Inqilab Logo

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মার খাচ্ছেন সবজি চাষি

মাঠ আর বাজারের মূল্যের পার্থক্য দ্বিগুণেরও বেশি সংরক্ষণ ও বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতা কাটেনি

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

‘আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে সবজি উৎপাদন করি, আমাদের লাভ হয় না বললেই চলে, অথচ পকেট ভারি হচ্ছে পাইকারি ব্যবসায়ী, মুনাফালোভী, মধ্যস্বত্বভোগীদের’-আক্ষেপ করে একথা জানালেন, বারীনগরের চাষি আক্কাছ আলী। বারীনগর পাইকারি বাজারে শিম বিক্রি করার সময় গতকাল তিনি আরো বলেন, সবজির ফলন এবার ভালো হয়েছে ইনশাআল্লাহ।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কোন মৌসুমে মূল্য কিছুটা ভালো, আবার কোন মৌসুমে দারুণ খারাপ। গড়পড়তা লোকসানের পাল্লা ক্রমেই ভারি হচ্ছে। এর মূল কারণ সিন্ডিকেটের দাপট। এতে সবজি চাষিরা মার খাচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেও ‘ভেজিটেবল জোন’ হিসেবে পরিচিত যশোরসহ বিভিন্ন এলাকার সবজি চাষিরা সুফল পাচ্ছেন না বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। যশোর মার্কেটিং অফিসার মো. সুজাত হোসেন খান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আমরা বাজার তদারকি বাড়িয়েছি। সিন্ডিকেটের দাপট কমানো কঠিন হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপট চলছেই। লাগাম টেনে ধরার কোন ব্যবস্থা নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী জানান, বাজারে প্রচুর সবজি উঠছে। ফলনও ভালো হয়েছে। সবজিতে মাঠ ভরে গেছে। কিন্ত মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপট বাড়ছে বলে চাষিরা উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না। আবার ভোক্তাদেরও বেশি মূল্যে সবজি ক্রয় করতে হচ্ছে। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে কিছু এলাকায় সবজি আবাদে একটু দেরি হয়, তা না হলে আরো সবজি বাজারে উঠতো।

সরেজমিনে জানা যায়, যশোরের বারীনগরের সবজির পাইকারি বাজারটি শহর থেকে মাত্র ৭ মাইল দূরে অবস্থিত। এক কেজি সবজি পরিবহন খরচ লাভসহ সর্বোচ্চ ৫ টাকা হলেও খুব বেশি হেরফের হওয়ার কথা নয়। মাঠে এক কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। প্রতিকেজিতে অন্তত ৪০ টাকা যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। একইভাবে মাঠে বাধাকপি ৩০ টাকা, বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এভাবে সব সবজির ক্ষেত্রেই মাঠের মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি মূল্যে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাইকারি বাজারের দিকে দৃষ্টি দিলে ভোক্তারা তুলনামুলকভাবে কম মূল্যে সবজি ক্রয় করতে পারতেন। উপযুক্ত মূল্য পেতেন সবজি চাষিরাও। কিন্তু বরাবরই এই বিষয়টি অনুপস্থিত রয়েছে।

কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, দেশে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন দু’টি মৌসুমে সরকারিভাবে সবজি আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬ লাখ ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে। যার একটা বড় অংশ আবাদ ও উৎপাদন হয় যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। এবারও শীতকালীন সবজিতে মাঠ ভরে গেছে। বেগুন, শিম, বাধাকপি, শুধু নয়, পাতা কপি, কচুরমুখী, লাউ, পেপে, উচ্ছে, মিষ্টি, কুমড়া, বরবটি ও টমেটোসহ সব ধরণের সবজি উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বলে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সবজির বাজারের দিকে সরকারের কোন বিভাগের নজর নেই। নজর থাকলে সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীরা অন্তত কম মুনাফা ভোগ করলে চাষি ও ভোক্তা উভয়েই লাভবান হতে পারতেন। চাষিদেরও অভিযোগ বরাবরই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অনুপস্থিত রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা এবং কঠোর নজরদারির অভাবে ফল ভোগ করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।

সবজি অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিরাট ভ‚মিকা রাখছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সেজন্য দরকার সরকারী নজরদারি। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেই। মাঠ থেকে বাজারে তুললেই উৎপাদক চাষি ও ভোক্তার মুখটা মলিন হয়ে যায়। চাষি ও ভোক্তা উভয়ের আর্থিক ক্ষতি করছে মধ্যস্বত্বভোগী পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। যশোর সরকারি এম এম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর সেলিম রেজা জানান, চাষিদের অর্থনৈতিক সঙ্কট নিরসন, বাজারজাতকরনের সমস্যার সমাধান, উৎপাদিত সবজির উপযুক্ত মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ও পর্যাপ্ত কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থা করে সবজি সংরক্ষণ এবং সম্ভাবনাময় কৃষির এই খাতটি উজ্জল স্বাক্ষর রাখতে পারবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ