামলা করা হয়েছে। তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সিআইডিকে। এই ঘটনায় দিনাজপুরসহ আশপাশের সকল জেলার ভাটা মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কারন ইতিমধ্যেই আরো দুটি জাল রিটের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যার নম্বর হচ্ছে ১৫০৯২/২০১৭ ও ১৪০৬০/২০১৮। ২০১৭ সালের ভ‚য়া রিটে ৩৫ এবং ২০১৮ সালের রিটে ৩৯ ভাটা মালিকের নাম রয়েছে। উল্লেখিত চারটি রিট এর ভুয়া আদেশ তৈরির জন্য ওয়ারেসউজ্জামান বকুল পিতা মোঃ শওকত আলী ও ও মোজাম্মেল হোসেন বকুস পিতা মৃত হালিম উদ্দিন সরকারকে দায়ী করছে অভিযুক্ত ভাটা মালিকেরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর জেলা ভাটা মালিক সমিতির একাংশের সভাপতি রেজাউল ইসলাম। তার মতে বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য লাইসেন্স না থাকা সকল ভাটা মালিক বুক উচিয়ে চলতি মৌসুমে’র কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। লাখ লাখ কাঁচা ইট কেটে মাঠ ভর্তি করে ফেলেছেন। আগুন দেয়ার জন্য জ্বালানি কাঠ স্তুপ করেছেন।
বায়ুদূষণ হ্রাস ও কৃষি জমির মাটি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) কার্যকর হয়েছে। এই আইন কার্যকর হওয়ায় দিনাজপুর জেলাসহ দেশের অধিকাংশ ভাটাই পরিবেশের ছাড় পত্র পায়নি। অনেক ভাটা মালিক পরিবেশ ছাড়পত্র না পেয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হোন। বিচার বিশ্লেষণ করে ভাটা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি স্থিতিবস্থা/নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ডাইরেকশন প্রদান করেন। উচ্চ আদালতের আদেশ বলে ২০১২-২০১৩ মৌসুম থেকে পূর্বে ছাড়পত্র থাকা ভাটাগুলি তাদের ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।
নিয়ম অনুযায়ী ভাটা মালিকেরা উচ্চ আদালতের আদেশের কপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করার কথা। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ভাটা মালিকদের দাখিল করা উচ্চ আদালতের আদেশ কপি এ্যাটনি জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে যাচাই করা কথা। কিন্তু দীর্ঘ সাত বছর তা করা হয়নি। এছাড়া উচ্চ আদালতের আদেশও নেই আবার কোন কাগজও নেই তারপরেও নিয়মিতভাবে ভাটা চালিয়ে আসছে এ ধরনের ভাটার সংখ্যাও কম নয়। তবে প্রায় সকল ভাটাই জেলা প্রশাসকের এল আর ফান্ড ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বিভিন্ন উৎসবে চাঁদা প্রদান করে আসছে নিয়মিতভাবেই বলে ভাটা মালিকেরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুল আলম এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। উচ্চ আদালতে অপর জাল আদেশের বিষয়টি অবগত করা বা মামলা দায়ের করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক মত কাজ করা হবে বলেই উল্লেখ করেন।
এদিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্য মতে দিনাজপুরের ১৩ টি উপজেলায় মোট ২৭২টি ভাটা রয়েছে। গত ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে জেলা প্রশাসকের কাছে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিল মাত্র ৯৩ জন ভাটা মালিক। যথাযথ কাগজ পত্র থাকায় ৪০টি ভাটাকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। আবার এদের মধ্যে ১৪২টি ভাটার উচ্চ আদালতের আদেশ রয়েছে। বাকি ৯০ টি ভাটা চলছে লাইসেন্স ছাড়াই। কাস্টমস বিভাগের তৎপরতার কারণে প্রতিটি ভাটাই মোটামুটিভাবে ভ্যাট পরিশোধ করে আসছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে ভুয়া ও জাল আদেশ তৈরী করার অভিযোগে ৩১ ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। যে দুটি রিটের জাল আদেশ তৈরী করা হয় সেই দুটি রিট নম্বর হচ্ছে ১৫০৯৩/১৭ ও ১৪৬০৫/১৮। জাল বলে প্রমাণিত দুটি রিটই যথারীতি উচ্চ আদালতে ফাইল করা হয়। কিন্তু শুনানী না করেই জাল আদেশ তৈরী করে। যাতে বিজ্ঞ দুই বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের জাল আদেশ তৈরীর ঘটনা ফাঁস হলে পড়লে ভাটা মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখিত জাল আদেশের দুটি রিটের সাথে আরো দুটি রিট উচ্চ আদালতে দাখিল করা হয় এবং পরবর্তীতে শুনানী না করেই একইভাবে জাল আদেশ তৈরী করা হয়। এই দুটি রিট নম্বর হচ্ছে ১৫০৯২/১৭ ও ১৪০৬০/১৮। এই দুটি রিটও পূর্বের দুটি’র আপলোড অর্থাৎ শুনানী না করেই বিজ্ঞ বিচারপতি দ্বয়ের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া আদেশ তৈরী করা হয়। অভিযুক্ত ভাটা মালিকদের পক্ষে আদালতে দেয়া জবাববন্দিতে উল্লেখ করা হয় যে, ভাটা মালিক মো. ওয়ারেছ জামান (বকুল) ও মোজাম্মেল হোসেন বকুসকে দিনাজপুর জেলা ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির গত ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর বিশেষ সাধারন সভার মাধ্যমে উচ্চ আদালতে রিট করার দায়িত্ব দেয়া হয়। এজন্য ভাটা মালিকেরা রিট করার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ উক্ত দুই ইট ভাটা মালিককে প্রদান করবেন।
সভায় উপস্থিত থাকা এক ভাটা মালিক জানান, গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে প্রায় ১১২ জন ভাটা মালিকের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা গ্রহণ করেন উক্ত দুই ভাটা মালিক। ২০১৩ সাল থেকেই মূলত উক্ত দুই ভাটা মালিক উচ্চ আদালতের রিটের কপি এনে ভাটা মালিকদের সরবরাহ করে আসছিল। লাইসেন্স করতে না লাগায় লাইসেন্স ফি’র টাকা সরকারী কোষাগারে জমা না দিতে হলেও জেলা প্রশাসকের এল আর ফান্ডে’র জন্য কোটি কোটি টাকা দিয়ে এসেছেন।
সম্প্রতি শিশু মনোয়ারা মাইশা জেলা প্রশাসক বরাবরে লেখা চিঠি ভাইরাল হয়। চিঠিতে সে যমুনা ব্রিক্স নামে একটি ভাটা’র ধোয়ায় শ্বাসকষ্টের কথা উল্লেখ করে। এরপরই জেলা প্রশাসক উক্ত ভাটাটি বন্ধ করে দেয়। ফায়ার সার্ভিস দিয়ে ভাটার আগুন নিভিয়ে দেয়। যমুনা বিক্সের মালিক এই কারনে জেলা প্রশাসককে লিগ্যাল নোটিশ দেয়।
জেলা প্রশাসক লিগ্যাল নোটিশ পেয়ে রিট দুটি সর্ম্পকে এ্যাটনি জেনারেল কার্যালয়ে পাঠালে জাল আদেশের তথ্য বেরিয়ে আসে। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য একই সময়ে ও তারিখে করা আরো দুটি জাল আদেশের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।