বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনকে ঘিরে সিলেট যেন এখন উৎসবের নগরী। ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে ছেয়ে গেছে নগরীর অলিগলি। নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য। পদ প্রত্যাশীরা কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তবে এবার কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে না সমঝোতার কাউন্সিল হবে তা এখনো স্পষ্ট হয়নি।

দীর্ঘ ৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহু প্রতিক্ষিত সম্মেলন। নগরীর মোড়ে মোড়ে প্রার্থীদের বড় বড় ডিজিটাল ব্যানার শোভা পাচ্ছে। শীর্ষ পদ পেতে নেতাদের চলছে লবিং-তদবির। তবে এবার ভ‚মিখেকো, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতারা সতর্ক রয়েছেন। সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৫০০ ডেলিগেট তাদের নেতৃত্ব ঠিক করবেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দীর্ঘদিন থেকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়েই চলছে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান বয়োজ্যেষ্ঠ হওয়ায় সকল অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন না। তাই একাই সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় রাজনৈতিক কর্মসূচি। এবার আর লুৎফুর রহমান প্রার্থী হচ্ছেন না।

অন্যদিকে মহানগরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি আবার কেন্দ্রের নির্বাহী সদস্য। মহানগরে এবার কামরান মাইনাস হলে আসতে পারেন বড় কোন দায়িত্বে। নগরের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন এবার সভাপতি প্রার্থী। আসাদ অনুসারীরা মনে করেন রাজনৈতিক ক্লিন ইমেজের অধিকারী তাদের নেতা খোদ দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেক নজরে রয়েছেন। বিগত সিসিক নির্বাচনে শেখ হাসিনার কথায় মেয়র পদ থেকে সরে দাঁড়ানো আসাদ এবার মহানগরের সভাপতি হতে পারেন বলে তার অনুসারীদের ধারণা।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এবার সভাপতি পদে প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলার সহ-সভাপতি সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ ও মাসুক উদ্দিন আহমদ।
সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে- অ্যাডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদ, অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, প্রিন্সিপাল সুজাত আলী রফিক, অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মোহাম্মদ আবু জাহিদ, সাইফুল আলম রুহেল, মোহাম্মদ আলী দুলাল, জগলু চৌধুরী এবং প্রিন্সিপাল শামসুল ইসলাম প্রমুখ।

২০০৫ সালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে সম্মেলনের পর কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় ৬ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারায় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভেরও শেষ ছিল না। দল ক্ষমতায় আসার পর সম্মেলন ছাড়াই ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর ৬৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। কমিটিতে ৬ জনকে করা হয় উপদেষ্টা। কমিটিতে শ্রম সম্পাদক, ৩৪ নম্বর সদস্যের পদ শূন্য রাখা হলেও তা পূরণ হয়নি। আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানকে সভাপতি ও শফিকুর রহমান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কমিটি অনুমোদন দেন। এ কমিটি ৮ বছরে ৬ উপজেলায় সম্মেলন করেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের কঠোর নির্দেশের পর ৭ উপজেলার সম্মেলনের দিন ধার্য্য করে জেলা সম্মেলনেরও প্রস্তুতি নেয়। ইতোমধ্যে সকল উপজেলার সম্মেলন শেষ হওয়ার পথে।

এদিকে, মহানগরের সম্মেলনেও সভাপতি পদে নাম আসছে বর্তমান সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের। সেই সাথে সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলাউর ও অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিনের নামও উঠে আসছে সভাপতি পদে। আর সাধারণ সম্পাদক পদে নাম আসছে বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিজিত চৌধুরী, অধ্যাপক জাকির হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, এটিএম হাসান জেবুল, জগদীশ দাস, তপন মিত্র ও সিটি কাউন্সিলর সাবেক ছাত্রনেতা আজাদুর রহমান আজাদ, প্রিন্স সদরুজ্জামান এবং ছালেহ আহমদ সেলিম। শীর্ষ দুই পদ পেতে এ সকল নেতৃবৃন্দ প্রতিদিন দলের কাউন্সিলরদের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথেও লবিং অব্যাহত রেখেছেন। ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত হতে কাউন্সিলর, সমঝোতায় হলে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টিতে থাকতেই নানা চেষ্টা-তদবির করছেন তারা।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী বলেন, শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে দলকে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল করতে কর্মীবান্ধব নেতৃত্বের প্রয়োজন। জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ এমন আদর্শবান ও নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন নেতা নির্বাচন করতে চান তারা। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগার বনে যাওয়া এমন কেউ যেন নেতৃত্বে আসতে না পারে এ জন্যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজরদারিও কামনা করেন তিনি।
জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। তৃণমূলের সাথে মিলেমিশে রাজনীতি করছি। আওয়ামী লীগকে সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছে দিতে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে যাচ্ছি। পদের জন্য কখনো লালিত ছিলাম না। এবার জেলায় সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হচ্ছি। আশা করি নেতাকর্মীরা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের জন্যে যোগ্য এমন নেতারাই কমিটিতে আসবেন। জেলা এবং মহানগরে ক্লিন ইমেজের, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, যারা নেতৃত্বে আসতে পারেন নি এমন যোগ্যরা কমিটিতে স্থান পাবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।