Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পেট্রল পাম্প ধর্মঘট স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গে আলোচনায় কিছু দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে পেট্রল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিকরা।
রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ২৬ জেলায় প্রায় দেড় দিন জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ থাকার পর গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিপিসির লিয়াজোঁ কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠক থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা জনগণের ভোগান্তি চাই না। আগামী ১৫ ডিসেম্বর জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর আহŸানে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে আমাদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। সে পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি স্থগিত রাখছি। জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিপিসির পরিচালক (বিপণন) সৈয়দ মেহদী হাসান বলেন, খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তাদের যেসব দাবি, তার মধ্যে বিপিসি সংশ্লিষ্ট বিষয় আছে দুই-তিনটি। বাকিগুলোর বিষয়ে অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তবে জ্বালানি তেল বিক্রিতে পাম্প মালিকদের কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ কমিশন দেওয়ার যে দাবি ছিল,সে বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
১৫ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম তেল বিক্রির কমিশন বৃদ্ধি, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ, পেট্রোল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ প্রথা বাতিল, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ প্রথা বাতিল, পেট্রোল পাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট স্থাপন, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল এবং পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন জমির ইজারা বাতিল।

বৈঠকে ধর্মঘটে ডাক দেওয়া বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম, মহাসচিব মিজানুর রহমান রতন, পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ মোমিন দুলাল, পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, খুলনা বিভাগের সহ-সভাপতি এম মাহবুবুল আলম, সিনিয়ন সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সোবহান আব্দুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক শেখ মুরদা হোসেনসহ রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। গত ২৬ নভেম্বর বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছিলেন পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি মিজানুর রহমান রতন। সে অনুযায়ী তিন বিভাগের সব জেলায় গত রোববার সকাল থেকে পেট্রল পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপোর শ্রমিকরা তেল উত্তোলন, বিপণন ও সরবরাহ বন্ধ রাখায় ২৬ জেলায় জ্বালানি তেল সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়।

এই অবস্থায় বিপাকে পড়েন গাড়ি চালকরা। পাম্পে এসে তেল না পেয়ে তাদের ফিরে যেতে হয়। উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে সড়কে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যাও কমে যায়। পাম্পগুলোতে ১৫ দফা দাবি সম্বলিত পোস্টার টাঙিয়ে রাখতে দেখা যায়।
১৫ দফায় দাবি গুলো হচ্ছে - জ্বালানি তেল বিক্রিতে কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ কমিশন দেওয়া, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট নাকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান- বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা, প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরি শ্রমিকদের জন্য ৫ লাখ টাকার দুর্ঘটনা বীমা, ট্যাংকলরির ভাড়া বৃদ্ধি, পেট্রল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণের নিয়ম বাতিল, পেট্রোল পাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম বাতিল, পেট্রোল পাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট করা, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল করা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রোল পাম্পের প্রবেশ দ্বারের ভ‚মির জন্য ইজারা নেওয়ার নিয়ম বাতিল, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম বাতিল, আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ৫ বছর অন্তর বাধ্যতামূলকভাবে ক্যালিব্রেশনের নিয়ম বাতিল, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, সুনির্দিষ্ট দপ্তর ছাড়া ডিলার বা এজেন্টদের অযথা হয়রানি বন্ধ করা, নতুন কোনো পেট্রোল পাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় জ্বালানী তেল মালিক সমিতির ছাড়পত্রের বিধান চালু করা, পেট্রোল পাম্পের পাশে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা এবং বিভিন্ন জেলায় ট্যাংকলরি থেকে চাঁদা গ্রহণ বন্ধ করা। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে আরো প্রতিবেদন :

রাজশাহী ব্যুরো জানান : অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট স্থগিত করার পর রাজশাহীর পেট্রল পাম্পগুলোয় বিভিন্ন যানবাহনের ভীড় দেখা যায়। সবচেয়ে বেশী ভীড় ছিল মোটরসাইকেলের। পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলার সভাপতি মনিমুল হক জানান, ঢাকায় বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গে তাদের নেতাদের বৈঠক হয়। সেখানে কমিশন বৃদ্ধির দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। অন্য ১৪টি দাবির বিষয়ে দুটি মন্ত্রণালয়ের যৌথসভা হতে হবে। তাই সরকারের তরফ থেকে কয়েকদিন সময় নেয়া হয়েছে। এ জন্য ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা ধর্মঘট স্থগিত করেছেন।

রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকার আলম ফিলিং স্টেশনের সেলসম্যান মুরাদ হোসেন জানান, ধর্মঘট শুরুর দিনের আগের রাতে তেল নেয়ার জন্য পাম্পে যানবাহনের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। আবার ধর্মঘট স্থগিতের পরও একই অবস্থা। তবে স্থগিতের পরই যানবাহনের সংখ্যা বেশি।
খুলনা ব্যুরো জানান: দাবি পূরণের আশ্বাস পাওয়ায় খুলনা বিভাগের পেট্রল পাম্প মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর থেকে স্বাভাবিক হয়েছে যান চলাচল। খুলে দেয়া হয় পেট্রোল পাম্প গুলো।

এর আগে রবিবার সকাল থেকে খুলনাসহ তিন বিভাগের তেল সরবরাহ বন্ধ থাকে। একইসঙ্গে বিভাগের তিনশ ৮৭টি পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা হয়। এ কারণে বিপাকে পড়েন যানবাহন চালকরা। এ সময় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। পাম্পগুলোতে তেল আনতে গেলে গাড়িচালকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ পেট্রল পাম্প ডিলার ডিস্ট্রিবিউটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-মহাসচিব ও খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, তিন বিভাগের ২৬ জেলার পেট্রল পাম্পের ধর্মঘট ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার বিপিসির সঙ্গে পেট্রোল পাম্প মালিকদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে তিনি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ