পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রঁসুইঘরে মা রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশের রুমে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছেলে। গরুর গোশত আর খিচুড়ি রান্নার প্রস্তুতি চলছে। হঠাৎ চিৎকার করে ছেলে বলছেন, ‘আম্মা, চারটার বেশি পাঁচটা নয়, তিনটা হলে ভালো হয়।’ মা প্রথমে বুঝতে পারেননি। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ছেলের মুখের দিকে তাকান। ছেলে গৃহকর্তাকে (পিতা) দেখিয়ে বললেন, ‘দুই কেজির নিচে পেঁয়াজ কখনো বাসায় আসেনি। এবার এসেছে আধা কেজি’। মায়ের বুঝতে বাকি থাকে না। পেঁয়াজ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে ছেলে। এ ঘটনা গতকাল রাজধানীর শনির আখড়ার জিয়া স্মরণী রোডের এক বাসায়।
শুধু ওই মা আর ছেলে নয়, সারাদেশে পরিবার, ছোট-বড় হোটেল-রেস্তোরাঁ, ফুটপাথের পুরি-পেঁযাজির দোকান সর্বত্রই অভিন্ন চিত্র। পেঁয়াজের দাম ৭ থেকে ৮ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর মানুষের মধ্যে পেঁয়াজের ব্যবহার কমে এসেছে। শর্মা, পেঁয়াজি, চপ, ঝালমুড়িসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবারে পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে যে খাবার তৈরিতে ১০ পেঁয়াজ ব্যবহার করা হতো; সেই খাবার দুই থেকে তিনটি পেঁয়াজ দেয়া হচ্ছে। বাকিটা আলু, গাজর দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে। গতকালও রাজধানীর মতিঝিলের এক নামকরা হোটেলের শর্মা খেয়ে দেখা গেল পেঁয়াজ সামান্যই ব্যবহার হয়েছে। পেঁয়াজের বদলে আলু-গাজর-মুলা-কাঁচা পেঁপে দেয়া হয়েছে বেশি।
অক্টোবর মাসে ভারত হঠাৎ বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছে। ৪০ টাকা দামের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে। বড় আকারের একটি পেঁয়াজের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত পড়ে যায়। দেশের কোথাও কোথাও কেজি দরের বদলে হালি দরেও পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়। এমনকি মিডিয়ায় খবর বের হয়েছে বিয়েতে উপহার হিসেবে ‘পেঁয়াজ’ দেয়া হচ্ছে। বিদেশে চাকরিরত ছেলে ছুটিতে দেশে ফেরার সময় মা-চাচীর জন্য ব্যাগে করে শাড়ি-গয়না-কক্সমেটিক্সের বদলে পেঁয়াজ নিয়ে এসেছেন।
অধিক দামের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি বাড়ির রান্নাঘরে পেঁয়াজ নিয়ে হাহাকার পড়ে গেছে। পেঁয়াজ ছাড়া রান্না ভাবাই যায় না। প্রতিটি রান্নার শুরুতে কড়াইতে গরম তেলে পেঁয়াজকুচি ছেড়ে দেয়ার একটা ‘ছ্যাঁৎ’ করা আওয়াজ দিয়েই রান্না শুরু হয়। আর এখন কি না এই উচ্চম‚ল্যের জন্য পেঁয়াজ ধরলে হাতে ছ্যাঁকা লাগার দশা।
গতকাল মতিঝিলের পুরি-পেঁয়াজির দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দাম বেশি হওয়ায় পেঁয়াজের পাশাপাশি পেঁয়াজিতে আলু-গাজর-মুলা-কাঁচা পেপের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে স্বাদের তেমন হেরফের হয় না। সমবায় সদন বিল্ডিংয়ের সামনে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে পিঁয়াজু খাচ্ছিলেন রোকন নামের একজন বললেন, পিঁয়াজুতে আলুর পরিমাণ বেশি। তবে স্বাদ খুব খারাপ তা নয়। বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা আগে সাপ্তাহে দুই কেজি পেঁয়াজ ক্রয় করতেন তারা এখন আধা কেজি, ৭৫০ গ্রাম পেঁয়াজ কিনে থাকেন।
রান্নাবান্নার ইতিহাসে পেঁয়াজের ব্যবহার অত্যন্ত প্রাচীন। নিরামিষভোজী জাতিগুলো বাদ দিলে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বিভিন্ন রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্যে পেঁয়াজ একটি মৌলিক উপকরণ। ভারতের অনেক রাজ্যে কাঁচা পেঁয়াজ দিয়েই সকালের রুটি খাওয়া হয়ে থাকে। কাঁচা পেঁয়াজ সালাদ ও বিভিন্ন রকম ভর্তায় ব্যবহার করা হয়। কুচি করা পেঁয়াজ ভেজে বেরেস্তা করে বা সরাসরি রান্নার কাজে লাগানো হয়। দেশের রঁসুই ঘরে কোনো মজাদার রান্না খাবার পেঁয়াজ ছাড়া হবে, সেটা ভাবা দায়; সে রান্না মাছ-গোশত-সবজি যাই হোক। এ ছাড়া পেঁয়াজকে ভিনেগার বা সিরকায় ডুবিয়ে আচার বানানো হয়।
কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্যটির ব্যবহার ভোক্তাদের মধ্যে কমে গেছে। মসলাজাতীয় উদ্ভিদ পেঁয়াজের ম‚ল উপাদান পানি, কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার। এতদিন মনে করা হতো এটা ছাড়া তরকারি বা মুখরোচক খাবার বিস্বাদ হবে। কিন্তু পরিমাণে কম ব্যবহার করেও খাবারে স্বাদ অটুট থাকে বলে জানিয়েছেন গৃহিণীরা।
তরি-তরকােিত পেঁয়াজের কম ব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এক গৃহিণী বললেন, দামের কারণে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ অনেকের পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব নয়। তবে পেঁয়াজ কম দিয়েও রান্নার স্বাদ ঠিক রাখা যায়। টমেটো ভাপ দিয়ে খোসা ছাড়িয়ে পেস্ট করে রান্নার সময় পেঁয়াজের পরিবর্তে ব্যবহার করলে রান্না করা খাবার অতি সুস্বাদু হয়। মাছ, মাংস, এমনকি সবজিও টমেটো পেস্ট দিয়ে রান্না করলে তরকারির রঙ খুব সুন্দর হয়ে থাকে। টমেটোর উপকারিতা পেঁয়াজের থেকে অনেক গুণ বেশি, এটা কমবেশি সবারই জানা। তিনি আরো বলেন, মিষ্টিকুমড়া গ্রেটার দিয়ে কুচি করে একইভাবে পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে তরকারিতে ব্যবহার করলে রান্না সুস্বাদু হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।