Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রকৃতির বিস্ময় নিঝুমদ্বীপ

বেড়াতে যাবেন

আনোয়ারুল হক আনোয়ার | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

নোয়াখালী জেলার মূল ভ‚খন্ডের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে মেঘনার বুক চিরে জেগে ওঠা প্রকৃতির অপরুপ সমাহার নিঝুমদ্বীপের খ্যাতি এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বৈচিত্রময় সবুজ গাছ গাছালিতে ভরা ম্যানগ্রোভ বন ও বিস্তীর্ণ বালুরাশিতে পরিপূর্ণ সৌন্দর্যমন্ডিত নিঝুমদ্বীপ পর্যটকদের নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর তাই যান্ত্রিক কোলাহল থেকে সাময়িক স্বস্তির আশায় চলতি মৌসুমে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়েছে। মেঘনা নদীর বুকে চারশত বর্গকিলোমিটার আয়তনের নিঝুমদ্বীপে ৬০ হাজার অধিবাসীর বসবাস। ২০১৩ সালে দ্বীপটি জাহাজামারা ইউনিয়ন থেকে পুথক হয়ে স্বতন্ত্র ’নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। 

অপরা সম্ভাবনাময় মেঘনা বেষ্টিত হাতিয়া উপজেলা দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে অপর একটি দ্বীপ বেষ্টিত নিঝুমদ্বীপের অবস্থান। নিঝুমদ্বীপের দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগর। পূর্ব-উত্তরে হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়ন, পশ্চিমে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা এবং উত্তর পশ্চিমে ভোলার মনপুরা উপজেলা এবং দক্ষিণে হাতিয়া নদী। নিঝুমদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে তিনটি ইউনিয়ন আয়তনের সমান চর জেগে উঠেছে। সেখানে কয়েক হাজার অধিবাসীর বসবাস।
শুটকির জন্য এলাকাটি বিখ্যাত। হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়ন ও নিঝুমদ্বীপের মধ্যবর্তীস্থানে প্রবাহিত হাতিয়া নদী পেরিয়ে ইলিশ মৌসুমে দূর দূরান্ত থেকে শত শত মাছ ধরা ট্রলার গভীর সমুদ্রে পাড়ি জমায়। নীরব নিস্তব্দ পরিবেশে সাগর জলের কলকল শব্দ পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ জোগায়। নিঝুমদ্বীপের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশের অন্য যে কোনো এলাকার চাইতেও সন্তোষজনক। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কঠোর অবস্থানের সুবাদে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক নির্বিঘেœ নিঝুমদ্বীপ ভ্রমন করছে।
নিঝুমদ্বীপের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে, হাজার হাজার হরিণের অবাধ বিচরণ। ছোট ছোট শিশুদের হরিণ শাবক নিয়ে খেলা করার মজাই আলাদা। নিঝুমদ্বীপে ২১ প্রজাতির বৃক্ষ ও ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম রয়েছে। চিত্রা হরিণ, বন্য কুকুর, কাটবিড়ালের পাশাপাশি ৩৫ প্রজাতির পাখির অবাধ বিচরণ রয়েছে নিঝুমদ্বীপে।
১৯৭৮ সালে নোয়াখালী উপক‚লীয় বন বিভাগ নিঝুমদ্বীপে দুই জোড়া চিত্রা হরিণ অবমুক্ত করে। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। হরিণের বংশ বৃদ্ধি পেতে থাকায় বর্তমানে নিঝুমদ্বীপের হরিণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ত্রিশ সহ¯্রাধিক। এছাড়া কয়েক হাজার হরিণ সমুদ্রের জোয়ারে ভোলা জেলার মনপুরা, শাহবাজপুর ও চরফ্যাশন উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভেসে গেছে। সে সুবাদে এসব উপজেলার বনাঞ্চলেও এখন শত শত হরিণের দেখা মেলে।
যাতায়াত : নিঝুমদ্বীপ যাবার একাধিক রুট রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিঝুমদ্বীপে দুইভাবে যাওয়া যায়। ঢাকা সদরঘাট থেকে হাতিয়া উপজেলার তমরদ্দি লঞ্চঘাট পর্য্যন্ত দুই রুটে প্রতিদিন চারটি ভাল মানের লঞ্চ চলাচল করে। সদরঘাট থেকে বিকাল ৫টা ও সন্ধ্যা ৬টায় দুটি লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে সকাল ৬টায় তমরদ্দি লঞ্চঘাটে পৌঁছে। অপরদিকে তমরদ্দি লঞ্চঘাট থেকে দুপুর ১২-৩০ মিনিট ও দুপুর ১টায় দুইটি লঞ্চ ছেড়ে পরদিন ভোর পাঁচটায় সদরঘাট পৌঁছে। লঞ্চের ভাড়া সাধারণ ডেক শ্রেণি ৩শ’ ৫০টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার টাকা, ডাবল কেবিন ১ হাজার ৮০০টাকা, ফ্যামিলি কেবিন ৩ হাজার টাকা, ভিআইপি এসি কেবিন ৪ হাজার ৫০০টাকা। তমরদ্দি লঞ্চঘাট থেকে ট্রলারযোগে দেড় ঘণ্টায় নিঝুমদ্বীপ যাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১শ’ টাকা। এছাড়া তমরদ্দি ঘাট থেকে হোন্ডাযোগে জাহাজমারা মোক্তারিয়া ঘাটে ৫০ মিনিটে যাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ২শ’ টাকা। মোক্তারিয়া ঘাট থেকে ট্রলারযোগে নিঝুমদ্বীপ পৌছতে মাত্র ২০ মিনিট লাগে। এখানে জনপ্রতি ট্রলার ভাড়া ২৫ টাকা।
রাজধানী ঢাকা থেকে আরো কম সময়ে সড়ক পথে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টায় নিঝুমদ্বীপ যাওয়া যায়। সড়ক পথে নিঝুমদ্বীপ যেতে হলে ঢাকার মানিকনগর থেকে নোয়াখালী-সোনাপুর রুটে লাল সবুজ পরিবহন, একুশে পরিবহন ও হিমাচল পরিবহন রয়েছে। সব পরিবহনের শতাধিক এসি, ননএসি বাস চলাচল করে এ রুটে। ননএসি ভাড়া ৩শ’ ৭৫ টাকা এসসি ৪শ’ ৫০টাকা। ঢাকা থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর জিরো পয়েণ্ট পৌছতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগবে। সোনাপুর থেকে সিএনজিতে চেয়ারম্যান ঘাট ভাড়া ৮০ টাকা। এক ঘণ্টা লাগবে চেয়ারম্যান ঘাট পৌছতে। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে সরাসরি হাতিয়া নলচিরা লঞ্চঘাট ২৭ কিলোমিটার নদীপথ স্পীড বোটে ২৫ মিনিটে পৌঁছা যায়।
স্পীডবোটে ভাড়া ৪শ’ টাকা। এছাড়া সীট্রাক ও ট্রলারও চেয়ারম্যানঘাট-নলচিরা রুটে চলাচল করে। এ দু’টি নৌযানে ভাড়া কম হলেও সময় দেড়ঘণ্টা লাগবে। নলচিরা ঘাট থেকে হোন্ডাযোগে সরাসরি জাহাজমারা মোক্তারিয়া ঘাট যেতে সময় লাগবে ৫০ মিনিট ভাড়া ২শ’ টাকা। মোক্তারিয়া ঘাট থেকে ট্রলারযোগে নিঝুমদ্বীপ মাত্র ২০ মিনিটে পৌছা যায়। নিঝুমদ্বীপ ঘাট থেকে হোন্ডাযোগে নামার বাজার ৭/৮ কিলোমিটার ভাড়া ১শ’ টাকা। নিঝুমদ্বীপে উন্নতমানের ১২টি কটেজ, হোটেল, মোটেল রয়েছে। এছাড়া একাধিক হোটেলে এসি’র ব্যবস্থা রয়েছে। এসব ছাড়া সড়ক বিভাগ, বন বিভাগ ও রেড ক্রিসেণ্টসহ বিভিন্ন সংস্থার রেস্টহাউস রয়েছে।



 

Show all comments
  • ash ৩০ নভেম্বর, ২০১৯, ৩:৪২ এএম says : 0
    NUJUM DIPER CHOTUR DIKE GHONO KORE MANGROVE GAS LAGANO WICHITH ! NA HOLE VAGGON SHURU HOLE DIP KE ROKHA KORA JABE NA ! AMON E SHARA DESHER NODIR PARE GHONO KORE MANGROVE GAS LAGANO WICHITH, MANGROVE GAS TIR KE ROKHA KORTE PARE
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ