Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘গরমে’র অনুভূতি ডিসেম্বরের অর্ধেকে : এরপর শৈত্যপ্রবাহ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

চলতি ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ-পৌষ) মাসের প্রথম পক্ষে (১৫ দিন) রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিই থাকতে পারে। তবে পৌষের শুরুতে কয়েকদিন বাদেই (ডিসেম্বরের শেষ ১৫ দিন) রাতের তাপমাত্রার পারদ ক্রমেই নিচের দিকে নামবে। এরফলে শীতের কামড় অনুভূত হতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অর্থাৎ তাপমাপক পারদ স্বাভাবিকের তুলনায় কমই থাকতে পারে।

ডিসেম্বর মাসে শেষের পনেরো দিনে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে মৃদু বা হালকা শৈত্যপ্রবাহের সময়ে রাতের তাপমাত্রার পারদ নেমে যেতে পারে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা হতে পারে ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সে.। গতকাল ঢাকায় তাপমাত্রার পারদ ছিল ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।

গতকাল (রোববার) আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় দীর্ঘমেয়াদি উপরোক্ত পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ।

ডিসেম্বর মাসের পূর্বাভাসে আরও জানা গেছে, এ মাসে শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি ধরনের এমনকি গাঢ়-ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র মাঝারি থেকে হালকা ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশাপাতের কারণে চলতি ডিসেম্বর মাসে দেশের অনেক জায়গায় ভোর থেকে সকাল অবধি নৌ-রেল ও সড়ক-মহাসড়কে চলাচলে ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। এরজন্য প্রয়োজন যানবাহন ও নৌযান, ট্রেন চলাচলে সতর্কতা।

এ মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহে স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকতে পারে এবং দেশের কোথাও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা নেই। ডিসেম্বরের কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, এ মাসে দেশে দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ২.৫০ থেকে ৩.৫০ মি.মি. এবং গড় সূর্য কিরণকাল সাড়ে ৬ থেকে সাড়ে ৭ ঘণ্টাকাল থাকতে পারে।

বর্ষণের পূর্বাভাসে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ কমিটি বলছে, ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে গেল নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাসে সার্বিকভাবে সারাদেশে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ১২০ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। আবার বিভাগওয়ারি হিসাবে বৃষ্টিপাতের হার বা পরিমানের ক্ষেত্রে তারতম্য ও অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়।

যেমন- নভেম্বর মাসে ঢাকা বিভাগে নভেম্বরে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। খুলনা বিভাগে ৩০৫ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৩৫৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬০ শতাংশ বেশি বর্ষণ হয়। অথচ ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১.৪ শতাংশ, সিলেটে ৪৭.৭ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ২৫.৮ শতাংশ এবং রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৯৮.৩ শতাংশ কম বৃষ্টি ঝরেছে। ইতোপূর্বে গত অক্টোবর (আশি^ন-কার্তিক) মাসে সারাদেশে গড়ে প্রায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়। যদিও এলাকাভেদে বৃষ্টিপাতে ছিল ব্যাপক গরমিল।

গতকালের সভায় নভেম্বর মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনা সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরে সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ০.৫ ডিগ্রি সে. বেশি ছিল। যা চলতি বছরে আগের কয়েক মাস ধরে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে থাকারই ধারাবাহিকতা। এটি দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি তথা বৈশি^ক উষ্ণায়নের সূচক বহন করছে।

বিগত ৪ নভেম্বর উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। যা পরে একই এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এরপর এটি পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে ৫ নভেম্বর পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে নি¤œচাপ এবং আরও পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে ৬ নভেম্বর একই এলাকায় গভীর নি¤œচাপে পরিণত হয়।

পরবর্তী সময়ে এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ৭ নভেম্বর ভোররাতে একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এ পরিণত হয়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল পরবর্তীতে আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ৭ নভেম্বর রাত ৯টায় পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এরপর বুলবুল আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও হয়ে ৮ নভেম্বর দুপুরে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এ পরিণত হয়।

এরপর এটি ক্রমশ উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ৯ নভেম্বর দুপুরে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে। এটি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও কিছুটা দুর্বল হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে ৯ নভেম্বর রাত ৯ টা থেকে পরদিন ভোর ৫ টার মধ্যে সুন্দরবনের নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অতিক্রম করে। এটি খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় অবস্থান করে। পরবর্তী সময়ে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ১০ নভেম্বর সকালে গভীর নিম্ন চাপ আকারে বাগেরহাট, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলে অবস্থান করে এবং ধীর ধীরে দুর্বল হয়ে আরও পূর্ব, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও কেটে যায়।

নভেম্বর মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারে ৩৪ ডিগ্রি সে. (৭ নভেম্বর) এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৬ সে. তেঁতুলিয়ায় (২৯ নভেম্বর) রেকর্ড করা হয়।

সর্বশেষ আবহাওয়া
আজ (সোমবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদেশের ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং দিনের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। এরপরের ৫ দিনে রাতের তাপমাত্রার পারদ নিচের দিকে নামতে পারে। গতকাল (রোববার) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ৩১.৮ এবং সর্বনিম্ন তেঁতুলিয়ায় ১৩.২ ডিগ্রি সে.। ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ২৯ এবং সর্বনিম্ন ১৯.২ ডিগ্রি সে.। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ